লোকসভা নিবার্চনের আগে দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় সতর্ক হতে হচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। জেলায় জেলায় শাসক দলের নেতা-কর্মী বা জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে এমন ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ আসছে, যাতে জনমানসে ভুল বার্তা যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। কলকাতা ও উত্তরপাড়া পুরসভার দুই কাউন্সিলর এবং বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে পঞ্চায়েতের উপপ্রধান-সহ কয়েক জনকে নিয়ে যেমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। এখনই বড় কোনও পদক্ষেপ না নিলেও সাধারণ মানুষের অশান্তির কারণ ঘটানো বা দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি করা যে বরদাস্ত করা হবে না, সেই বার্তা দিতে শুরু করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
বস্তুত, এই পরিস্থিতি মোকাবিলার ব্যাপারেও তৃণমূলের অন্দরে দু’রকমের মত আছে। দলের একাংশ মনে করে, এখনই কড়া হাতে এই ধরনোর ঘটনা বন্ধ করতে সক্রিয় হওয়া উচিত। আবার অন্য একাংশের মতে, দলের সামান্য কিছু অংশ কী করছে, তা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন না হলেও চলবে। যে কারণে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বুধবার বলেছেন, “দলের কেউ যদি সাধারণ মানুষের অশান্তির কারণ হয়, দল তার কাজকে বরদাস্ত করবে না।” বাঁকুড়ার পাত্রসায়র, উত্তর কলকাতার কাশীপুর এবং উত্তরপাড়ার ঘটনা প্রসঙ্গে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “তিনটি ক্ষেত্রেই দল এবং সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। দলের তরফে এই ধরনের ঘটনা কখনওই প্রশ্রয় দেওয়া হয় না। ঘটনাগুলির উপরে আমরা নজর রাখছি।” আবার একই সঙ্গে মুকুলবাবু এ-ও বলেছেন যে, সামগ্রিকতার নিরিখে তিনটি ঘটনা তুচ্ছ। মুকুলবাবুর কথায়, “বাংলায় ৬০ হাজার গ্রাম, ১২৮টি শহর, ৩৩৫টি ব্লক রয়েছে। সেখানে এই তিনটি ঘটনা শতাংশের বিচারে অতি নগণ্য!”
ঘটনা খাস কলকাতার বলে কাশীপুরে বামেদের মিছিলের উপরে হামলা নিয়েই বেশি হইচই হচ্ছে। তৃণমূল নেতৃত্বও বুঝতে পারছেন, মিছিলে হামলার ঘটনা বামেদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে, শাসক দলের ভাবমূর্তিরও ক্ষতি হয়েছে। এই প্রেক্ষিতেই কলকাতা পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু সেনকে এ দিন তৃণমূল ভবনে ডেকে পাঠিয়ে কথা বলেছেন দলীয় নেতৃত্ব। পরে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শান্তনু জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় তিনি জড়িত ছিলেন না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সব দলেরই মিছিল-মিটিং করার অধিকার আছে। দলের মতো শান্তনুও তা বিশ্বাস করেন। তবে সে দিন যা ঘটেছে, তা অনভিপ্রেত, তা-ও তিনি বলেছেন।” দলের কাছে শান্তনুবাবু ব্যাখ্যা দিয়েছেন, বামেদের মিছিলে ইট-জুতো উড়ে আসার পরে উত্তেজনার বশে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরাও সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, তা-ই দেখতে গিয়েছিলেন কাউন্সিলর। ঘটনার পরে শান্তনুবাবুর বক্তব্যই সমর্থন করেছিলেন মুকুলবাবু। তিনি এ দিনও পাল্টা অভিযোগ করেছেন, “সিপিএমই ওখানে অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করেছিল।”
উত্তরপাড়ার এক তৃণমূল কাউন্সিলর সন্দীপ দাসকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে আদালতের স্থগিতাদেশ অমান্য করে ফিল্ম সিটির জন্য জমি নিতে গিয়ে জোর করে উচ্ছেদ চালানোয়। ওই অভিযুক্ত কাউন্সিলরকে দলের তরফে শো-কজ করা হয়েছে জানিয়েছেন তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত। তাঁকে সাসপেন্ড করা হতে পারে বলেও একটি সূত্রের ইঙ্গিত। পাত্রসায়রের ঘটনায় অভিযুক্ত উপপ্রধান বকুল মিদ্যা ও আরও এক স্থানীয় তৃণমূল নেতা ডালিম মিদ্যা অবশ্য এখনও ধরা পড়েননি।
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও তাঁদের
পাশে দাঁড়িয়েছেন।
যে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তাঁদের ক্ষেত্রে দলীয় স্তরে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে? মুকুলবাবুর বক্তব্য, “ওঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আগে প্রমাণিত হোক! তার পরে ব্যবস্থা।” এই সূত্রেই তাঁর দাবি, ৩৪ বছরে বাংলার মানুষ দলতন্ত্র অনেক দেখেছে। এক সময় সিপিএমের জেলা সম্পাদকের কথা ছাড়া পুলিশ সুপার বা লোকাল কমিটির সম্পাকের নির্দেশ ছাড়া থানার ওসি-রা কাজ করতে পারতেন না। এখন তেমন পরিস্থিতি নেই বলে মুকুলবাবুর দাবি।
|