|
|
|
|
মোদীর নতুন স্লোগান, ভোট ফর ইন্ডিয়া |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • মুম্বই |
আহ্লাদে আটখানা!
ভিলে পার্লের তিন ফুট বাই চার ফুটের চায়ের দোকানে ঝাঁপ ফেলে সোজা এসে বসেছেন সোফার তুলতুলে নরম গদিতে। দিব্য এক নবাবি মেজাজে আজ মহেশ। কিছু সতীর্থ ছাড়া তাঁর আশপাশে বেশ কয়েকটি হোমরাচোমরা মুখ। যাঁরা মাঝেমধ্যেই নাক সিঁটকে আড় চোখে তাকাচ্ছেন। তাতে কী? মহেশ আজ খোদ নরেন্দ্র মোদীর ভিআইপি। সগর্বে মুঠোয় আঁকড়ে রেখেছেন ‘মহাগর্জন’ সভার ভিআইপি পাসটি। ভাবছেন, কাল থেকে এই ভিআইপি মর্যাদাটি বাঁধাই করে রাখবেন চায়ের দোকানের কুলুঙ্গিতে গণপতি বাপ্পার পাশে।
ঠিক এটাই তো চেয়েছিলেন মোদী।
চার রাজ্যে কংগ্রেসের পরাজয়ের পরেও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন রাহুল গাঁধী। অরবিন্দ কেজরিওয়াল নামক এক নতুন শক্তিও নিঃশ্বাস ফেলছে ঘাড়ের কাছে। অনেকে বলছেন, চিন-চার মাসের মধ্যেই হতে পারে লোকসভার ভোট। অর্থাৎ বড়জোর একশো দিন হাতে। দুশোর বেশি আসন জেতার বিশাল লক্ষ্য। বলা যায়, একশো বলে ডবল সেঞ্চুরির টার্গেট। মোদী তাই আজ নতুন উদ্যমে ঝাঁপালেন ভোট যুদ্ধে। পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের পর এই প্রথম বড় জনসভা, তা-ও সেটা দেশের আর্থিক রাজধানীতে। আর সেখান থেকেই তাঁর নতুন স্লোগান ‘ভোট ফর ইন্ডিয়া’। |
|
রবিবারও ছুটি নেই। মুম্বই মোদী-আক্রান্ত। ছবি: এএফপি। |
পরিবারতন্ত্র থেকে মুক্তি? স্বজনপোষণ থেকে রেহাই? দুর্নীতি-মূল্যবৃদ্ধি-কুশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই? রোজগার-নিরাপত্তা-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-উন্নয়ন? মোদীর মতে, সব কিছুরই দাওয়াই একটাই। ‘ভোট ফর ইন্ডিয়া’। এক সময় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গে ভারতকে একাত্ম করে কংগ্রেসের দেবকান্ত বড়ুয়া বলেছিলেন, “ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়া ইজ ইন্দিরা।” কতকটা সেই ধাঁচেই আজ মোদী বিজেপির সঙ্গে ভারতকে একাত্ম করে বললেন, “ভোট ফর ইন্ডিয়া। দেশের জন্য ভোট দিন, দলের জন্য নয়। কংগ্রেস গোড়া থেকে বিভাজনের রাজনীতি করে এসেছে। ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে সম্প্রদায়বাদের রাজনীতি করেছে। কিন্তু এক সময়ে স্বরাজ্যের লড়াই হয়েছে, এখন অঙ্গীকার হোক সুরাজ্য আমাদের জন্মগত অধিকার। আর তার মন্ত্র হবে শ্রমেব জয়তে। এই মুম্বই থেকেই এক সময় ভারত-ছাড়ো আন্দোলনের ডাক উঠেছিল, আজ উঠুক ‘কংগ্রেস-ছাড়ো’র ডাক।”
মহেশদের আজ পোয়া বারো। বড় আশা করে শুনতে এসেছিলেন মোদীর কথা। নিরাশ হননি। কারণ, মোদী নিজেই জানিয়েছেন, “শুধু দশ হাজার চা-ওয়ালা কেন! এখন পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। আগামী দিনে সব গরিবই আমার কাছে ভিআইপি।” |
|
নিজেকে দেখা। মোম-মূর্তির পাশে নরেন্দ্র মোদী। মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই। |
আর আজই মুম্বইয়ে মোদীর মোমের মূর্তি উদ্বোধন করে দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহও নাটকীয় ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘বারাক ওবামা যদি আইসক্রিম বেচে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পারেন, এপিজে আব্দুল কালাম খবরের কাগজ বেচে ভারতের রাষ্ট্রপতি হতে পারেন, কাঠুরে থেকে আব্রাহাম লিঙ্কন আমেরিকার মসনদে যেতে পারেন, তা হলে প্ল্যাটফর্মে চা বেচে মোদী কেন প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না?”
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য অনেক দিন ধরেই সুশাসনের স্বপ্ন ফেরি করছেন মোদী। কিন্তু চার রাজ্যে কংগ্রেস ধরাশায়ী হওয়ার পর মোদীর প্রত্যয় বেড়েছে। কারণ ভোটের ফলে স্পষ্ট, কংগ্রেস যে ভাবে মোদীর সুশাসনের এজেন্ডা মোকাবিলা করার জন্য তাঁর দাঙ্গাবাজ পরিচয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করছিল, তা ধোপে টিকছে না। আম আদমি পার্টির উত্থানও স্পষ্ট করে দিয়েছে, জাত-পাত-ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে জনতা এখন সুশাসনেই মজছে। রাহুল গাঁধীর মুখেও এখন তাই বিকাশের কথা। মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতি রোধের প্রতিশ্রুতি দিতে হচ্ছে। মোদী বুঝেছেন, রাহুল গাঁধীর এই আকস্মিক অতিসক্রিয়তা ও আম-জনতার মনে আম আদমি পার্টির প্রতি আস্থা এই দুটিকেই মোকাবিলা করতে হবে। সে কারণে সুশাসনের এজেন্ডার পাশাপাশি এই দুই শক্তিকে পরাস্ত করার কৌশলও তাঁকে নিতে হবে।
তাই দিল্লিতে রাহুলের মন্তব্যকে কটাক্ষ করে মোদী বলেন, “কাল দেখলাম কংগ্রসের এক নেতা দুর্নীতির বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিচ্ছেন। আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে থাকা ব্যক্তি বেমালুম বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন! অথচ এই মহারাষ্ট্রেই আদর্শ কেলেঙ্কারিতে যুক্ত কংগ্রেস নেতাকে আড়াল করা হচ্ছে!”
|
পুরনো খবর: মোদীর সভায় ভিআইপি আজ চা -ওয়ালারাই |
|
|
|
|
|