যে দূরত্ব যেতে ঘণ্টা দু’য়েক লাগার কথা, তা পেরোতে লাগছে পাঁচ-ছ’ঘণ্টা।
গত ন’মাস ধরে উত্তর দিনাজপুর জেলার রূপাহার থেকে ডালখোলা ৬০ কিমি ৩৪ নম্বর জাতীয় বেহাল। প্রতিদিনই রায়গঞ্জ ও করণদিঘি ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাক ও বাস বিকল হয়ে পড়ছে। যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিদিনই আট থেকে দশ ঘণ্টার আগে জাতীয় সড়ক পুরোপুরি যানজট মুক্ত হচ্ছে না বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এর জেরে ভোগান্তি হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের।
দু’সপ্তাহ ধরে রায়গঞ্জের পানিশালা থেকে ডালখোলা ৪০ কিলোমিটার জাতীয় সড়কে দিনভরই তীব্র যানজট থাকছে। যানজটের জেরে পুলিশদেরও ঘটনাস্থলে রিকভারি ভ্যান নিয়ে গিয়ে বিকল ট্রাক সরানোর কাজ করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। যাত্রীরা জানান, রায়গঞ্জ-ডালখোলা যেতে ঘণ্টা দু’য়েক সময় লাগলেও ৬-৭ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। রায়গঞ্জের কুমারডাঙ্গি এলাকার বাসিন্দা গুলজার হোসেন ডালখোলা ভূষামণি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তাঁর কথায়, “দু’সপ্তাহ ধরে রায়গঞ্জ থেকে বাসে চেপে স্কুলে যাতায়াত করতে গড়ে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে। খুব ভোরে রওনা হয়ে সঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছতে পারলেও ফিরে আসতে অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে।” |
রূপাহার থেকে ডালখোলা যাওয়ায় পথে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে যানজট।
বুধবার দুপুরে ছবি তুলেছেন তরুণ দেবনাথ। |
এপ্রিল মাস থেকে জাতীয় সড়ক বেহাল। পিচের চাদর উঠে গিয়ে চষা জমির চেহারা নিয়েছে। দক্ষিণবঙ্গ তথা দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে উত্তরপূর্ব ভারতের সড়ক যোগাযোগের প্রধান ভরসা এই সড়ক। একেই বেহাল রাস্তা তার উপরে ভারি যানবাহনের চাপে গত দু’সপ্তাহ ধরে জাতীয় সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বাস ও ট্রাক মিলিয়ে প্রতিদিন ১০টিরও বেশি গাড়ি বিকল হয়ে পড়ায় পরিবহণ মালিকেরা লোকসানের মুখে পড়ছেন। জেলা বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক চন্দ বলেন, “বেহাল জাতীয় সড়কে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিনই বহু বাস ও ট্রাক বিকল হচ্ছে। মালিকরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। জাতীয় সড়কে প্রতিদিন দীর্ঘক্ষণ যানজটের জেরে বাস ও ট্রেকার সময়ে গন্তব্যে যেতে পারছে না।” পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক শঙ্কর কুণ্ডুর হুমকি, “তিন মাসে মেরামতির কাজ শেষ না হলে পরিবহণ মালিকদের সঙ্গে যৌথভাবে ধর্মঘট ডাকা হবে।”
জাতীয় সড়ক মেরামতির দাবিতে চার মাস ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় পরিবহণ মালিক ও ব্যবসায়ীদের টানা অবরোধে অক্টোবরে কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে মেরামতির জন্য প্রায় ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। ২২ নভেম্বর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা সড়ক মেরামতির বরাত ও ২ ডিসেম্বর কাজের ওয়ার্ক অর্ডার পায়। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ মালদহ বিভাগের প্রকল্প অধিকর্তা মহম্মদ সইফুল্লা বলেন, “যুদ্ধকালীন তৎপরতায় জাতীয় সড়ক মেরামতির কাজ চলছে। ঠিকাদারকে আগামী তিনমাসের মধ্যে মেরামতির কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।” |