কখনও পাখির খাঁচায় লুকিয়ে আনা হচ্ছে জাল নোট। কখনও তা থাকছে জুতোর সুখতলায়। অনেক সময় আবার বাংলাদেশে চাষ করে ফেরার পথে সেচের পাইপের ভিতরে জাল নোট ঢুকিয়ে আনা হচ্ছে এ-পারে।
বাংলাদেশ থেকে এ ভাবে জাল নোটের অবাধ আমদানি আটকাতে এ বার সে-দেশের সঙ্গে যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠন করছে ভারত। শুক্রবার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফের এডিজি বংশীধর শর্মা বলেন, “টাস্ক ফোর্স গড়ার জন্য একটি চুক্তি সই হয়েছে। তবে টাস্ক ফোর্স গঠন করতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে।”
বিএসএফ সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা দিয়ে নিয়মিত জাল নোট ঢুকছে ভারতে। বেশির ভাগই ঢুকছে কালিয়াচক এলাকা দিয়ে। শর্মা জানান, ইদানীং শিলং সীমান্ত দিয়েও জাল নোট ঢুকছে ভারতে। নিয়মিত নোট বাজেয়াপ্ত করছে বিএসএফ। বৃহস্পতিবার রাতে বনগাঁ এলাকায় সুটিয়ার কাছে বেআইনি ভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার সময় বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে যায় সবুজ মল্লিক নামে এক যুবক। তার বাড়ি যশোহর জেলায়। ধৃতের কাছে ৩০০টি জাল ৫০০ টাকার নোট পাওয়া গিয়েছে। সব মিলিয়ে দেড় লক্ষ টাকা। এই নিয়ে গত ১১ মাসে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে ৭০ লক্ষ টাকার জাল নোট বাজেয়াপ্ত করা হল। মালদহের কালিয়াচক ছাড়াও বনগাঁ, নদিয়া, মুর্শিদাবাদের সীমান্ত থেকেও জাল নোট বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে বলে জানান এডিজি (বিএসএফ)।
এক পুলিশ অফিসারের কথায়, “২০১৩ সালে সারা দেশে কয়েক কোটি টাকার জাল নোট ধরা পড়েছে। দেখা যাচ্ছে, তার পুরোটাই ঢুকেছে পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে।” জাল নোট-সহ যারা ধরা পড়ছে, তাদের প্রায় সকলেই ‘ক্যারিয়ার’। জেরার মুখে ধৃতেরা কবুল করেছে, তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে তারা এই কাজ করে। অনেক সময়েই ও-পার থেকে ছুড়ে জাল নোটের প্যাকেট ফেলে দেওয়া হচ্ছে এ-পারে। ফোনে জায়গার হদিস দিলে ক্যারিয়ারেরা গিয়ে প্যাকেট কুড়িয়ে নিচ্ছে।
গোয়েন্দারা জানান, জাল নোটের আসল কারবারিরা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে বসে থাকে। তারা প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। শর্মা বলেন, “চক্রের চাঁইদের কব্জায় আনতেই আমরা দু’দেশের মধ্যে টাস্ক ফোর্স চেয়েছি। শুনেছি, দিন চারেক আগেই চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে তিন কোটি টাকার ভারতীয় জাল নোট-সহ ধরা পড়েছে এক কারবারি। তার কাছ থেকে কিছু তথ্য পেলে আমাদের সুবিধা হত।” তাঁর মতে, জাল নোটের ক্যারিয়ারদের ধরে যদি দৃষ্টান্তমূলক সাজার ব্যবস্থা করা যায়, তা হলেও এই দুষ্কর্ম অনেকটা কমবে।
শুক্রবারেই জাল নোটের একটি মামলায় পিয়ারউল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আলিপুর আদালত। সরকারি আইনজীবী অলোক দত্তচৌধুরী জানান, পিয়ারউল মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল আলিপুর থানা এলাকারই একটি দোকান থেকে কিছু জিনিসপত্র কিনে এক হাজার টাকার দু’টি নোট দেয় সে। নোট দেখে দোকানদারের সন্দেহ হওয়ায় পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ পিয়ারউলের কাছে ৪৮টি এক হাজার টাকার জাল নোট পায়।
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, ধৃত ব্যক্তিও জাল নোটের ক্যারিয়ার। আলিপুর আদালতের সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক শশিকলা বসু এ দিন কারাদণ্ডের সঙ্গে পিয়ারউলের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানাও করেন। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছ’মাস জেল খাটতে হবে আসামিকে। |