নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় অশান্ত হল আসানসোল। মঙ্গলবার রাতে হটন রোডে গুলিতে খুন হন ওই ব্যবসায়ী। এর
|
নিহত ব্যবসায়ী
কানু গড়াই। |
জেরে বুধবার দফায়-দফায় রাস্তা অবরোধ, পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ হয়। রাতে শহরের রাস্তায় নিরাপত্তার অভাবের অভিযোগ তুলে সরব হয় বণিকসভা। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামে পুলিশ ও র্যাফ। কেন এই খুন, বুধবার রাত পর্যন্ত পুলিশ অন্ধকারে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রসাধন সামগ্রীর ব্যবসায়ী কানু গড়াই (৫৩) মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময়ে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে তাঁকে গুলি করা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় মানুষজন তাঁকে প্রথমে আসানসোল হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানান। এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশ কুমার চাডিভে বলেন, “ওই ব্যক্তির কপালে গুলি করা হয়েছে। আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি।” কেন এই খুন, সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি এডিসিপি।
ব্যবসায়ীর মৃত্যুর খবর পৌঁছনোর পরে রাতেই এলাকায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছড়ায়। পুলিশের বড় বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলও। বুধবার ভোর থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ শুরু করেন। হটন রোড এলাকায় যেখানে ওই ব্যবসায়ীকে গুলি করা হয়, সেখানে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়ে যান। ঘটনার দ্রুত কিনারার দাবিতে শুরু হয় অবরোধ। প্রথমে সাধারণ মানুষজন অবরোধ শুরু করলেও পরে সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি-র কর্মী-সদস্যেরা সামিল হন। তবে কোনও দলের পতাকা, ফেস্টুন ছিল না। বিকেল প্রায় সাড়ে ৩টে পর্যন্ত বিক্ষোভ-অবরোধ চলে। |
এরই মাঝে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ১২ ঘণ্টার ব্যবসা বন্ধ শুরু করেন। সেই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে ময়দানে নামেন আসানসোল বণিকসভার সদস্য-সমর্থকেরা। সিপিএম নেতা তথা শহরের প্রাক্তন মেয়র তাপস রায়ের অভিযোগ, “শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তলানিতে ঠেকেছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আততায়ী ধরা না পড়লে আমরা আন্দোলনে নামব।” এ দিনের বিক্ষোভে দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সামিল হন প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সম্পাদক আকাশ মুখোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেন, আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট গঠন হওয়ার পরে একাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু একটিরও কিনারা হয়নি। আততায়ীরাও ধরা পড়েনি। এ দিনের ব্যবসা বন্ধ ও বিক্ষোভের সমর্থনে আসরে নামে বিজেপি-ও। দলের জেলা সম্পাদক প্রশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “এই ঘটনার প্রতিবাদে আমরা বৃহস্পতিবার থানায় বিক্ষোভ-অবস্থান করব।” |
বাড়ি ফেরার পথে ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় তাঁরা সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী তথা আসানসোল বণিকসভার সম্পাদক শম্ভুনাথ ঝা বলেন, “শহরে রাতের নিরাপত্তা বলে যে কিছু নেই, তা আবার প্রমাণ হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে দরবার করব।” কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে এর আগেও আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান। শম্ভুনাথবাবুর দাবি, এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটলে এলাকার অর্থনীতিই মার খাবে। রাতে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সম্পাদক সুব্রত দত্ত। তিনি বলেন, “আমরা পুলিশ কমিশনারকে এ বিষয়ে নজর দেওয়ার জন্য আবেদন করব।” |
প্রতিবাদে বন্ধ রইল দোকানপাট। |
তবে ব্যবসায়ীকে খুনের কারণ নিয়ে খানিকটা ধন্দে পুলিশ। মৃতের ছেলে পাপ্পু গড়াই পুলিশের কাছে খুনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বাবার সঙ্গে কারও কোনও শত্রুতা ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও অনেকের দাবি, কারও সঙ্গে কানুবাবুর শত্রুতা-বিরোধ ছিল বলে তাঁদের জানা নেই। তবে এলাকারই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কানুবাবুর বাড়ির পিছনে একটি জমি রয়েছে। সেটি বিক্রি করতে অস্বীকার করা নিয়ে কিছু লোকজনের সঙ্গে সম্প্রতি তাঁর মনোমালিন্য চলছিল। খুনের পিছনে এই ঘটনার কোনও হাত রয়েছে কি না, সে নিয়ে পুলিশ এখনই কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। পুলিশ জানায়, সব দিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
|