কর্মক্ষেত্রে মহিলা সহকর্মীদের প্রতি দূর থেকে অসম্মানজনক অঙ্গভঙ্গি করলেও তা যৌন নির্যাতনের আওতায় পড়ে। ১৯৯৭-এর ১৩ অগস্ট বিশাখা মামলায় এমনই নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই নির্দেশ উল্লেখ করে কলকাতার একটি কলেজের এক শিক্ষিকা তাঁর পুরুষ সহকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন অধ্যক্ষের কাছে। মহিলার অভিযোগ, ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক, উল্টে তাঁকেই সাসপেন্ড করা হয়েছে। এ নিয়ে তিনি দ্বারস্থ হয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের।
ওই মহিলা জানান, কলেজে শিক্ষক সংসদের বৈঠকে বাদানুবাদ চলাকালীন এক শিক্ষক তাঁর দিকে আঙুল তুলে বলেন, “এটা কি ইয়ার্কি মারার জায়গা? ন্যাকামো হচ্ছে?” এর পরেই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনে অধ্যক্ষের কাছে প্রতিকার চান তিনি। মহিলার আইনজীবী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “অভিযোগকারিণীকেই সাসপেন্ড করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তাই বাধ্য হয়ে তিনি আদালতে এসেছেন।”
দেবাশিসবাবু জানান, ২০১২ সালে একটি রিফ্রেশার কোর্স-এ অংশ নিতে চেয়েছিলেন ওই মহিলা। অধ্যক্ষ অনুমতি দেননি। মহিলা এ নিয়ে অভিযোগ করলে শিক্ষক সংসদের জরুরি বৈঠক ডাকেন অধ্যক্ষ। দেবাশিসবাবুর অভিযোগ, সেখানেই বাদানুবাদ চলাকালীন এক শিক্ষক নবকিশোর চন্দ মহিলাকে ওই কটূক্তি করেন। কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন ওই মহিলা। তাঁর দাবি, “এক বছর ধরে অধ্যক্ষকে বার বার অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি।” বিষয়টি তিনি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস এবং আচার্য রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনকেও জানান। বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজকে কমিটি গড়ে বিশাখা নির্দেশিকা মেনে তদন্তের নির্দেশ দেয় মহিলা কমিশন। কলেজ সেই তদন্ত কমিটিও গঠন করে। কিন্তু, কমিটি মহিলার অভিযোগকে নস্যাত্ করে দেয় বলে দেবাশিসবাবু জানান। তিনি জানান, এর পরেই কলেজ ওই শিক্ষিকাকে সাসপেন্ড করলে তিনি হাইকোর্টে যান।
কলেজের অধ্যক্ষ তপন পোদ্দার বলেন, “কমিটি বলেছে, মহিলা মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। নিয়ম মেনে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।” অভিযুক্ত শিক্ষক নবকিশোরবাবুর কথায়, “আমি ‘ইয়ার্কি’ শব্দটি ব্যবহার করলেও ‘ন্যাকামো’ বলিনি। আর ‘এটা কি ইয়ার্কি মারার জায়গা’ আমরা কথাচ্ছলে বলেই থাকি।” বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জনবাবুও। তিনি বলেন, “মহিলা কমিশন তদন্ত করতে বলেছিল। বিশাখা নির্দেশিকা অনুযায়ী অভিযোগ উঠলে তা কলেজকেই তদন্ত কমিটি করে দেখতে হবে। সে রকমই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।”
মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দাদেবী বলেন, “কমিটির পাঁচ জনের মধ্যে তিন জন শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বলেছেন। কিন্তু, কর্মস্থলে পুরুষ সহকর্মী কেন ‘ইয়ার্কি’, ‘ন্যাকামো’ শব্দগুলি ব্যবহার করবেন? হাইকোর্ট ডেকে পাঠালে যা বলার সেখানেই বলব।” দেবাশিসবাবু জানান, সাসপেনশন ও যৌন হেনস্থা নিয়ে তাঁদের আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে হলফনামা দিয়ে বিষয়টি জানাতে বলেছে। সাসপেন্ড থাকাকালীন ওই শিক্ষিকাকে ‘রিফ্রেশার কোর্স’ করার অনুমতি দেয়নি কলেজ। অ্যাকাডেমিক স্টাফ কলেজে চিঠি দিয়ে অধ্যক্ষ জানিয়েছিলেন, সাসপেন্ড থাকা অবস্থায় ওই শিক্ষিকা এই কোর্স করতে পারেন না। কোর্ট তা খারিজ করে মহিলাকে কোর্সের অনুমতি দিয়েছে। অধ্যক্ষ বলেন, “ওই রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাব।” |