ওয়ান ডে সিরিজে দুরমুশ হওয়ার পর তাঁর ব্যাটেই টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে ভারত। সচিন তেন্ডুলকরের জায়গায় প্রথম ব্যাট করতে নেমে ১১৯ রানের ইনিংসে ডেল স্টেইনদের শাসনই শুধু করেননি দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছেন। দিনের শেষে টেস্টে তাঁর পঞ্চম সেঞ্চুরির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিরাট কোহলি বলেন, “এই সুযোগটার অপেক্ষায় ছিলাম। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটিং অর্ডারে উপরে ওঠার অপেক্ষায়। কারণ, ওয়ান ডে-তে আমি তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামতে অভ্যস্ত। তাই টেস্টেও আগে ব্যাট করতে নামাটা পছন্দের। তার পর মাঠের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে বোলিং অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করি।”
এ দিন জো’বার্গে যে ভাবে পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পেরেছেন তাতে খুশি দিল্লির তারকা ব্যাটসম্যান। বলে দেন, “পরিকল্পনা ছিল ক্রিজে টিকে থাকার। বোলিং, মাঠের কন্ডিশন বা উইকেট এ সব নিয়ে তখন ভাবছিলাম না। শুধু নিজের পরিকল্পনাকে কাজে লাগানোর কথা ভাবছিলাম।” পাশাপাশি কোহলি আরও বলেন, “প্রথম ওয়ান ডে-র পর আমাকে নরম-সরম ব্যাটসম্যান ধরে নিয়েছিল ওরা। তবে এটা মাথায় ছিল আক্রমণ না করলে আমাদের শর্ট বোলিংয়ের মুখে পড়তে হবে। যদি ওরা এই পর্যায়ের ক্রিকেটে খেলার মতো দারুণ বোলার হয়ে থাকে আমরাও তো কম যাই না।” তাই দক্ষিণ আফ্রিকার পেস ব্যাটারিকে পাল্টা আক্রমণের কৌশল নেন কোহলি। কিন্তু কী ভাবে? নিজেই জবাবটা দিলেন, “খুব ভাল করে প্রতিটা বল দেখে খেলছিলাম। আগেই পজিশনে এসে ক’য়েকটা পুল স্ট্রোক চালাই। এর পরই ওরা পাঁচ বা ছ’নম্বর স্টাম্প লক্ষ্য করে বল করা শুরু করে দেয়। ওদের বডিলাইন স্ট্র্যাটেজি কোথায় গেল!”
দিনের আর এক নায়ক কোহলির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হলেও ব্যাপারটাকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে নারাজ। উল্টে কোহলির প্রশংসায় পঞ্চমুখ চেতেশ্বর পূজারা। “বিরাট দুরন্ত ব্যাটিং করেছে। আমাদের পার্টনারশিপটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল,” বলেন পূজারা। |
সেঞ্চুরির তৃপ্তি। ছবি: এপি। |
এ দিন শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে কিছুটা বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিল ভারত। দুই ওপেনার শিখর ধবন আর মুরলী বিজয় দলের ২৪ রানের মধ্যেই ফিরে যাওয়ার পর পূজারা আর বিরাটের তৃতীয় উইকেটে ৮৯ রানের পার্টনারশিপে ভর করে পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে ভারত। দিনের শেষে স্কোরবোর্ডে পাঁচ উইকেটে ২৫৫ রানের ভরসায় দ্বিতীয় দিন বড় রান করার আশায় ভারতীয় শিবির। পূজারা বলেন, “বিদেশের মাঠে বড় পার্টনারশিপ গড়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। দিনের শুরুর দিকে উইকেটে বাউন্স আর হাল্কা মুভমেন্ট থাকে। তাই আমাদের পরিকল্পনা ছিল যতক্ষণ সম্ভব উইকেটে টিকে থাকা। কারণ পরে বোলার ক্লান্ত হয়ে পড়লে ব্যাট করাটা কিছুটা সহজ হয়ে যাবে।”
এ দিন ২৫ রানে আউট হলেও দক্ষিণ আফ্রিকায় নামার আগে যে ভাবে প্রস্তুতি নিয়ছেন তাতে খুশি সৌরাষ্ট্রের ব্যাটসম্যান। “এই টেস্টে নামার আগে প্রস্তুতি আর সেটা মাঠে যে ভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছি তাতে খুশি,” বলেন তিনি।
কিংবদন্তি দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার অ্যালান ডোনাল্ড আবার ডেল স্টেইনদের বোলিংয়ে খুব একটা খুশি নন। “যে লাইন আর লেংথে বোলিং করা উচিত ছিল তুলনায় তার থেকে একটু শর্ট আর ওয়াইড বল করেছে স্টেইনরা। তবে ভারত এখনই ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার হাতের বাইরে নিয়ে গিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। পিচ থেকে আর একটু বেশি সাহায্য পাবে বোলাররা মনে হয়েছিল। মনে হয় যত খেলা গড়াবে পিচ তত সাহায্য করবে বোলারদের,” বলেন ডোনাল্ড। পাশাপাশি প্রাক্তন দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার আরও বলেন, “আমার মনে হয় দিনের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা ঠিক কোথায় ভুল হয়ছে সেটা ধরতে পারবে। আর পরের দিন নতুন বলে আক্রমণে ভুলটা শুধরে নেবে।”
লম্বা স্পেলে বল করায় গ্রেম স্মিথদের প্রধান অস্ত্র ডেল স্টেইনের ক্র্যাম্পের সমস্যা দেখা দিয়েছিল ফাঁস করেন ডোনান্ড। তবে তাঁর আশা দ্বিতীয় দিন ফিট হয়েই মাঠে নামতে পারবেন ‘স্টেইন গান’।
এ দিনই আবার টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে (৪৯ টেস্ট) টপকে গেলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। অধিনায়ক হিসেবে এই টেস্টই ধোনির ৫০তম। ৪৯ টেস্টে সৌরভের ২১ জয়কে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন আগেই ধোনি (২৬ জয়)। তবে বিদেশের মাঠে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে জয়ের পরিসংখ্যানে এখনও সৌরভ এগিয়ে। ২৮ টেস্টে সৌরভের জয় ১১টিতে। ধোনির সেখানে ১৯ টেস্টে জয় ৫। |