যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাময়িক ভাবে সব সম্পর্ক ছিন্ন করল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস (এনইউজেএস)। জানুয়ারি মাসে কর্মসমিতির বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সাম্মানিক অধ্যাপক হিসেবে এই আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যে ইন্টার্ন তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন, তিনিও ছিলেন এনইউজেএসের ছাত্রী। সূত্রের খবর, বুধবারই উপাচার্য পি ঈশ্বর ভট্টকে একটি চিঠি পাঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষক। চিঠিতে মূলত দু’টি দাবি তোলেন তাঁরা। প্রথমত, গোটা বিষয়টির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে সব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন রাখা হোক। দ্বিতীয়ত, আসন্ন কর্মসমিতির বৈঠকের কর্মসূচিতে বিষয়টিকে রাখা হোক। এবং সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর পাশাপাশি, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিভিন্ন মন্তব্যে ওই তরুণীর সম্মানহানি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।
শিক্ষকদের সেই দাবিকে উপাচার্য সমর্থন করেছেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র রুচিরা গোস্বামী। তিনি বলেন, “জানুয়ারি মাসে কর্মসমিতির বৈঠকেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তার আগে ওঁর সঙ্গে সাময়িক ভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শীতের ছুটির পরে ২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় খুললে এ ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।” বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যদিও বুধবার রাতে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে আমি এ ব্যাপারে কোনও চিঠি এখনও পাইনি। তাই কোনও মন্তব্য করতে পারব না।” বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের ঘটনাটি নিয়ে যে দিন থেকে খবর প্রকাশিত হয়েছে, সে দিন থেকেই তিনি কোনও ক্লাস নেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও অনুষ্ঠানেও যোগ দেননি।
১২ জন শিক্ষকের অভিযোগপত্র নিয়েও মন্তব্য করতে চাননি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে বলা হয়, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রথম থেকেই বলে আসছেন যে, ওই ইন্টার্নের অভিযোগ অসত্য। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে লেখা চিঠিতেও তিনি তা-ই বলেছেন। কাজেই এই চিঠি নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়ার প্রশ্ন উঠছে না।
বস্তুত, প্রধান বিচারপতিকে লেখা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের চিঠির বিভিন্ন অংশ নিয়ে মঙ্গলবার ব্লগে নিজের বক্তব্য জানিয়েছিলেন ওই ইন্টার্ন। তিনি লেখেন, যৌন হেনস্থার কথা প্রথমেই তিনি এনইউজেএস-এর শিক্ষকদেরই কাউকে কাউকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংক্রান্ত কোনও নীতি না থাকায় সেখান থেকে বিশেষ কার্যকরী পদক্ষেপের আশা ছিল না। কিন্তু তাঁর মনে হয়েছিল, বিষয়টি নবীন ছাত্রছাত্রীদের জানানো দরকার। সেই কারণেই তিনি ব্লগে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। ব্লগের ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি তিন বিচারপতিকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন।
উপাচার্যকে লেখা চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষক ওই ইন্টার্নের ভাবমূর্তি রক্ষার বিষয়টিতে বিশেষ জোর দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ওই ইন্টার্নকে রাজনৈতিক দলের হাতের পুতুল বলে ইঙ্গিত করছেন। বিভিন্ন সময়ে তাঁর এই ধরনের মন্তব্যে ওই তরুণীর চরিত্রহনন হচ্ছে। এ ভাবে তাঁর অভিজ্ঞতাকেও অবজ্ঞা করা হচ্ছে। শিক্ষকেরা আরও লিখেছেন, অধ্যাপকের স্থান অনেক উঁচুতে এবং সম্মানের। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ওঠা অভিপ্রেত নয়। বিশেষ করে সেই অভিযোগ যদি ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ হয় এবং তার ভিত্তি রয়েছে বলে মেনে নেয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি।
ওই প্রতিষ্ঠান থেকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে অপসারিত করা হবে কি না, সেই প্রশ্ন কিন্তু উঠেছিল আগেই। গত ৩০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে উপাচার্য জানিয়েছিলেন, জানুয়ারি মাসে তাঁদের কর্মসমিতির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। তার আগে অবশ্য এ দিনই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাময়িক ভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করে দিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র। জানুয়ারিতে কর্মসমিতি এই সিদ্ধান্তেই শেষ পর্যন্ত সিলমোহর দেয় কি না, সেটাই এখন দেখার।
|
এনইউজেএস সুবিচারের শিক্ষা দেয়। বিচারের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষকে
সমদৃষ্টিতে দেখা যার অন্যতম।
আমরা মনে করছি উনি যুক্ত থাকলে এই প্রতিষ্ঠানের আদর্শ ক্ষুণ্ণ হবে।
উপাচার্যকে ১২
শিক্ষকের চিঠ |
|