|
|
|
|
মুজফফরনগর গিয়ে বার্তা দিলেন রাহুল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২২ ডিসেম্বর |
চার রাজ্যে বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলে দলকে চাঙ্গা করতে পুরোদস্তুর মাঠে নেমে পড়লেন রাহুল গাঁধী। কাল, সোমবার বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২০০ প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করে তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা শুনবেন তিনি। তার আগে আজ আচমকাই গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে বিধ্বস্ত উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরে গিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন। দুর্গতদের পাশে না দাঁড়ানোর অভিযোগ তুলে অখিলেশ সিংহ যাদবের সরকারকে যেমন বিঁধলেন, তেমনই সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের প্রসঙ্গ তুলে নাম না-করেই কাঠগড়ায় তুললেন বিজেপি-কে।
এ দিন রাহুলের শরীরী-ভাষা এবং বক্তব্যে স্পষ্ট, আসন্ন ভোটযুদ্ধে সামনে থেকেই কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দিতে তৈরি হচ্ছেন তিনি। কংগ্রেসের অনেকে এ-ও বলছেন যে, ভোট বিপর্যয়ের পরে ‘টিম-রাহুল’-এর উপযোগিতা নিয়ে দলের অন্দরেই যে প্রশ্ন উঠেছিল, এ দিন তারও জবাব দিতে চেয়েছেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি।
রাহুলের এ দিনের সফরসঙ্গী ছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরপিএন সিংহ এবং এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন মিস্ত্রি। সকালে শামলির মালাকপুর শিবির হয়ে একে একে খুরগান, বরনভি-সহ বারোটি শরণার্থী শিবির ঘুরে দেখেন রাহুলরা। শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন দীর্ঘক্ষণ।
চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে মুজফফরনগরে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রাণ হারান অন্তত ৬০ জন। ভয়, আতঙ্কে ঘরছাড়া হয়েছেন চল্লিশ হাজারেরও বেশি মানুষ। গত চার মাস ধরে ত্রিপলের তৈরি অস্থায়ী শিবিরগুলিতেই রাত কাটাচ্ছেন তাঁরা। এই মুহূর্তে শিবিরগুলিতে প্রায় চার হাজার দুর্গত রয়েছেন। অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসন ঠিক মতো খাবার এমনকী জলও সরবরাহ করছে না। |
|
রবিবারও ছুটি নেই। রাহুল মুজফফরনগরের ত্রাণ শিবিরে। ছবি: পিটিআই। |
কনকনে ঠান্ডায় মৃত্যু হচ্ছে একের পর এক শিশুর। এ বার তাই ঘরে ফিরতে চান তাঁরা। রাহুল আজ বলেছেন, “এখানকার পরিস্থিতি সত্যিই খুব খারাপ। এখানে শিশুদের মৃত্যু ঘটছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের।”
এ দিনের সফর অবশ্য আগাগোড়া নিষ্কণ্টক ছিল না। রাহুলকে সামনে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে বহু মানুষ। কাঁধলায় রাহুলের কনভয় আটকে দেওয়া হয়। কালো পতাকাও দেখানো হয় তাঁকে। কংগ্রেস সূত্রের অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, রাহুলকে যাঁরা কালো পতাকা দেখিয়েছেন, তাঁরা সমাজবাদী পার্টির সমর্থক।
শরণার্থী শিবির ঘুরে রাহুল বলেন, “উত্তরপ্রদেশে এক জন তরুণ মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন। আমি তাঁর কাছেও দরবার করছি, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ফিরিয়ে আনতে।” কংগ্রেসের মতে, এই বক্তব্যের মাধ্যমে রাহুল স্পষ্ট করে দিতে চেয়েছেন যে কেন্দ্র নয়, আইনশৃঙ্খলা রাজ্যেরই বিষয়। এবং প্রশাসনের দায়িত্ব সামাল দেওয়ার প্রশ্নে সমাজবাদী পার্টির সরকার যে ব্যর্থ, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। রাহুলের আক্রমণের জবাব দিতে অবশ্য সময় নেননি অখিলেশ সিংহ যাদব। তিনি বলেছেন, “আমরা যে কোনও পরামর্শ শোনার জন্যই প্রস্তুত আছি। কিন্তু সেটা যদি রাজনৈতিক স্বার্থে করা হয়, তা হলে আমাদের কিছু করার নেই।”
নাম না-করে রাহুল আজ বিঁধেছেন বিজেপি-কেও। বলেছেন, “রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য গোষ্ঠী সংঘর্ষের আবহ জিইয়ে রাখতে চায় কিছু মানুষ। তারা চায়, আপনারা শিবিরেই থেকে যান। কারণ এতে আখেরে লাভ তাদেরই।” এ দিন তিনি রাজবীর বলে দাঙ্গায় হত এক জাঠ যুবকের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেন। ঘটনা হল, এই এলাকাটিতে দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ জাঠ নেতা অজিত সিংহের ভাল প্রভাব থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে এখানে প্রভাব বাড়ছে আর এক জাঠ নেতা মহেন্দ্র সিংহ টিকায়েতের। যিনি আবার বিজেপি-ঘনিষ্ঠ। কংগ্রেসের অভিযোগ, এখানে গোষ্ঠী সংঘর্ষের পিছনে বিজেপি-র উস্কানি রয়েছে। কারণ মেরুকরণ হলে আখেরে ফায়দা পাবে বিজেপি-ই। অনেকেই বলছেন, জাঠ-ভোটের অঙ্ক মাথায় রেখেই এ দিন দাঙ্গা-দুর্গতদের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি দাঙ্গার বলি জাঠ যুবকের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেছেন রাহুল। কারণ, জাঠ ভোট হাতছাড়া হলে উত্তর ভারতের বেশ কিছু আসনে সমস্যায় পড়বে কংগ্রেস। ঘটনাচক্রে এ দিনই সনিয়া গাঁধী দিল্লিতে জাঠদের এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করেন।
|
পুরনো খবর: বিকাশের কথা বলেও সেই খয়রাতির ফাঁদে রাহুল |
|
|
|
|
|