এখনও আতঙ্কে কালিপাহাড়ি
দুর্গতদের পুনর্বাসন নিয়ে টানাপোড়েনে
তুন করে কোনও ধস বা ফাটল না হলেও আতঙ্ক কাটছে না আসানসোলের কালিপাহাড়ির তুড়িপাড়ার বাসিন্দাদের। নিজের ঘরে ঢুকতেও ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। ফলে কার্যত খোলা আকাশের নীচে ইসিএলের বানিয়ে দেওয়া অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে গাদাগাদি করে থাকছেন এই ধস কবলিতরা। স্থায়ী পুনর্বাসন চেয়ে ওই শিবিরে অনশনও শুরু করেছেন কয়েকজন স্থানীয় মহিলা। ইসিএলের দেওয়া খাবারও বয়কট করেছেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে পুনর্বাসনের প্রশ্নে চাপানউতোর শুরু হয়েছে ইসিএল ও এডিডিএর মধ্যে। উভয় কর্তৃপক্ষই পরস্পরের কাঁধে দায়িত্ব চাপিয়ে সরে পড়তে ব্যস্ত।
শুক্রবার ভোরে আসানসোল পুরসভার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কালিপাহাড়ি এলাকায় বেশকিছুটা অঞ্চল জুড়ে ধস নামে। জমি ও বসত বাড়িতে চওড়া ফাটল দেখা যায়। এলাকার প্রায় ৬৬টি পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তা নেমে আসে। স্থায়ী পুনর্বাসনের দাবিতে বিক্ষোভও শুরু হয়ে যায়। বিক্ষোভে সামিল হন আসানসোল পুরসভার চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারি ও মেয়র তথা বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে মহকুমা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ইসিএল কর্তৃপক্ষ ধস এলাকা থেকে কিছুটা দূরে ম্যারাপ বেঁধে অস্থায়ী শিবির বানিয়ে দেয়, খাবারের ব্যবস্থা করে। ক্ষতিগ্রস্তদের সেখানে নিয়েও যাওয়া হয়। পরিস্থিতি কিছুটা সামলানো গেলেও ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর থেকেই ফের একই দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। রবিবারও এলাকায় স্থায়ী পুনর্বাসনের দাবিতে ক্ষতিগ্রস্তরা বিক্ষোভ দেখান। অনেকে খাবার নিতে অস্বীকার করেন, আবার অনেকে অনশনও শুরু করে দেন। শিবিরেরই একজন অনশনরত শান্তি তুড়ি বলেন, “এটা জীবন হল। শীতের রাতে ধু ধু মাঠের এই অস্থায়ী শিবিরে ছোট ছেলেকে বুকে আকড়ে শরীরে কাঁপন ধরে যাচ্ছে।” সাধনা তুড়ি নামে আরেকজন বলেন, “দেওয়াল ও মেঝের ফাটল হাঁ করে আছে। ঘরে ঢুকতে ভয় করে। স্থায়ী পুনর্বাসন না পেলে অন্নজল মুখে তুলবো না।”
ত্রাণ শিবিরে গ্রামবাসীরা। ছবি: শৈলেন সরকার।
বাসিন্দাদের এই দাবির উত্তরে ইসিএল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, ১৯৯৭ সালেই ডিজিএমএস এই অঞ্চলকে ১৫ নম্বর বস্তি ও লোকেশন নম্বর ১৮-তে ধসপ্রবণ বলে চিহ্নিত করেছে। রানিগঞ্জ খনি এলাকায় পুনর্বাসনের জন্য কয়লামন্ত্রকও ইতিমধ্যেই ২৬২৯ কোটি টাকার অনুমোদন করেছে। স্থায়ী পুনর্বাসনের দায়িত্ব পেয়েছে এডিডিএ। প্রাথমিক কাজ শেষ করতে এখনও পর্যন্ত ১৫৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ইসিএলের সিএমডির কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, এরপরেও ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অস্থায়ী ত্রাণ শিবির বানিয়ে খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছে ইসিএল। তবে ইসিএলের এই যুক্তি মানতে চাননি এডিডিএর চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার এলাকা পরিদর্শনে এসে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে বেশ কয়েকঘন্টা কাটিয়ে যান তিনি। নিখিলবাবুর পাল্টা দাবি, “স্থায়ী পুনর্বাসনের তালিকায় এই এলাকাটির নাম নেই। তবুও আমরা এই অঞ্চল নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি।” তাঁর দাবি, এই এলাকাটি কালিপাহাড়ি মৌজার ৪৫৪ নম্বর দাগে অবস্থিত। এটি পুনর্বাসন তালিকায় না থাকার জন্য ইসিএলকেই পুনর্বাসন দেওয়ার সবরকম ব্যবস্থা করতে হবে।
আসানসোলের সাংসদ তথা এডিডিএর প্রাক্তন চেয়ারম্যান বংশগোপাল চৌধুরী অবশ্য আপাতত পুনর্বাসন বিতর্কের বিরোধী। তাঁর দাবি, এলাকাটি যে ধসপ্রবন ডিজিএমএস সে কথা জানালেও ইসিএল দায়িত্ব এড়াতে পারে না। পুনর্বাসন কবে হবে তা না ভেবে ক্ষতিগ্রস্তদের এখনই অন্যত্র বাসস্থান দেওয়ার ব্যবস্থা করুক ইসিএল। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে যতদ্রুত সম্ভব এই ব্যবস্থা গ্রহনের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। তবে পুনর্বাসন কে দেবে তা নিয়ে মাথাব্যাথা নেই এলাকার বাসিন্দাদের। আপাতত স্থায়ী ও নিরাপদ বাসস্থানই তাঁদের একমাত্র দাবি। এখন বিতর্ক থামিয়ে বাসিন্দাদের দাবি মানতে কোন পক্ষ এগিয়ে আসছেন সেটাই দেখার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.