বর্ধমানে আবার বাধার মুখে এসার
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাটি উৎসব থেকে ফিরে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্ধমানে ফের গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ল এসার অয়েল সংস্থার গ্যাস প্রকল্প। কাঁকসার পরে এ বার ফরিদপুরে। কাঁকসায় সরাসরি আসরে নেমেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। এ দিন যাঁরা বিক্ষোভ দেখান, তাঁদের অনেকেই এলাকায় তৃণমূল সমর্থক বলে পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়োগ-সহ নানা দাবিতে এ দিন এসারের কয়েকটি গাড়ি আটকানো হয়। ঘণ্টা তিনেক পরে ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার পুলিশ গিয়ে মধ্যস্থতা করলে বিক্ষোভ থামে। আজ, সোমবার থানায় এসার কর্তৃপক্ষ ও গ্রামবাসীদের মধ্যে বৈঠক হবে বলে সিদ্ধাম্ত হয়েছে। তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এসার তাদের কাজ করছে। কিন্তু গ্রামবাসীদের দাবি ন্যায্য হলে তারা তাতে নজর দিক। দাবি অন্যায্য হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।” দুর্গাপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী বলেন, “বাসিন্দারা দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা করতেই পারেন। কিন্তু এমন কিছু যেন না করা হয়, যাতে শিল্পের ক্ষতি হবে।”
গাড়ি আটকে বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের।—নিজস্ব চিত্র
ভূগর্ভস্থ মিথেন তোলার জন্য বর্ধমানের অন্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর, দুর্গাপুর-ফরিদপুর ও কাঁকসা ব্লকের নানা জায়গায় শ’খানেক কুয়ো খুঁড়েছে এসার। ইতিমধ্যে লগ্নি হয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে কাঁকসার জাটগোড়িয়ায় তৃণমূলের নেতৃত্বে এসারের প্রকল্পে যাওয়ার রাস্তায় বেড়া দেন বাসিন্দারা। দাবি ছিল, গ্রামের রাস্তা ব্যবহার করায় সংস্থাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এর জেরে তিন দিন সেখানে কাজ বন্ধ থাকে। মহাকরণে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এসার কর্তাদের বৈঠকের পরে সমস্যা মেটে। তার রেশ মেলানোর আগেই ফের বাধা এল ফরিদপুরে। বিক্ষোভকারীদের পক্ষে স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিশ্বজয় মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “জমি নেওয়ার সময়ে কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অদক্ষ শ্রমিকের পদে স্থানীয়দের নিয়োগ করা হবে। কিন্তু প্রকল্প চালুর পরে বাইরে থেকে লোক এনে কাজ করানো হচ্ছে।” এসার কর্তৃপক্ষ জানান, এ দিনের ঘটনায় প্রকল্পের কাজে বিশেষ সমস্যা হয়নি। সংস্থার রানিগঞ্জ অফিসের কর্পোরেট প্রধান দেবজিৎ কর বলেন, “গত দেড় বছরে নানা দাবিতে এলাকার বাসিন্দারা ছোটখাট বিক্ষোভ করেছেন। আগেও আলোচনা করে সমস্যা মিটেছে। সোমবার থানায় বৈঠকে আমাদের প্রতিনিধি থাকবেন। আলোচনা হবে।”
ফরিদপুরের লবণাপাড়া ও ধবনি গ্রামে দু’টি করে কুয়ো থেকে গ্যাস তোলার কাজ করছে এসার। এ ছাড়া নাচন গ্রামে দু’টি কুয়ো খোঁড়া হচ্ছে। বাসিন্দাদের দাবি, ওই ছ’টি জায়গায় নিরাপত্তারক্ষী, মজুর, ঝাড়ুদার ইত্যাদি পদে ১৬ জন করে গ্রামবাসীকে কাজ দিতে হবে। এখনও জমিদাতাদের অনেকে দাম পাননি। অবিলম্বে তা দিতে হবে। তাঁদের আরও অভিযোগ, প্রকল্পের ভারী গাড়ি চলাচলে রাস্তা খারাপ হচ্ছে। বেহাল রাস্তা ঠিক করতে হবে। এ দিন সকালে ধবনিতে প্রকল্পের প্রায় দু’শো মিটার দূরে রাস্তা আটকান শ’দেড়েক বাসিন্দা। কাজ সেরে ফেরার পথে ডাম্পার, ট্যাঙ্কার ও গাড়িতে আটকে পড়েন সংস্থার কিছু কর্মী। তবে প্রকল্প এলাকায় যাওয়া খাবার ও জলের গাড়ি আটকানো হয়নি। ফরিদপুর থানার ওসি সন্দীপ চট্টরাজ গিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বৈঠক করানোর আশ্বাস দেন। বাসিন্দাদের দাবিগুলি লিখিত ভাবে থানায় জমা দিতে বলেন। এর পরে অবরোধ ওঠে। ধবনির বাসিন্দা মহসিন মিদ্যার অভিযোগ, “আমাদের পাঁচ বিঘা জমি গিয়েছে প্রকল্পে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ পাইনি।” লবণাপাড়ার সুরজমুনি হেমব্রমের দাবি, পরিবারের মোট পৌনে তিন বিঘা জমি নেওয়া হলেও চার শরিকের মধ্যে দাম পেয়েছেন এক জন। নাচন গ্রামের কাজল মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “প্রকল্প চালুর সময়ে কর্তৃপক্ষ এলাকার উন্নয়নে নানা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু পরে তা হয়নি।” এসারের তরফে দেবজিৎবাবু জানান, রাস্তা পূর্ত দফতরের অধীন। তা সারানোর ব্যাপারে তাঁদের পক্ষে যা করা সম্ভব, করা হয়। জমির দাম প্রসঙ্গে তিনি জানান, অনেককে দাম মেটানো হয়েছে। শরিকানা সংক্রান্ত ঝামেলার জন্য কিছু সমস্যা রয়েছে। তিনি বলেন, “আশা করি, শীঘ্র সব সমস্যা মিটবে। প্রশাসন ও সরকার যে ভাবে আমাদের পাশে রয়েছে, তাতে আমরা খুশি।” মহকুমাশাসক আয়েষা রানি বলেন, “এ রকম একটা ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। পুলিশ গিয়ে দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের ব্যবস্থা করেছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.