মোগলমারিতে মিলল স্বর্ণালঙ্কার, ধাতুর মুদ্রা
মোগলমারি প্রত্নস্থলের ইতিহাস আরও অন্তত একশো বছর পিছিয়ে গেল। এত দিন মনে করা হত, এই প্রত্নস্থল ষষ্ঠ-সপ্তম শতকের বৌদ্ধ বিহার। বুধবার সেখান থেকে একটি সোনার অলঙ্কার ও একটি মিশ্র ধাতুর মুদ্রা পাওয়া গিয়েছে। পুরাতত্ত্ববিদদের অনুমান, মুদ্রাটি গুপ্তযুগের শেষ আমলের। রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের উপ অধিকর্তা অমল রায় বলেন, “মুদ্রাটি পাওয়ার পরে এই বৌদ্ধ বিহারটি পঞ্চম-ষষ্ঠ শতকের বলে অনুমান করা হচ্ছে।” সেই সঙ্গেই, এই বৌদ্ধ বিহারটি বেশ সম্পন্ন ছিল বলেও মনে করছেন পুরাতত্ত্ববিদেরা।
দাঁতনের মোগলমারিতে চলছে খনন কাজ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক অশোক দত্ত এই প্রত্নস্থলের প্রথম উৎখনন করেছিলেন। তাঁর মত ছিল, জুয়ান জ্যাং বা হিউয়েন সাং প্রাচীন সমুদ্র বন্দর তাম্রলিপ্তের কাছাকাছি এলাকায় যে বৌদ্ধ বিহারগুলির কথা বলেছিলেন, মোগলমারির বিহারটি তারই অন্যতম। তবে জুয়ান জ্যাংয়ের আগে তাম্রলিপ্তে এসেছিলেন চিনা পরিব্রাজক ফা হিয়েনও। তখন দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সময়। ফা হিয়েন ৩৯৯-৪১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে ছিলেন। তিনি তাম্রলিপ্তে ছিলেন দু’বছর। তিনিও এই এলাকায় ২২টি বৌদ্ধ সঙ্ঘারাম ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের অধ্যাপিকা ঐশ্বর্যা বিশ্বাস বলেন, “সেই বিহারগুলির প্রত্যেকটিই ভিক্ষু অধ্যুষিত ও বেশ সম্পন্নই ছিল বলে মনে করা হয়। মোগলমারির বিহারটি তার অন্যতম হতেও পারে।”
প্রত্নস্থল থেকে বুধবার উদ্ধার হয়েছে এই ধাতব মুদ্রা (বাঁ দিকে ) ও সোনার লকেট (ডান দিকে)।
সেক্ষেত্রে পুরাতত্ত্ববিদদের ধারণা, বেশ কয়েকশো বছর ধরেই বিহারটির অস্তিত্ব ছিল। ষষ্ঠ শতকে শশাঙ্কের আমলেও বিহারটি বৌদ্ধ উপাসনাস্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠা ধরে রাখতে পেরেছিল। রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের উৎখনন থেকে সম্প্রতি দু’টি পর্যায়ের স্থাপত্য নিদর্শনও মিলেছে। অমলবাবু বলেন, “তার একটি পঞ্চম শতকের বলে অনুমান করা যাচ্ছে। অন্যটি ষষ্ঠ শতকের বলে সুনির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করা গিয়েছে।” সম্প্রতি পাওয়া গিয়েছে পঞ্চম-ষষ্ঠ শতকের দু’টি বুদ্ধ মূর্তিও। এখান থেকে পাওয়া মুদ্রাটির গায়ে পঞ্চম-ষষ্ঠ খ্রিস্টাব্দের ব্রাহ্মী লিপির একটি লেখ রয়েছে। মাটির প্রায় দেড় মিটার নীচে থেকে পাওয়া মুদ্রাটি লম্বায় ২.৩ সেন্টিমিটার, চওড়া .২৫ সেন্টিমিটার। মুদ্রার এক পিঠে এক পূর্ণাবয়ব যোদ্ধার ছবি রয়েছে। অন্য পিঠে রয়েছে উপবিষ্ট দেবীমূর্তি। বৌদ্ধ বিহারে কী করে ওই মুদ্রা বা অলঙ্কার এল? পুরাতত্ত্ববিদেরা জানাচ্ছেন, বিহারগুলিতে যাতায়াত ছিল বণিকদের। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠিত বিহারগুলিতে বণিকেরা রাতে আশ্রয় নিতেন। থাকতেন শ্রমণদের সঙ্গে। অনেক বিহার কর্তৃপক্ষ জমি স্বত্বও ভোগ করতেন। কর সংগ্রহ করা হতো। কখনও বিহারে আসত রাজার দান। বিহারে নানা দান উৎসর্গ করতেন সাধারণ মানুষও। সযত্নে রক্ষা করা হত সে সব। সে জন্য অনেক সময়ে বিহারে থাকত গুপ্ত কক্ষও। মুদ্রা ও অলঙ্কারটি সে ভাবেই এই বিহারে এসেছিল বলে পুরাতত্ত্ববিদদের অনুমান।

—নিজস্ব চিত্র।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.