জমি জটে আটকে আছে তুফানগঞ্জের নবোদয় স্কুলের ভবন নির্মাণের কাজ। ছ’বছর ধরে তুফানগঞ্জ কলেজের ছাত্রী আবাসে অস্থায়ী ভাবে নবোদয় বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন চলছে। স্থায়ী ভবন না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন সমস্যায় তেমনই সঠিক পরিকাঠামোর অভাবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি চালু করতে পারছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষও।
এ নিয়ে অভিভাবক মহলে ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়ায় সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের কর্তারা তুফানগঞ্জে এক বৈঠক করেন। জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “সমস্যার কথা জানি। প্রথমে যে জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল, সেখানেই স্থায়ী ভবন তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির সঙ্গে শীঘ্রই দ্বিতীয় দফায় চিহ্নিত জমি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।”
প্রশাসন আর স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালে অস্থায়ী ভাবে তুফানগঞ্জে ওই নবোদয় বিদ্যালয় চালু হয়। ২০০৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে তুফানগঞ্জ কলেজের নবনির্মিত ছাত্রী আবাসে তা স্থানান্তর করা হয়। বিদ্যালয়ের স্থায়ী ভবন না হওয়ায় কিছু ঘরে গাদাগাদি করে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ১৬০ ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে স্কুল চলছে। পড়ুয়াদের অভিভাবকদের একাংশ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রম চালুর দাবি জানালেও স্রেফ পরিকাঠামোর অভাবে তা করা সম্ভব হচ্ছে না বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এ দিকে, তুফানগঞ্জ কলেজ কর্তৃপক্ষও ছাত্রীদের জন্য তৈরি হস্টেল চালু করতে পারছেন না। কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় এই ব্যাপারে বলেন, “নবোদয়ের স্থায়ী ভবন তৈরি করতে এতটা সময় লাগবে ভাবিনি।”
ঠিক কী ধরনের জমি জটিলতায় বিতর্কের সূত্রপাত? প্রশাসনিক সূত্রের খবর, তুফানগঞ্জে কালীবাড়ি এলাকায় নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির অধীন ৩৬ একর জমি রয়েছে। এলাকার পশ্চিম দিকের এক প্রান্তের ১০ একর জমি প্রাথমিক ভাবে নবোদয় বিদ্যালয়ের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু ওই ভবন তৈরির কাজ শুরুর আগেই সরকারি নির্দেশিকা জারি করে জমির প্লট বদলে নবোদয় বিদ্যালয়ের জন্য জমির মাঝখানে প্রায় ১০ একর জমিতে স্থায়ী ভবন করার সিদ্ধান্ত হয়। নির্দেশিকা অনুযায়ী চিহ্নিত জমিতে বিদ্যালয় ভবন করা হলে নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির কালীবাড়ি হাটের সমস্যা হবে বলে দাবি করে এলাকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা আন্দোলনে করেন। ফলে কাজ শুরু করা যায়নি। রাজ্যে ক্ষমতায় পালাবদলের পর ওই সমস্যা মেটানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। সম্প্রতি প্রশাসনিক বৈঠকে প্রথম দফায় পশ্চিম দিকের এক প্রান্ত থেকে ১০ একর জমি নবোদয়ের ভবনের জন্য নির্দিষ্ট হয়। রাজ্যের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “প্রথম দফায় চিহ্নিত জমিতে নবোদয়ের ভবন করা গেলে স্কুলের পরিবেশ ঠিক থাকবে, তেমনই হাটের ব্যবসায়ীদের সমস্যা হবে না। জনমতকে সম্মান জানিয়েই আমরা বিতর্কিত জমি বদলে স্থায়ী ভবন করার পরিকল্পনা করেছি।” নবোদয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জগদীশ চন্দ্র কালুয়াব বলেন, “জমি সংক্রান্ত সমস্যাই স্থায়ী ভবন তৈরি না হওয়ার মূল কারণ। প্রশাসন সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী। এটা ভাল কথা। কোনও প্রস্তাব এলেই তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।” তুফানগঞ্জ নবোদয় বিদ্যালয় কমিটির সদস্য শুভময় সরকার বলেন, “প্রশাসনিক গাফিলতির কারণে স্থায়ী ভবনের জন্য চিহ্নিত জমিতে ভবন তৈরি করা যায়নি। ভবন তৈরি না হওয়া পর্যন্ত তাই চিন্তা থেকে যাচ্ছে।” |