পরনে প্যান্ট ও ফুল হাতা জামা। গলায় টাই। এক হাতে কালো অফিস ব্যাগ, অন্য হাতে একটি ডায়েরি। মাথার চুল ছোট করে কাটা। বছর ছত্রিশের সন্ময় দাসকে দেখলে যে কেউ বেসরকারি সংস্থার আধিকারিক বলে ভুল করবেন। সে রকমই ভুল করেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার হাবরার মছলন্দপুরের বাসিন্দা প্রদীপ সেন। বেসরকারি সংস্থার কর্মী বলে নিজের পরিচয় দিয়ে ঋণ লাগবে কি না তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিল সন্ময়। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার টাকা দরকার ছিল। তাই সহজেই রাজি হয়ে যান তিনি। ২৫ নভেম্বর তাঁর যাবতীয় নথিপত্রের প্রতিলিপি সই করে সন্ময়কে দেন তিনি, ঋণের আশায়। কিন্তু তার পর থেকেই মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায় সন্ময়ের। দু’দিন পরে সন্দেহ হওয়ায় নিজের ব্যাঙ্কে গিয়ে অ্যাকাউন্টের হিসেব দেখতে চাইলে দেখা যায়, অ্যাকাউন্ট থেকে তাঁর তাঁর নামে ১৯ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। তাঁর সই জাল করা হয়েছে চেকে। পিছনে সই করেছেন অপরিচিত কেউ। মছলন্দপুর পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ করেন তিনি। মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় উলুভাঙা এলাকা থেকে সন্ময়কে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রামের মানুষকে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁদের সব তথ্য জোগাড় করে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নিত সন্ময়। পুলিশকে সে জানিয়েছে, একাই এই কাজ করত সে। সঙ্গে অন্য কেউ ছিল না। পুলিশ জানিয়েছে, আগে নিজের পরিচিত এলাকার বাইরে সন্ময় প্রতারণাচক্র চালাত। মাস ছয়েক আগে সে নিজের পরিচিত এলাকায়, বিশেষত হাবরার মছলন্দপুর, ফুলতলা এলাকায় তার কারবার শুরু করেছিল। ফলে সহজেই তাকে ধরতে পেরেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস দুয়েক আগে ফুলতলার মুদির দোকানি প্রদীপ সেনের বাড়িতে হাজির হয় সন্ময়। একটি নামী বেসরকারি সংস্থার সেলস ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দেয় সে। জানায়, গ্রামীণ এলাকায় ঋণের প্রয়োজন রয়েছে কি না, তা জানতে গ্রামে গ্রামে সমীক্ষা করছে সে। গ্রামীণ মানুষকে আর্থিক সহায়তা দেওয়াই তাদের সংস্থার কাজ। যার যেমন প্রয়োজন, সেই মতো কম সুদে ঋণ দেয় তারা।
প্রদীপবাবু জানান, সামনের ২১ জানুয়ারি তাঁর বড় মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। তাঁর টাকার প্রয়োজন ছিল। ঋণের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান তিনি। সন্ময় তাঁকে এক লক্ষ টাকা ঋণ দেবে বলে জানায়। দু’মাসে বেশ কয়েকবার তাঁর বাড়িতে এসেছিল সন্ময়। ২৫ নভেম্বর সচিত্র ভোটারকার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড, ব্যাঙ্কের পাশ বইয়ের ফোটো কপিতে সই করে তিনি সঞ্জয়কে দেন। তার সঙ্গে সই না করা একটি সাদা চেক ও রঙিন ছবিও সঞ্জয় তাঁর কাছ থেকে নিয়ে যায়। প্রদীপবাবু জানান, ২৫ তারিখ নথি নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই সঞ্জয়কে ফোনে পাচ্ছিলেন না তিনি। ২৯ তারিখ তাঁর সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল সন্ময়ের। কিন্তু সে দিনও সন্ময়ের ফোন বন্ধ পান তিনি। সন্দেহ হওয়ায় নিজের ব্যাঙ্কে খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ১৯ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রদীপবাবু বলেন, “খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ওই ব্যাঙ্কের কলকাতা শাখা থেকে টাকা তোলা হয়েছে। চেকে আমার সইটি জাল। যে চেকে টাকা তোলা হয়েছে, তার উল্টো পিঠে এ মোহান্ত নামে কারওর সই রয়েছে।” এর পরেই মছলন্দপুর পুলিশ ফাঁড়িতে সন্ময়ের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেন তিনি।
শুধু প্রদীপবাবুই নন, ফুলতলা এলাকার আরও ৯ জনের কাছে ঋণের প্রস্তাব দিয়েছিল সন্ময়। তাঁদের কাছ থেকেও নথিপত্র, ছবি ও সাদা চেক নিয়ে গিয়েছে সে। তবে প্রদীপবাবুর ঘটনা জানাজানি হতেই ওই ন’জন, অ্যাকাউন্ট থেকে সব টাকা তুলে নিয়েছেন বলেই জানিয়েছেন। পুলিশ জানায়, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। চক্রের সঙ্গে অন্য কেউ যুক্ত থাকলে তাঁদেরও গ্রেফতার করা হবে।
|