চোখে ঢাউস চশমা, তাতে আবার আলো জ্বলছে। মাথায় সান্তা টুপি। সেই টুপিতেও আলো জ্বলছে নিভছে। সেই সঙ্গে আবার আলোর শিং। আলো ঝলমল পার্ক স্ট্রিটের একটা রেলিংয়ের উপরে বছর পাঁচেকের বাচ্চাকে এ রকমই টুপি আর চশমা পড়িয়ে ছবি তুলছিলেন এক দম্পতি। পিছনে আলোর সান্তা বুড়ো হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তাকে ছুঁতে চায় সেই খুদে। রেলিংয়ে বাচ্চাকে তুলে ছবি তোলানো হচ্ছে দেখে ছুটে এল পুলিশ। কিন্তু বারণ করার আগেই শেষ ছবি তোলার পর্ব।
সন্ধ্যা নামতেই এমনই বাঁধনছাড়া আনন্দে মাতল পার্ক স্ট্রিট।
রাস্তায় ঝলমলে আর্চের আলো
যেন হার মানাচ্ছে দুর্গাপুজোর আলোকসজ্জাকেও। ফুড স্ট্রিট ধরে হাঁটলে বড় বড় মণ্ডপের সামনে খাবারের দোকানগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। গোটা পার্ক স্ট্রিট যেন শারদোৎসবেরই মিনি সংস্করণ। সাধে কি আর পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা বছর পঁচাত্তরের রূপেন ফিলিপস বলছেন, “পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে বড়দিন মানেই পার্ক স্ট্রিট। কিন্তু তার এ রকম আলো ঝলমলে চেহারা আগে দেখিনি।”
শুধু রূপেন ফিলিপসই নন, এমন ঝলমলে পার্ক স্ট্রিট আগে দেখেননি গড়িয়ার শুভদীপ সরকারও। অফিস ছুটির পর সপরিবার চলে এসেছেন পার্ক স্ট্রিটে। সান্তার সামনে দাঁড়িয়ে পোজ দিয়ে ছবি তুললেন সকলে। বললেন, “বড়দিনের উৎসবে প্রতি বছরই পরিবার নিয়ে পার্ক স্ট্রিটে আসি। এ বার রাস্তার উপর আলোর আর্চগুলো এক কথায় অনবদ্য। আগে এমন দেখিনি।” |
বো স্ট্রিটের খ্রিস্টান পাড়ায় ক্রিসমাস ইভ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। ছবি: সুমন বল্লভ। |
কারও মাথায় টুপি, কেউ মেতেছেন রংচঙে বেলুন হাতে। রাত বাড়তেই বেড়েছে সান্তার টুপি, ডিজাইনার চশমার দাম। সন্ধ্যা ছ’টায় যে টুপি বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়, সাড়ে সাতটাতেই তার দাম ৬০ টাকা ছুঁয়েছে। তবু টুপি আর চশমার দোকানের সামনে ভিড়। অ্যালেন পার্কের ভিতরে সেই টুপি আর চশমা পরেই অনুষ্ঠানে ভিড় জমিয়েছেন মানুষ। পার্কে ঢোকার মুখে বিশাল বড় সান্তার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার হিড়িক। পার্ক স্ট্রিটের স্টিফেন কোর্টের বাসিন্দা দেবাশিস গুহনিয়োগী বলেন, “আ্যলেন পার্কে এত সুন্দর আলো আগে দেখিনি কখনও। রোজই অনুষ্ঠান দেখতে যাচ্ছি।” দেবাশিসবাবুর মতে, ২৫ তারিখ থেকে পার্ক স্ট্রিটে সন্ধ্যায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হলে জমজমাট হয়ে উঠবে উৎসব। তিনি বলেন, “লন্ডন, আমেরিকায় দেখেছি এ রকম উৎসবে রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। ফুড স্ট্রিটটাও এ বার অনবদ্য।”
ফুডকোর্টে দেদার বিকোচ্ছে ঘুগনি থেকে শুরু করে ইডলি, ধোসা। তার সঙ্গেই কেক পেস্ট্রি, হটডগও বিক্রি হচ্ছে দেদার। নীলিমা অগ্রবাল নামে এক মহিলা বলেন, “ভেবেছিলাম কোনও বড় রেস্তোরাঁয় রাতের খাওয়া সারব। এত লম্বা লাইন! বাধ্য হয়েই ফুড স্ট্রিট থেকে খাবার খেলাম। কিন্তু এখানকার খাবার খেয়ে আমাদের পরিবারের সবাই খুব খুশি।”
একদল স্কুলপড়ুয়ার সঙ্গে দেখা পার্ক ম্যানসনের সামনে। তারা জানাল, মা-বাবার অনুমতি নিয়েই আজ একটু বেশি রাত পর্যন্ত পার্ক স্ট্রিটে ঘুরে বেড়াবে তারা। মাথায় সান্তার আলোর টুপি, হাতে আইসক্রিম। এক ছাত্র সৌম্য জানাল, এ দিক-ও দিক ঘুরতে ঘুরতে অ্যালেন পার্কে ঢুকে পড়েছিল তারা। গানের অনুষ্ঠানে দেদার নাচানাচি হল। এ বার ফুড স্ট্রিটে খাবার খেয়ে বাড়ি ফেরার পালা।
রাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মানুষের ঢল। পুলিশের নজরদারিও ছিল চোখে পড়ার মতো। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পার্ক স্ট্রিট ঘুরে দেখতে আসেন। তখন তাঁর চোখে পড়েছিল সাধারণ মানুষের অসুবিধা করে ফুটপাথে একটি হকার্স ইউনিয়নের সভা চলছে। একটু অসন্তোষ প্রকাশ করেই তিনি ফোন করেন পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ পুরকায়স্থকে। এ দিন দেখা যায় ফুটপাথের ওই জায়গাটি ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। পার্ক স্ট্রিটে ঢোকার মুখেই ওয়াচ টাওয়ারে নজরদারি চালাচ্ছেন দুই পুলিশকর্মী।
শুধু পার্ক স্ট্রিটই নয়, সন্ধ্যা থেকেই বো-ব্যারাকও ছিল আলো-ঝলমলে। রাস্তায় নেমে উৎসবে মাতেন বাসিন্দারা। বড় বড় বাড়ির উপর থেকে ঝোলানো আলোর মালা। নীচে গানের তালে হাতে হাত ধরে নেচেছেন আট থেকে আশি। |