চাকায় আগুন, কলকাতায় রক্ষা ড্রিমলাইনারের
বার বিমানে বিভ্রাট। এবং আবার সেই ড্রিমলাইনার। এ বার এই কলকাতায়। ছোটখাটো যান্ত্রিক ত্রুটি নয়। রানওয়েতে নামার একটু পরেই পিছনের চাকায় দাউদাউ আগুন! তখনও বিমান গড়াচ্ছে। মঙ্গলবারের ঘটনাটির পরে বিমানবন্দর-কর্তাদের ধারণা, এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সজাগ না-হলে বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল। তারা দ্রুত তৎপর হওয়ায় ড্রিমলাইনারের চাকার আগুন অন্যত্র ছড়ানোর আগেই নিভিয়ে ফেলা গিয়েছে। যাত্রীদেরও নিরাপদে বার করে আনা হয়।
আগুন নজরে এল কী ভাবে?
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এ দিন বিকেলে দিল্লি থেকে ২৪৮ জন যাত্রী নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়া-র বিমানটি তখন সবে কলকাতায় নেমেছে। বিমানের কোথাও আগুন লেগে থাকলে ককপিটে বসা পাইলটের তা সঙ্গে সঙ্গে জেনে ফেলার কথা। কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়া-র ড্রিমলাইনারের পাইলটের কাছ থেকে তেমন কোনও বার্তা বিমানবন্দর কন্ট্রোলে এসে পৌঁছয়নি বলে কর্তাদের দাবি। তাঁরা জানিয়েছেন, যাত্রী সমেত বিমানটি যখন গড়িয়ে প্রায় এরোব্রিজের কাছাকাছি, তখন তার পাশ দিয়ে পেরিয়ে যাওয়া স্পাইসজেটের কলকাতা-চেন্নাই উড়ানের পাইলটের চোখে পড়ে, ড্রিমলাইনারের পিছনের বাঁ দিকের চাকায় আগুন ধরেছে। তিনি-ই এটিসি-কে খবর দেন।
এটিসি সঙ্গে সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়া-র পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে সতর্ক করে। পাইলট জানান, আগুন লাগার সঙ্কেত তিনি পেয়েছেন। সঙ্কেত পেয়েও তিনি কেন নিজে থেকে এটিসি-কে জানালেন না?
এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের পাইলটই এটিসি-কে আগে খবর দিয়েছিলেন। কলকাতা বিমানবন্দরের কর্তাদের কথায় যদিও এর সমর্থন মিলছে না। তবে ততক্ষণে বিমানবন্দরের অ্যাপ্রন কন্ট্রোল টাওয়ারে থাকা অফিসারেরাও খালি চোখে দেখতে পেয়ে গিয়েছেন যে, এয়ার ইন্ডিয়া-র বিমানের চাকায় আগুন জ্বলছে। চটজলদি দমকলকে সতর্ক করা হয়। দমকলবাহিনীর সঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্সও পৌঁছে যায়। “চিহ্নিত করার ছ’মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।” বলেন বিমানবন্দরের এক অফিসার।
আগুন নিভলেও তার জেরে ড্রিমলাইনারের যাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। কারণ কলকাতা থেকে ১৭০ জন যাত্রী নিয়ে ওই বিমানটিরই দিল্লি ফেরার কথা ছিল। আকস্মিক বিভ্রাটের দরুণ বিমান বসে যাওয়ায় সেই যাত্রীরা বিমানবন্দরে আটকে পড়েন। এয়ার ইন্ডিয়া-র তরফে জানানো হয়েছে, সন্ধ্যায় তাদের ৩১০ আসনের যে বোয়িং-৭৭৭ দিল্লি থেকে কলকাতায় আসে, তাতে চাপিয়ে ড্রিমলাইনারের আটক যাত্রীদের দিল্লি পাঠানো হয়েছে।
বস্তুত সূচনালগ্ন থেকেই বিভ্রাটের গেরোয় পড়েছে ড্রিমলাইনার। তুলনায় কম জ্বালানি পুড়িয়ে ও কম দূষণ ছড়িয়ে দূর-দূরান্তে পাড়ি জমাতে সক্ষম বলেই বিশ্ব জুড়ে এর কদর তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পরের পর অবাঞ্ছিত ঘটনায় বোয়িং সংস্থার তৈরি ‘স্বপ্ন বিমান’টির গায়ে ইতিমধ্যেই লেগে গিয়েছে বিতর্কের ছিটে। দেখা গিয়েছে, ড্রিমলাইনার বিবিধ সমস্যায় জর্জরিত। এমনকী, ব্যাটারিতে ঘন ঘন আগুন ধরার প্রবণতার জন্য বিশ্বের সর্বত্র ড্রিমলাইনার বসিয়েও দেওয়া হয়।
ব্যাটারির ত্রুটি সারিয়ে ফের উড়তে শুরু করলেও গেরো কাটেনি। যেমন গত অক্টোবরে দিল্লি থেকে বেঙ্গালুরু যাওয়ার পথে মাঝ আকাশে এয়ার ইন্ডিয়া-র ড্রিমলাইনারের প্যানেল খুলে পড়ে গিয়েছিল। ওই মাসেই মেলবোর্ন থেকে দিল্লি রওনা হওয়ার পরে এয়ার ইন্ডিয়া-র ড্রিমলাইনারে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় সেটি মেলবোর্নে ফিরে গিয়ে জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়। নভেম্বরে এয়ার ইন্ডিয়া-র ড্রিমলাইনার মেলবোর্নে নামার সময়ে ককপিটের কাচে চিড় ধরে যায়।
শুধু এয়ার ইন্ডিয়া নয়। ড্রিমলাইনার যারাই কিনেছে, তাদেরই ভুগতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। যেমন গত নভেম্বরে ভুগেছে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। তাদের ড্রিমলাইনার যাত্রী নিয়ে হিথরো থেকে টরন্টো যাচ্ছিল। মাঝ আকাশে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। টরন্টো বিমানবন্দরে সেটি জরুরি অবতরণ করে। স্বপ্ন-বিমানের বিভ্রাট-তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন কলকাতার এ দিনের ঘটনা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.