নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
স্কুলের উন্নয়নে দেওয়া চেক বাউন্স করা-সহ বেশ কিছু অভিযোগ তুলে দুর্গাপুরের কাছে ফের এসার অয়েলের গাড়ি আটকালেন গ্রামবাসীরা। একটি পিটের রাস্তাও বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশের মধ্যস্থতায় ঘণ্টা চারেক পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এর আগেও বেশ কয়েক বার নানা দাবিতে কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে।
বুধবার সকাল ৯টা নাগাদ বর্ধমানের ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার বড়গোড়িয়া গ্রামে এসারের ১৬ নম্বর পিটে ঢোকা-বেরোনোর রাস্তা বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংস্থার কয়েকটি গাড়িও আটকে দেন তাঁরা। আটকে পড়ে এসারের কর্মীদের জন্য পাঠানো খাবারের গাড়িও।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় ভুড়কুন্ডা এন সি ইনস্টিটিউশনের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য এসার অয়েল একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক লক্ষ টাকার চেক (নম্বর ৪৩১১০১) দিয়েছিল। তা বাউন্স করেছে। দুই গ্রামবাসীর জমির চারদিক কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে এমন ভাবে ঘিরে দেওয়া হয়েছে যে তাঁরা জমি ব্যবহার করতে পারছেন না। প্রকল্পের ক্ষতিকারক বর্জ্য জল যেখানে-সেখানে ফেলা হচ্ছে। প্রকল্পের জন্য জমি দিয়েও ক্ষতিপূরণ পাননি অনেকে। ৪ নম্বর পিটের জন্য নেওয়া জমিতে তিনটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রায় ৪০ জন বাদাম চাষ ও তুলো চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
ভূগর্ভস্থ কোল বেড মিথেন (সিবিএম) গ্যাস তুলে তা দুর্গাপুর ও পানাগড় শিল্পাঞ্চলে সরবরাহের প্রকল্প হাতে নিয়েছে এসার। তার জন্য পাইপলাইন পাতার কাজ চলছে। ভুড়কুন্ডার এন সি ইনস্টিটিউশন সূত্রে জানা যায়, তাদের গেটের সামনে দিয়ে পাইপলাইন পাতার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি চেয়েছিল এসার। তারা অনুমতি দেওয়ার পরে স্কুলের উন্নয়নের জন্য লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়। ২০১০ সালের ৩১ জুলাই চেকটি কাটা হয়েছিল। পরে সেটি বাউন্স করে। স্কুল পরিচালন সমিতির বর্তমান সভাপতি দেবসাধন দে জানান, এসার অয়েল কর্তৃপক্ষ চেকটি ফিরিয়ে নেন। নতুন চেক দেবেন বলেও কথা দেন। তাই পুলিশে অভিযোগ করা হয়নি। দেবসাধনবাবুর আক্ষেপ, “তত দিনে পাইপ পাতার কাজ হয়েছে। এসার কর্তৃপক্ষ নতুন চেক দেননি। টাকা পেলে স্কুলের উন্নয়নে সুবিধা হত।” এসারের এক আধিকারিক বলেন, “বিষয়টি পুরনো। খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
বড়গোড়িয়ার নিধিরাম মণ্ডল ও গণাধর মণ্ডল অভিযোগ করেন, “এসার প্রকল্পের ভিতরে আমাদের প্রায় ৪৮ শতাংশ জমি রয়েছে। এসার তা নেয়নি। অথচ জমি ঘিরে দেওয়ায় আমরা তা ব্যবহার করতে পারছি না।” আর এক বাসিন্দা শরৎ মণ্ডলের খেদ, “এসার কর্তৃপক্ষ খাল কেটেও কালভার্ট না বসানোয় গত দু’বছর ধরে জমি চাষ করতে পারছি না।” গ্রামবাসী তীর্থপদ মণ্ডলের অভিযোগ, “৩ নম্বর পিটে আমার বিঘে দুয়েক জমি পড়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ মেলেনি।” এসারের ভারী গাড়ি চলায় রাস্তা ভেঙে যাওয়ার পুরনো অভিযোগও রয়েছে। পুলিশ তাঁদের আশ্বাস দেয়, আজ, বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট থানায় সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করা হবে। এসারের তরফেও জানানো হয়েছে, আলোচনার মাধ্যমেই বিষয়টি মিটে যাবে।
|