তিনতলার কাপড়ের শো-রুমের আগুন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে চারতলার গুদামে। দোতলাতেও নেমে আসছে ফুলকি। সেখানে রয়েছে একটি ব্যাঙ্ক। আগুন যাতে নীচে নেমে না আসে, তাই টানা ১৫ ঘণ্টা লড়ে গেলেন দমকলকর্মীরা। কার্যত ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দারের মতোই।
মঙ্গলবার আক্রা এলাকার আনন্দ মার্কেটে ঘটনাটি ঘটে। ভোর ৫টা নাগাদ স্থানীয়দের ফোন পেয়ে প্রথমে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়। তখন কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে চারদিক। কাজ করতে গিয়ে প্রথমেই ধাক্কা খান দমকলকর্মীরা। দেখা যায়, সঙ্গে নেই গ্যাস-মুখোশ, মই, সেফটি বেল্ট। পর্যাপ্ত পরিমাণ জলও ছিল না বলে অভিযোগ। আগুনের ভয়াবহতা দেখে দমকলকর্মীরা খবর দেন উচ্চপদস্থ কর্তাদের। পাঁচ ঘণ্টা পরে সকাল ১০টা নাগাদ আরও ১৩টি ইঞ্জিন আসে।
অতিরিক্ত গাড়ি পৌঁছলেও, জলের অভাবে এলাকারই একটি পুকুর থেকে জল নিয়ে আগুন নেভানো শুরু হয়। ১১টা নাগাদ ২টি মই পৌঁছয়। তত ক্ষণে ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে এলাকা। গ্যাস-মুখোশ ছাড়া কাজ করতে গিয়ে অনেক দমকলকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। দুপুর আড়াইটে নাগাদ কিছু কর্মীর জন্য গ্যাস মুখোশের বদলে কাপড়ের মুখোশ পৌঁছয়।
আগুনের ভয়াবহতা আরও বাড়ায় পরের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দল এবং অসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী। ওই দুই সংস্থার কর্মীরা দমকলকর্মীদের সাহায্যের জন্য তিন ও চারতলার দেওয়াল এবং জানলার গ্রিল কেটে দেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত দমকলকর্মীরা মূল ভবনে ঢুকতে পারলেও শো-রুমের ভিতরে ঢুকতে পারেননি। কিন্তু সন্ধ্যার পরে তিন এবং চারতলা এতটাই ধোঁয়ায় ঢেকে যায় যে, কর্মীরা ভবন থেকেও বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন। বাইরে থেকেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যান তাঁরা। তত ক্ষণে আগুনের তাপে ফাটল ধরেছে ভবনের দেওয়ালে। রাত আটটা নাগাদ ফের দমকলকর্মীরা ভিতরে ঢোকেন। প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় তাঁরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে দমকল সূত্রের খবর।
তবে স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, আগুন নেভানোর কাজে দমকলের দূরদর্শীতার অভাব ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা হাজি আবদুল কালামের অভিযোগ, “খবর পেয়েও দমকল মাত্র দু’টি ইঞ্জিন পাঠায়। তারা এসে আগুনের ভয়াবহতা বুঝতে পারেনি। সামান্য জল দিয়ে কাজ শুরু করে। আগুনের ফুলকি চারতলায় ছড়াতে থাকলে আরও ইঞ্জিন পাঠানোর জন্য খবর যায়। তত ক্ষণে আগুন অনেকটাই ছড়িয়ে পড়েছে।”
এ দিনের ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল আমরি, স্টিফেন কোর্টের পরেও দমকলের পরিকাঠামো অভাব, আগুন নেভানোর কাজে দক্ষতার অভাব রয়েই গিয়েছে। যদিও পরিকাঠামোর অভাবের কথা অস্বীকার করে দমকলের ডিজি দুর্গাপদ তারানিয়া বলেন, “আমাদের কর্মীরা ভাল ভাবেই কাজ করেছেন। প্রথম থেকেই তাঁরা যে ভাবে লড়েছেন, তাতে আগুন ছড়াতে পারেনি।” গ্যাস-মুখোশ না থাকার কথা তিনি অস্বীকার করেন। উল্টে জানান, যাঁরা আগুন নেভাচ্ছিলেন, প্রত্যেকেই একটা সময় পর্যন্ত গ্যাস-মুখোশ পরে কাজ করেছেন। পরে আর দরকার ছিল না বলে ওখানে মুখোশ ছিল না।
তবে দমকলের এক কর্তা অবশ্য জানান, প্রথমে তাঁদের কর্মীরা বুঝতেই পারেননি যে আগুনের ভয়াবহতা এত বেশি। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক গাড়ি পাঠানো হয়। তিনি আরও জানান, দমকলের ছাড়পত্রহীন ওই মার্কেটটির ভিতরে ওই প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকলেও, কোনও অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র ছিল না। পুলিশ জানায়, বেআইনি ওই ভবনের তিনতলার শো-রুমের ভিতরে ঘুপচি-ঘুপচি ঘর থাকায় দেওয়াল ভেঙে কাজ করতে অসুবিধায় পড়ে দমকল। তাই আগুন দ্রুত ছড়ায়। পুলিশ জানায়, এ দিন কিছু দমকলকর্মী জখম হন এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন। সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে ছিলেন এলাকার বিধায়ক, বরো চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে দমকলের ডিজি এবং পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। পুলিশের এক কর্তা জানান, দমকলের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েই তাঁরা ওই ভবনের মালিক কবীর আলি মোল্লার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করবেন। তবে ঘটনার পর থেকে মালিক নিখোঁজ বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। |