এসজেডিএ-র আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকা বোঝাতে লোকসভা ভোটের আগে শিলিগুড়ির প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রচার চালাবে তৃণমূল। সোমবার বাঘাযতীন পার্কে দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের প্রকাশ্য সভায় দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের উপস্থিতিতে এমনই জানালেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা সংস্থার চেয়ারম্যান গৌতম দেব। সেই সঙ্গে বাম জমানায় এসজেডিএ-র আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তুলে, বাম আমলে এসজেডিএ-র অনিয়মের টাকা সিপিএমের পার্টি তহবিলেও জমা পড়েছে বলেও দাবি করেছেন তৃণমূল সাংসদ মুকুলবাবু।
তিন দিন আগেই বাঘাযতীন পার্কে বামফ্রন্টের প্রকাশ্য সভায় বক্তৃতা করেছিলেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য-সহ অন্যরা। সে দিনের সভায় এসজেডিএ থেকে সারদা সব ইস্যুতেই তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। তৃণমূল সূত্রের খবর সে দিনের আক্রমণের জবাব দিতেই এ দিনের সভাকে বেছে নেয় দলের নেতৃত্ব। সে কারণেই এ দিন পূর্ব নির্ধারিত উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিক কনভেনশনকে, শেষ মুহুর্তে দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের ব্যানারেই সভা করার সিদ্ধান্ত হয়। সভা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় দলের চা শ্রমিক সংগঠন তরাই-ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন ওয়াকার্স ইউনিয়নকে। সংগঠনের নেতা অলক চক্রবর্তী সভার শুরুতে চা শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে আলোতচনা করলেও, বাকি বক্তারা সকলেই সিপিএম-কংগ্রসকে রাজনৈতিক আক্রমণ করে বক্তব্য রাখেন।
মুকুলবাবুর আগে বলতে উঠে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, “অনিয়ম নজরে আসার পরে সরকার তদন্ত শুরু করেছে। টাকা উদ্ধার করেছে। যাঁরা অভিযুক্ত সকলেই কোনও না কোনও ভাবে সিপিএমের সদস্য অথবা সিপিএমের এক নেতার ঘনিষ্ঠ। রাজ্য সরকারের এই ভূমিকা বোঝাতে তৃণমূল শিলিগুড়ির প্রতিটি ওয়ার্ডে গিয়ে সভা করবে, প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাবে।” মুকুলবাবু বলেন, “এসজেডিএ দুর্নীতি নিয়ে অনেক কথা শোনা যাচ্ছে। তবে তদন্ত করতে গিয়ে দুনীর্তিতে বাম আমলের সব অনিয়ম উঠে আসছে। এ বার বাম নেতাদের নামও মামলায় আসবে, তাই ভয় পেয়ে আগে থেকে চিৎকার শুরু করেছেন। বাম আমলে এসজেডিএর অনিয়মের টাকা সরাসরি সিপিএমের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। আর কংগ্রেস এত হইচই করছে কেন, কেন্দ্রে তো কংগ্রেস দুর্নীতিতে প্রায় ডুবে গিয়েছে।”
এসজেডিএ কাণ্ডে বাম নেতাদের নাম জড়ানোর প্রসঙ্গে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা এসজেডিএর প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্য ফের সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন। এ দিন তিনি বলেন, “আসলে এসজেডিএর অনিয়মের টাকা তৃণমূলের শীর্ষস্তর পর্যন্ত পৌঁছেছে। সিবিআই তদন্ত হোক তাহলেই বাম না ডান কোন নেতারা জড়িত তা জানা যাবে।”
এ দিনের সভার শুরুতেই বক্তব্য রাখেন শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা এসজেডিএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। প্রসঙ্গত আর্থিক দুনীর্তির অভিযোগ ওঠার পরে বিধায়ক রুদ্রবাবুকে এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতমবাবুকে আনা হয়। এ দিন রুদ্রনাথবাবু বলেন, “বাম আমলেই দুর্নীতি হয়েছে এসজেডিএতে। মাটি কাটা থেকে শুরু করে, চা পার্ক সব ঘটনায় তদন্ত হবে। আর সিপিএমের নেতারা বলছেন সে সময়ে নাকি প্রতিবছর অডিট হতো। কিন্তু সে অডিটের রিপোর্টে কী বলা হয়েছে সেটা কিন্তু ওঁরা বলেনা না।”
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে পাহাড় এবং জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরেছে বলে দাবি করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টার্চাযের ‘পাগলের সরকার’ মন্তব্যকে কটাক্ষ করেছেন মুকুলবাবু। তাঁর কথায়, “সিপিএম দার্জিলিংকে শান্ত রাখার জন্য কলকাতায় মিছিল করত, আর জঙ্গলমহল নিয়ে মিছিল হতো শিলিগুড়িতে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত আনাই বছরে ২২ বার দার্জিলিং আর ২৪ বার জঙ্গলমহলে গিয়ে শান্তি এনেছেন। এটা পাগলের সরকার ছাড়া আর কে করতে পারত।” বাম জমানা থেকে নারী নির্যাতন, কৃষক আত্মহত্যা চা শ্রমিকদের দুর্দশা সবই কমেছে বলে তিনি দাবি করেছেন। সভার শেষে আগামী লোকসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলই দেশের সংসদের নিয়ন্ত্রক হতে চলেছে বলে জানিয়ে তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আর্জি জানান। প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সুবীন ভৌমিক বলেন, “সিবিআই তদন্ত হলেই কে দোষী জানা যাবে।” কেন্দ্রে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “ওঁরা কংগ্রেসের ইতিহাস জানেন না, তাই এ ধরনের মন্তব্য করছেন।” |