বিকাশের কথা বলেও সেই খয়রাতির ফাঁদে রাহুল

২১ ডিসেম্বর

ফিকির বার্ষিক সাধারণ সভায় রাহুল গাঁধী। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই
শিল্পমহল বলছে, আর্থিক বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা বোঝা সত্ত্বেও রাহুল কেন এই অভিযোগ মানলেন না, সেটাই প্রশ্ন। তারা মনে করছে, এর ফলে নতুন দিশা দেখানোর প্রসঙ্গ তুলেও তাকে জলেই দিয়েছেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি। একটি অংশের মত, আগের ভোট থেকে কোনও শিক্ষাই নেয়নি কংগ্রেস।
অথচ রাহুল নিজেই এ দিন বলেন, “শেষ ভোটে আমরা মোটেও ছক্কা মারিনি।” বলেন, “আমরা নতুন করে ভাবনাচিন্তাও করব।” কিন্তু এই কি সেই ভাবনাচিন্তা! প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে নরেন্দ্র মোদীর মতো প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীর মোকাবিলা কী ভাবে করবেন রাহুল? সেই মোদী, যিনি ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-এর মাধ্যমে উন্নয়নের প্রচার করে এক দিকে শিল্পমহলের চোখের মণি, অন্য দিকে পরের পর চমক দিয়ে পৌঁছতে চাইছেন সাধারণ মানুষের কাছেও। আগামিকাল মুম্বইয়ের সভায় তিনি যেমন ১০ হাজার চা-ওয়ালাকে মঞ্চে তুলবেন। নিজে চা-ওয়ালা হিসেবে জীবন শুরু করেছিলেন সে কথা ফলাও করে প্রচার করার লক্ষ্যেই এই চমক। জনসভায় এমন চমক কিন্তু আজও দেখাতে পারেননি রাহুল। বাকি রইল উন্নয়নমুখী প্রচার। আজ ফিকি-র সভায় তাঁর বক্তৃতা শোনার পরে প্রশ্ন উঠেছে, ভোটে ধাক্কা খাওয়ার পরেও সামাজিক প্রকল্পে জোর দিয়ে কি তিনি আবার পুরনো ভুলটাই করছেন না?
রাহুলের এ দিনের বক্তৃতায় কিন্তু ছিল সব প্রসঙ্গই। কখনও তিনি আর্থিক বৃদ্ধির কথা তুলেছেন, কখনও জমি নীতির, কখনও তুলেছেন দুর্নীতির প্রসঙ্গ, কখনও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কথা। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে এই বক্তৃতা থেকে কী পেল শিল্পমহল? দিনের শেষে শিল্পপতিদের (তাঁরা সকলেই কোনও না কোনও সময়ে ফিকি-র সভাপতিও ছিলেন) চোখা চোখা প্রশ্ন থেকেই বোঝা গেল, এত কিছু শোনার পরেও তাঁদের কাছে অনেক কিছু ধোঁয়াশাই রয়ে গিয়েছে। রাজ্যবর্ধন কানোরিয়া যেমন জানতে চাইলেন, নতুন জমি অধিগ্রহণ নীতির ঠেলায় শিল্পের জন্য নতুন জমি পেতে ১৫ মাস গড়িয়ে যাবে। কারখানা তৈরি হবে কী করে? হর্ষ মারিওয়ালা প্রশ্ন তুলেছেন, পরিবেশের ছাড়পত্রের সমস্যার সমাধান হবে কী করে? হর্ষপতি সিঙ্ঘানিয়া প্রশ্ন তুলেছেন, বেকার যুবকের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু চাকরির যোগ্য ছেলেমেয়ের অভাব। শিল্পের সঙ্গে শিক্ষার এই মেলবন্ধন নিয়ে রাহুল কী ভাবছেন? রাজন মিত্তল অভিযোগ তুলেছেন, টেলিকম ক্ষেত্রটা আইসিইউ-তে চলে গিয়েছে।
লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি কোন শিল্পনীতির কথা বলছেন, তা জানার জন্য উৎসুক ছিলেন দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিরা। বক্তৃতার শেষে তাঁদের প্রশ্নেই স্পষ্ট হয়ে গেল কতটা দিশা দেখাতে পেরেছেন রাহুল।
অথচ শিল্পমহলের প্রশ্নের উত্তর দিতে রাহুল চেষ্টা যে করেননি, তা নয়। জমি নিয়ে প্রশ্নে যেমন তিনি যুক্তি দিয়েছেন, “শিল্পপতিদের স্বার্থের কথা ভেবেই নতুন জমি আইন তৈরি হয়েছে।” সিঙ্গুরে ন্যানোর কারখানার উদাহরণ তুলে রাহুল বলেন, “আইন ছিল না বলেই পশ্চিমবঙ্গে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলন হয়েছিল। টাটাকে তার মূল্য চোকাতে হয়েছিল।” পরিবেশের প্রশ্নে তাঁর যুক্তি, ভারসাম্য রেখে এগোতে হবে। যে প্রকল্পে পরিবেশের পাকাপাকি ক্ষতি হবে, তা থেকে পিছিয়ে এসে যেখানে পরিবেশের ক্ষতি অন্য ভাবে পূরণ করা সম্ভব, সে দিকে এগোতে হবে। কিন্তু সকলকে সন্তুষ্ট করতে পারেননি রাহুল। মনমোহন-সরকারের ব্যর্থতা মেনে তা শোধরানোর কথা বলতে গিয়ে শুনতে হয়েছে রাজন মিত্তলের কটাক্ষ, “আশা করি, আপনি যা বলছেন, আপনার সরকার শুনতে পাচ্ছে!”
এই সভার পরের অর্ধেই হাজির ছিলেন আনন্দ শর্মা, প্রফুল্ল পটেলের মতো কেন্দ্রের একাধিক মন্ত্রী এবং যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টের সিংহ অহলুওয়ালিয়াও। তাঁরা রাহুলের কথা কতটা শুনতে পেয়েছেন বলা কঠিন। কারণ, সকলেই সরকারের যাবতীয় সিদ্ধান্তের পক্ষেই সওয়াল করে গেলেন। তাঁরা দাবি করলেন, সরকারের বিরুদ্ধে নীতিপঙ্গুত্বের অভিযোগ ভুল। দাবি করলেন, মন্ত্রিসভার বিনিয়োগ সংক্রান্ত কমিটি ৫ লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্পে ছাড়পত্র দিয়েছে। দিল্লি-মুম্বই শিল্প করিডরের মতো পরিকাঠামো প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এ বার শিল্পপতিরা বিনিয়োগ শুরু করলেই হয়।
এ সব কথা কিন্তু মানতে চাননি ওয়াই কে মোদীর মতো শিল্পপতি। তাঁরা সাফ বলেছেন, “ভারতের বিনিয়োগ চাই বলেই লগ্নি করব না। আমি লগ্নি করব আমার সংস্থা আর তার শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থে। তাতে যদি বিদেশে লগ্নি করতে সুবিধা হয়, তা হলে সেটাই করব।”
সরকারের বিরুদ্ধে শিল্পমহলের এই ক্ষোভ আর কটাক্ষকেই আজ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন অরুণ জেটলি। ফিকি-র মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “মনমোহন-সরকারের বিরুদ্ধে দেওয়াল লিখন স্পষ্ট। এখন এই সরকারের পক্ষে আর কোনও কাজ করা সম্ভব নয়।” কেন? তার জবাবও দিয়েছেন জেটলি: “গত দশ বছরে একটাই শিক্ষা। কোনও অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এ দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না। তাঁকে দলের, সরকারের ও দেশের মানুষের স্বাভাবিক নেতা হতে হবে।” এখন প্রশ্ন, রাহুল কি সেই ‘স্বাভাবিক নেতা’ হতে পেরেছেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সেটা সময়ই বলবে।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.