খবরটা শুনে বেশ অবাকই হয়ে গিয়েছিলাম। বরিস বেকারকে কোচ করে আনছে নোভাক জকোভিচ!
পাশাপাশি খবরটা আলাদা একটা তৃপ্তিও দিচ্ছে। আবার বেকার বনাম ইভান লেন্ডল লড়াই যে দেখতে পাব। তা সে যতই কোর্টের বাইরে হোক না।
নোভাক যেমন বেকারের সঙ্গে জুটি বাঁধছে, অ্যান্ডি মারে তো আগেই লেন্ডলকে কোচ হিসেবে নিয়েছে। আধুনিক দুই মেগাস্টারের পিছনে রয়েছে এক সময়কার দুই কিংবদন্তি। মারে বনাম জকোভিচ লড়াই এখন থেকে আলাদা একটা মাত্রা পেয়ে গেল।
বেকার বনাম লেন্ডল লড়াইটা কোর্টে কিন্তু সব সময় আকর্ষক হত, হাড্ডাহাড্ডি হত। হার-জিতের হিসাবটাও প্রায় গায়ে গায়ে। লেন্ডল ১২, বেকার ১০। কিন্তু কোর্টের বাইরের লড়াইয়ে কে এগিয়ে?
এক দিকে লেন্ডলের মতো সিরিয়াস, চুপচাপ, একরোখা স্বভাবের মানুষ। অন্য দিকে ছটফটে, বৈচিত্রময়, টেনিসের বাইরেও খবরে থাকা বেকার। ওদের কোচিং দর্শনেও দু’রকম ছায়া সম্ভবত দেখা যাবে। লেন্ডলকে তো আমরা দেখেইছি। অন্তরালে থেকে কী ভাবে মারেকে তুলে এনেছে টেনিস দুনিয়ার চূড়োয়। কোচ হিসাবে লেন্ডলের দৌড় শুরু হয়ে গিয়েছে। বেকার এখনও স্টার্টিং লাইনে দাঁড়ায়নি। কিন্তু তা বলে লেন্ডলের থেকে বেকার পিছিয়ে থাকবে, এমন ভাবাটা কিন্তু ঠিক নয়। |
বেকার বনাম লেন্ডল |
|
|
গ্র্যান্ড স্লামে বেকার এগিয়ে ৫-১ |
মোট ২২ বার লড়াইয়ে
লেন্ডল এগিয়ে ১২-১০। |
বেকার জয়ী
’৮৬ উইম্বলডন ফাইনাল,
’৮৮ ও ’৮৯ উইম্বলডন সেমিফাইনাল,
’৮৯ যুক্তরাষ্ট্র ওপেন ফাইনাল,
’৯১ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ফাইনাল। |
লেন্ডল জয়ী
’৯২ যুক্তরাষ্ট্র ওপেন
চতুর্থ রাউন্ডে |
কার্পেট কোর্টে
লেন্ডল এগিয়ে ৭-৪
হার্ড কোর্টে দু’জনেই ৩টি করে ম্যাচ জিতেছেন
গ্রাস কোর্টে বেকার এগিয়ে ৩-১
ক্লে কোর্টের একমাত্র ম্যাচে
’৮৫ ইন্ডিয়ানাপোলিসে সেমিফাইনালে
লেন্ডল (৫-৭, ৬-২, ৬-২) হারান বেকারকে। |
|
বরং আমি বলব, লেন্ডলের থেকে কোচ হিসাবে এগিয়েই থাকবে বেকার।
কেন এমন বলছি? আসলে কোচ হিসেবে ওদের সাফল্য-ব্যর্থতা তো পুরোপুরি ওদের হাতে নয়, দুই ছাত্রের পারফরম্যান্সের উপরই নির্ভর করবে। যে প্লেয়ার জিতবে, তার কোচই ভাল ব্যাপারটা এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে। আর আগামী বছর নোভাক জকোভিচই আমার ঘোড়া। ও কেমন দৌড়য় দেখবেন। এই বছরটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম প্রাপ্তির দিক থেকে তেমন ভাল যায়নি বলেই পরের বছরে অসম্ভব খিদে নিয়ে নামবে। সে জন্যই বোধহয় ও বেকারকে নিজের দলে নিল। আসলে নোভাকের নেট গেম ও ভলিতে কিছুটা খামতি রয়েছে। শুধু মাত্র এই জায়গাটাতেই ও দুর্বল এবং এই ঘাটতিটুকু মেটানোর জন্যই সম্ভবত বেকারকে নিয়ে আসা।
এত দিন যে নোভাকের কোচ ছিল, সেই মারিয়ান ভাজদা যথেষ্ট ভাল কাজ করছিল। খবর পেলাম, ভাজদাও নোভাকের কোচিং টিমে থাকছে। বাকি যারা ছিল, তারাও কেউ ছাঁটাই হচ্ছে না। বরিস বোধহয় সারা বছর ধরে ওর সঙ্গে থাকবে ওইটুকু ঘাটতি মেটাতে। যাতে আগামী মরসুমে একেবারে নিখুঁত হয়ে কোর্টে নামতে পারে। নোভাক দেখলাম সেই কথা বলেছেও।
সার্কিটে এখন রাফায়েল নাদালের সঙ্গেই নোভাকের সবচেয়ে বড় লড়াই। মারেকে অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছি না। তবে ও এখন পিঠের ব্যথায় ভুগছে। সেটা সারিয়ে লড়াইয়ে ফিরতে হবে ব্রিটিশ তারকাকে। আমার বিশ্বাস, এই ব্যাপারে লেন্ডল দারুণ সাহায্য করবে মারেকে। ওর টিমে এটাই লেন্ডলের প্রধান কাজ। মারের ফিটনেস লেভেল ও বিগ ম্যাচ টেম্পারেমেন্ট-এর দিকটা দেখে লেন্ডল। ও কোচ হওয়ার পরে মারের অভাবনীয় উন্নতিও হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বলব, নোভাকের সঙ্গে নিয়মিত জেতার মতো নয়। |
নতুন গুরু বরিস বেকারের সঙ্গে নোভাক। —ফাইল চিত্র। |
নোভাকের টিমে বেকারের ভূমিকা সম্পুর্ণ আলাদা। খবরটা পাওয়ার পর ইন্টারনেটে দেখছিলাম, কয়েক জন টেনিস লিখিয়ে মন্তব্য করেছেন, মানসিক শক্তি বাড়ানোর জন্যই বোধহয় বেকারকে দলে নিয়েছে নোভাক। আমার কিন্তু তা মনে হয় না। মানসিক শক্তি কী ভাবে বাড়াতে হয়, ধরে রাখতে হয়, তা নোভাকের যথেষ্ট ভাল জানা আছে। বরং সামান্য যা টেকনিক্যাল ত্রুটি আছে, সেটাই মেরামত করে দেবে বেকার।
আরও একটা প্রশ্ন খুব উঠছে। শারাপোভা-কোনর্স জুটির মতো হাল হবে না তো বেকার-জকোভিচের? এটা ঠিক, দু’জন মহাতারকা যখন এক সঙ্গে হয়, ইগোর একটা লড়াই হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু বেকার এমন একটা মানুষ যে সবার সঙ্গে মিশে যেতে পারে। তাই মনে হয় আমরা একটা সফল জুটিই দেখতে পাব। |