ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট না থাকায় বেনিফিশিয়ারিদের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পেতে সমস্যা হচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে এই সমস্যার কারণে কয়েকশো পরিবার ইন্দিরা আবাস যোজনার টাকা পাননি। এঁদের অধিকাংশই সংখ্যালঘু। ব্যাঙ্কগুলির দাবি, অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ওই সব বেনিফেশিয়ারির দেওয়া কাগজপত্র নিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়াতেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, “ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।”
সম্প্রতি বাসন্তী ব্লকে ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে ১ হাজার ৭৪৯ জনের নামে ঘর তৈরির টাকা এসেছে। এর মধ্যে ৪০২ জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকায় তাঁদের সেই বরাদ্দ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৩৪৭ জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকায় তাঁরা সেই বরাদ্দ পাননি। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাসন্তীতে জনসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ৭৮ হাজার। ব্লকে ব্যাঙ্ক বলতে দু’টি, স্টেট ব্যাঙ্ক ও ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক। প্রয়োজনীয় সংখ্যায় ব্যাঙ্ক না থাকার জন্য অ্যাকাউন্ট খুলতে না পারায় বেনিফিশিয়ারিদের কাছে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না। ইন্দিরা আবাস যোজনা, ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তির টাকা, সংখ্যালঘুদের বৃত্তি, কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পগুলিতে সমস্যা হচ্ছে।
|
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের সুপারিশ অনুসারে জনসংখ্যার হার অনুপাতে এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা খোলার কথা। সেই নিয়মানুসারে বাসন্তীতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যাঙ্ক না থাকায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের তরফে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জয়নগরের এসইউসি সাংসদ তরুণ মণ্ডল বলেন, “ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সরকারি সমস্ত প্রকল্পের টাকা প্রদান করা হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা ব্লকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যাঙ্ক না থাকায় গরিব মানুষকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাঁরা তাঁদের জন্য বরাদ্দ টাকা পাচ্ছেন না।” সমস্যাটি নিয়ে কেন্দ্রীয় অথর্মন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয় কাঁঠালবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মনসুরা শেখ, আসমা কাজি, রহিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত থেকে জানতে পারি যে ব্যাঙ্কে ইন্দিরা আবাসের টাকা এসেছে। টাকা পেতে গেলে ব্যাঙ্কে বই খুলতে হবে।” তাঁদের অভিযোগ, ‘‘ব্যাঙ্কে বই খুলতে গেলে বলা হয় নামের বানান মিলছে না তাই বই খোলা যাবে না। ফলে টাকা তুলতে পারছি না। টাকা পেলে নতুন ঘর তৈরি করতে পারতাম।”
বাসন্তী পঞ্চায়েত সমিতি সহকারী সভাপতি তৃণমূলের মাজেদ মোল্লা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যেখানে চাইছেন যে সমস্ত গরিব মানুষ সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান, সেখানে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার সমস্যার জন্য তা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে গরিব মানুষকে।”
অ্যাকাউন্ট খোলার সমস্যার বিষয়ে বাসন্তীর ভাঙনখালির স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিায়ার ম্যানেজার তড়িৎরঞ্জন হালদার বলেন, “রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রত্যেক গ্রাহককে কেওয়াইসি (নো ইওর কাস্টমার) ফর্ম পূরণ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে অনেকেরই ছবি, বাসস্থানের ঠিকানা ও নামের বানান ভুল। অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে যা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।” একই সঙ্গে তিনি জানান, প্রতিদিন অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য যে পরিমাণ আবেদন জমা পড়ছে তা সামাল দিতে ব্যাঙ্কে প্রয়োজনীয় সংখ্যায় কর্মী নেই। ফলে সমস্যা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও তাঁরা চেষ্টা করছেন যাতে গরিব মানুষ তাঁদের জন্য বরাদ্দ টাকা থেকে বঞ্চিত না হন।
গোসাবাতেও এই সমস্যা কারণে ৬৫০ জনের জন্য ইন্দিরা আবাসের টাকা এলেও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকায় ওই টাকা পেয়েছেন ৫৯২ জন। গোসাবার বিডিও সুমন চক্রবর্তী বলেন, “ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা নিয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে বলে শুনেছি। এ ব্যাপারে ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |