নেটে রদবদল ঘোষণা করে চমক তৃণমূলের
ছিল মুখ বন্ধ খামে নাম পাঠানোর রেওয়াজ। প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে রাজভবনে। যাঁরা শপথ নেবেন, রাজভবন থেকে এর পরে তাঁদের কাছে যেত সরকারি আমন্ত্রণপত্র। পুরো প্রক্রিয়ায় এতটাই গোপনীয়তা লেগে থাকত যে, শপথের আগে জল্পনার অন্ত থাকত না।
মন্ত্রিসভার শপথ বা রদবদলের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সেই প্রথাটা এ বারে ভেঙে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, বৃহস্পতিবার রাজভবনে কে কে শপথ নেবেন, কে-ই বা বাদ যাবেন, তা দলীয় ওয়েবসাইটে ঘোষণা করে দিল তৃণমূল। শপথ অনুষ্ঠানের প্রায় ১৮ ঘণ্টা আগেই। রদবদলের নিজস্ব চমকের চেয়েও রদবদল ঘোষণার এই চমকই বড় হয়ে উঠল এ দিন।
ওয়েবসাইটে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজ্য মন্ত্রিসভার নতুন দুই সদস্য হতে চলেছেন কোচবিহারের মাথাভাঙার বিধায়ক বিনয় বর্মন এবং কলকাতার শ্যামপুকুরের বিধায়ক শশী পাঁজা। বাদ পড়ছেন বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁর পদত্যাগপত্রও চলে এসেছে। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা স্বপন দেবনাথ পদোন্নতি পেয়ে স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হবেন। জানিয়ে দেওয়া হল, একই সঙ্গে জিটিএ-র প্রধান পদে শপথ নেবেন বিমল গুরুঙ্গও।
এত দিন কী ছিল রদবদলের প্রথা?
রাজ্যের ক্ষেত্রে পুরো প্রক্রিয়াটাই ছিল সরকার আর রাজভবনের তালমিলের ব্যাপার। রাজ্য সরকার (আদতে মুখ্যমন্ত্রী) নাম পাঠাতেন রাজভবনকে। সেই নামের তালিকা ধরে ধরে রাজভবন চিঠি পাঠাত সম্ভাব্য মন্ত্রীদের কাছে। শপথের দিন পর্যন্ত কেউ জানতেন না, কারা হতে চলেছেন নতুন মন্ত্রী। একই ভাবে কেন্দ্রেও সবটা নির্ভর করত কেন্দ্রীয় সরকার ও রাষ্ট্রপতি ভবনের উপরে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নাম যায় রাষ্ট্রপতির কাছে। প্রশাসনিক কর্তারাও বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত গোপনীয়’ বলেই জেনে এসেছেন এত দিন।
বদল কোথায়

বিনয় বর্মন

শশী পাঁজা প্রতিমন্ত্রী

স্বপন দেবনাথ
এ দিন মমতা সেটাই আচমকা ভেঙে দিলেন। এত দিন সরকারের বিভিন্ন নীতি, কাজে অগ্রগতি এ সব বিষয়ে মানুষকে জানাতে ইন্টারনেটের সাহায্য নিচ্ছিল তাঁর সরকার। এ বারে সেই তালিকায় ঢুকে পড়ল মন্ত্রিসভার রদবদলও। কেন?
তৃণমূলের অনেকেই বলছেন, এর পিছনে দু’টো কারণ। এক, স্বচ্ছতা। দুই, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার। তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের অনেকে বলছেন, এর মাধ্যমে দলের অন্দরে ও বাইরে অহেতুক জল্পনা বা বিতর্কের অবসান করতে চেয়েছেন দলনেত্রী। ফেসবুকে অভ্যস্ত মমতা চাইছেন, চায়ের দোকান থেকে সাইবার স্পেস সর্বত্রই দল তথা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দ্রুত পৌঁছে যাক। সাইবার দুনিয়ায় ‘অনুগামী’ সংখ্যার নিরিখে দেশের রাজনীতিকদের মধ্যে নরেন্দ্র মোদীর পরেই রয়েছেন তিনি। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “দলে ও সরকারে নেত্রী যে স্বচ্ছতা রাখতে চান, এ দিন ওয়েবসাইটে মন্ত্রীদের নাম জানিয়ে দেওয়ায় তা আবার প্রমাণিত হয়েছে।” তৃণমূলের সোশ্যাল মিডিয়া শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্তাও বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী মা-মাটি-মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। যার মূল কথা স্বচ্ছতা। সেই লক্ষ্যেই মুখ্যমন্ত্রী এখন জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের সমস্ত মাধ্যমই কাজে লাগাচ্ছেন। এটাও তারই অঙ্গ।”
সংবিধানে কোথাও বলা নেই, এ ভাবে দলীয় মন্ত্রীদের নাম ঘোষণা করা যাবে না এই যুক্তি দেখিয়ে প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, “কোনও দল যদি ওয়েবসাইটে সম্ভাব্য মন্ত্রীদের নাম আগাম জানিয়ে দেয়, তা নিয়ে আপত্তির কী আছে?” তাঁর বক্তব্য, দিল্লিতে আম আদমি পার্টিও তো ছয় মন্ত্রীর নাম আগাম ঘোষণা করে দিয়েছে।
একই যুক্তি দিচ্ছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদও। তাঁর বক্তব্য, “কেজরিওয়ালরা তো দু’দিন আগেই সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, কারা মন্ত্রী হচ্ছেন। যে কোনও ভাবেই হোক না কেন, শপথের আগে নাম ঘোষণার দিক থেকে তারাই তাই প্রথম।” কংগ্রেসের আর এক নেতা বলছেন, আপ এই প্রথা শুরু করার পরে শুধু তৃণমূল কেন, কংগ্রেস ও বিজেপিকেও একই পথ নিতে হবে। কারণ, আপ-এর পরে কেউই আর স্বচ্ছতার প্রশ্নে ঝুঁকি নিতে নারাজ।
নতুন প্রযুক্তিকে সব দলই যে নিজের মতো করে ব্যবহার করতে চাইছে, সে কথা বলেছেন বিজেপির মুখপাত্র মীনাক্ষী লেখি। তাঁর মতে, “ইন্টারনেট নতুন ও জোরালো মাধ্যম। এই মাধ্যমকে সব দলই নতুন এবং নিজস্ব পথে ব্যবহারের চেষ্টা করছে।”
এ বারে দুই নতুন মন্ত্রী এবং এক জনের দফতর বদলের কথা ঘোষণা করেছে তৃণমূল। এর মধ্যে বিনয় বর্মননেবেন হিতেন বর্মনের জায়গা। তৃণমূলের ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, শারীরিক কারণে ইস্তফা দিয়েছেন হিতেন। তবে দলের তরফে বলা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীও দীর্ঘদিন ধরে তাঁর কাজে সন্তুষ্ট ছিলেন না। ফলে আজ হোক বা কাল, সরতে তাঁকে হতোই। মাথাভাঙার বিধায়ক বিনয়বাবু আবার বাম জমানার শেষ দিকে বন দফতরের দায়িত্বে থাকা অনন্ত রায়ের মামা। অনেকেই মজা করে বলছেন, এ তো মামার হাতে ভাগ্নের ব্যাটন! বুধবার সন্ধ্যায় মুখ্যসচিবের দফতর থেকে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন বিনয়বাবু। বললেন, “চিঠি পেয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী যে দায়িত্বই দেবেন, নিষ্ঠার সঙ্গে তা পালন করার চেষ্টা করব।” একই ভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে কর্তব্য পালনের কথা বললেন শশী পাঁজাও।
তবে শোনা যাচ্ছে, এর বাইরেও আরও কয়েকটি দফতরে রদবদল হবে। প্রথম সারির কোনও মন্ত্রীর দফতর কমে অন্য কারও হাতে যাওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে। সে ব্যাপারে ওয়েবসাইটে অবশ্য কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.