|
|
|
|
মোদীর সভায় ভিআইপি আজ চা-ওয়ালারাই
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • মুম্বই
২১ ডিসেম্বর |
চায়ে চুমুক দিয়ে রাজ পুরোহিত বললেন, ধরে নিন কাল বন্ধ। এক কাপ চা-ও জুটবে না।
খুব ভুল বলছেন না বিজেপি-র এই নেতাটি। সকাল থেকে ব্যস্ত ভিআইপি-দের নিয়ে। নরেন্দ্র মোদী কাল আসছেন শহরে। আর তাঁর সভার জন্য সকাল থেকে ভিআইপি-দের পাস দিতেই গোটা দিন গড়িয়ে গেল। না, কোনও বড় নেতা বা অভিনেতা নন। এই ভিআইপি-রা হলেন মুম্বই ও মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তের চা-বিক্রেতা। আগামিকাল মোদীর মহাগর্জন সভায় এমন দশ হাজার চা-বিক্রেতা বসবেন ভিআইপি আসনে। তাঁদের জন্য তৈরি হয়েছে আলাদা ব্লকও।
আজ তাই দম ফেলার ফুরসত নেই বিজেপি নেতা রাজ পুরোহিতের। লাভের লাভ একটাই। কাল কেউ চা পাক বা না-পাক আজ কিন্তু ভিআইপি পাস দিতে দিতে দিনভর ফ্রি-তে অঢেল চা পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। বললেন, “দেখুন, নরেন্দ্র মোদী ছেলেবেলায় প্ল্যাটফর্মে চা বিক্রি করেই আজ আমাদের দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। কাল মহাগর্জন সভায় তাই চা বিক্রেতারাই আমাদের ভিআইপি।” |
মোদীর মহাগর্জন সভার মঞ্চ। প্রস্তুতির পাশাপাশি চলছে সুরক্ষার বন্দোবস্তও। শনিবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই |
মোদীর এই সভায় রাজনাথ সিংহ, নিতিন গডকড়ীদের মতো নেতা ছাড়াও মুম্বইয়ের শিল্পপতিরাও আমন্ত্রিত। কিন্তু গোটা কর্মকাণ্ডের নায়ক রাজীবপ্রতাপ রুডির লক্ষ্য, চা-ওয়ালা, ঠেলা-ওয়ালা, বস্তিবাসীরাও আসুন মোদীর কথা শুনতে। তার জন্য রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে দু’হাজার বাস আর বাইশটি বিশেষ ট্রেনে চড়িয়ে লোক আনার ব্যবস্থা হয়েছে। মোদীর সভায় আসার জন্য শুধুমাত্র একটি মিস্ড কল দিলেই বাড়িতে গিয়ে তাঁকে নিয়ে আসা হবে।
এ কি নিছক চমক? নাকি এর পিছনে রয়েছে মোদীর কোনও সুচিন্তিত কৌশল? ঘরোয়া আলোচনায় বিজেপি-র নেতারা বলছেন, এই মহা-আয়োজনের পিছনে এক ঢিলে অনেক পাখি মারাই তাঁদের উদ্দেশ্য। সম্প্রতি দিল্লি বিধানসভার ভোটে আম আদমি পার্টির আকস্মিক উত্থানে ভাল ধাক্কা খেয়েছে দল। দিল্লিতে অটোচালক, বস্তিবাসী, গরিব-মজদুর শ্রেণির মধ্যে আশা জাগিয়ে বিজেপি-র ক্ষমতা দখলের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। লোকসভা ভোটের ক্ষেত্রে সেই পরিসরটি দখল করতে চান মোদী। মুম্বই থেকে সেই বার্তাই দিতে চান তিনি।
কেজরিওয়ালরা লোকসভা ভোটে দিল্লির গণ্ডি পেরিয়ে অন্য রাজ্যেও ভিত মজবুত করতে চাইছেন। মুম্বই তার অন্যতম। এমনিতেই লোকসভায় দু’শোর বেশি আসন আনা মোদীর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তার উপরে আম আদমি পার্টি যদি অন্য রাজ্যেও বিজেপি-র ভোট কাটে, তবে তা উদ্বেগেরই বিষয়। তাই অরবিন্দ ডালপালা মেলে ধরার আগেই আম মুম্বইকরের মনে আশার বীজ বুনতে চাইছেন মোদী। ঘনিষ্ঠ নেতা অমিত শাহের মতে, “আমাদের মনে হয়, আম আদমি পার্টি খুব বেশি দিন রাজনীতিতে স্থায়ী হবে না। দীর্ঘকাল দল চালাতে প্রয়োজন নিজস্ব ক্যাডার। আম আদমি পার্টির তা নেই। তবু মানুষ শুধু কিছুটা আশার উপরে ভর করেই তাদের ভোট দিচ্ছে। বিজেপি-কে কৌশলে মোকাবিলা করতে হবে।”
মুম্বইয়ে এত বড় সভা আয়োজনের পিছনে বিজেপি-র অন্য লক্ষ্যও রয়েছে। দু’শোর বেশি আসন দখলের লক্ষ্যে মহারাষ্ট্রকেও পাখির চোখ হিসেবে দেখছেন মোদী। গত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪৮টি আসনের মধ্যে মাত্র ৯টি পেয়েছিল বিজেপি। পাঁচ রাজ্যের ভোটে দেশ জুড়ে কংগ্রেস-বিরোধী হাওয়ার স্পষ্ট আঁচ মিলেছে সম্প্রতি। ফলে মহারাষ্ট্র থেকে বিস্তর আসন বাড়ানোর সুযোগ আছে বলেই মনে করছে বিজেপি।
গত লোকসভা ভোটে শুধু মুম্বইয়েই ৬টি আসনে বিজেপি-শিবসেনা জোট হেরে গিয়েছিল। তার অন্যতম কারণ উদ্ধব ও রাজ ঠাকরের বিবাদ। প্রকাশ্যে এই বিবাদ এখনও মেটেনি। কিন্তু মোদী চাইছেন, দুই ভাইয়ে মিলন ঘটাতে। প্রকাশ্যে না হলেও অন্তত তলে তলে। ক’দিন আগেই গুজরাতে গিয়ে মোদীর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন উদ্ধব। মোদী তাঁকে বোঝাচ্ছেন, এমনিতেই কংগ্রেস দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। শরদ পওয়ারের সঙ্গেও তাদের ঠোকাঠুকি চলছে। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর শরদ পওয়ার নিজে ইউপিএ-র নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এই অবস্থায় একজোট হয়ে লোকসভা ভোটে লড়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। তার উপর আদর্শ কেলেঙ্কারিতে কংগ্রেসের নেতাকে আড়াল করার বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে। রাহুল গাঁধী যে ভাবে এখন দুর্নীতি-বিরোধী অবস্থান নিচ্ছেন, মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন দুর্নীতি তিনি কী করে মোকাবিলা করেন, সেটাই দেখতে চায় বিজেপি।
কংগ্রেস অবশ্য মোদীর এই কৌশলের জবাব দিতে সনিয়া ও রাহুলকে এনে জানুয়ারিতে একটি বড় জনসভা করতে চাইছে। মোদীর সভার দ্বিগুণ লোক জড়ো করাই লক্ষ্য। মূলত, দলিত ও মুসলমানদের একত্রিত করে গত বারের আসন ধরে রাখার জন্য রণকৌশলও তৈরি করছে তারা। আপাতত মোদীর সভার আট দিন পরে কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসে একটি প্রতীকী সভা করে গা ঘামিয়ে নিতে চাইছেন রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব। |
|
|
|
|
|