টাকা না আসায় মানবাজার ১ ব্লকে স্কুল পড়ুয়াদের দুপুরের খাবার বন্ধ হওয়ার মুখে। এর মধ্যেই কিছু স্কুলে মিড-ডে মিল রান্না বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অবিলম্বে মিড-ডে মিলের টাকা না এলে এই ব্লকের অন্য স্কুলগুলিতেও দুপুরের রান্না বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষকদের একাংশ।
মানবাজারের গোবিন্দপুর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতাভ মিশ্রের অভিযোগ, “জুলাই মাস থেকে মিড-ডে মিলের টাকা মেলেনি। বিভিন্ন দোকানে এত দিন ধারে মালপত্র কেনাকাটা করা হচ্ছিল। কিন্তু ছোট দোকানদাররা আর ধারে মাল দিতে চাইছেন না। অবিলম্বে টাকা না পেলে স্কুলে দুপুরের রান্না চালু রাখা সমস্যার হবে।” অক্ষয়পুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুভাষ বন্দ্যোপাধ্যায়, দোলদেড়া স্কুলের শিক্ষক বাবলু কুণ্ডু বলেন, “রাঁধুনীরা আট মাস টাকা পাননি। সব্জি ও মশলার দোকানে ছ’মাস ধার পড়ে রয়েছে। এরপর ধার চাইতে আমাদের লজ্জা করছে।” মানবাজার ১ বিডিও সায়ক দেব বলেন, “এপ্রিল মাস থেকে টাকা মেলেনি। যদিও এপ্রিল, মে ও জুন এই তিন মাসের টাকা ব্লক অফিস থেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।” তাঁর আশ্বাস, শীঘ্রই মিড-ডে মিলের টাকা ঢুকে যাবে।”
মানবাজার ১ ব্লকের মতো মিড-ডে মিলের সমস্যা ততটা না ছড়ালেও হুড়ার এক শিক্ষককে শারীরিক নিগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে রাঁধুনীদের বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। হুড়া ৩ চক্রের বাঁদরটাঙা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাবুনাথ হাঁসদার অভিযোগ, “ছ’মাস ধরে মিড-ডে মিলের ও রাঁধুনীদের টাকা পাচ্ছি না। এ জন্য সম্প্রতি স্কুল চলাকালীন রাঁধুনীদের পরিবারের লোকেরা আমাকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করে। ঘটনার কথা অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে জানিয়েছি। টাকা না আসায় স্কুলে যেতে ভয় করছে।”
হুড়া ৩ চক্রের দায়িত্বে থাকা বিদ্যালয় পরিদর্শক বিদ্যাপতি পতি বলেন, “ওই স্কুলে একটা সমস্যা হয়েছিল। স্থানীয় ভাবে তা মিটে গিয়েছে।” হুড়ার বিডিও সুব্রত পালিত বলেন, “কয়েকদিন আগে স্কুলগুলির মিড-ডে মিলের টাকা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আপাতত অক্টোবর মাস পর্যন্ত টাকা দেওয়া হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে শিক্ষকরা বাকি টাকা পেয়ে যাবেন।”
নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক অনিল মাহাতোর অভিযোগ, “বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাওয়া বা এ কারণে শিক্ষক নিগ্রহের মতো ঘটনা ঘটেনি।” যদিও তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি সমীরণ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “জেলায় মানবাজার ও কাশীপুর ব্লকের শিক্ষকরা এপ্রিল মাস থেকে মিড-ডে মিলের টাকা পাননি। তবে অন্য ব্লকে এই সমস্যা নেই। কী কারণে শিক্ষকরা টাকা পাননি আমরা সংগঠনগত ভাবে তা খোঁজ নিচ্ছি।” মানবাজার ১ বিডিও-র দাবি, “জেলায় এই খাতে টাকা না আসায় সমস্যা হয়েছে।” তবে প্রশাসনের কিছু আধিকারিক থেকে প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনগুলি মিড-ডে মিলের এই সমস্যার কথা স্বীকার করলেও জেলা মিড-ডে মিল প্রকল্পের ওসি সঞ্জয়কুমার বিশ্বাসের দাবি, “পুরুলিয়া জেলার সর্বত্র মিড-ডে মিল চলছে। কোথাও এ নিয়ে সমস্যা হয়েছে বলে জানা নেই।” |