নজরমিনারে দাঁড়িয়ে গণ্ডারের খুনসুটি দেখা, হাতির পিঠে ভ্রমণ কিংবা গরুর গাড়িতে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো এই সব ছিলই পর্যটকদের টানতে। এ বার ডুয়ার্সের পর্যটন মুকুটে আরও একটি পালক যুক্ত হল। বুধবার বন্যপ্রাণ দিবসে গাছ পুঁতে, প্লাস্টিকের জার থেকে প্রজাপতি উড়িয়ে ‘রামসাই বাটারফ্লাই গার্ডেন’ উদ্বোধন করেন বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। গরুমারা লাগোয়া ময়নাগুড়ির রামসাই এলাকায় নানা প্রজাতির প্রজাপতিদের এই মুক্ত-উদ্যান গড়ে তুলেছে বন দফতর। একটি তার জালে ঘিরে ফেলা জায়গায় প্রজাপতিদের পছন্দের বিভিন্ন ফুল আর ফলের চারা রোপণ করা হচ্ছে। রাইনো ক্যাম্পের পাশে বন দফতরের কাউন্টারের পিছন দিকে এক একর জমিতে গড়ে উঠেছে ‘ওপেন বাটারফ্লাই পার্ক’। বনমন্ত্রী বলেন, “জঙ্গলের উপরে চাপ কমাতে প্রজাপতি উদ্যানের মত প্রকল্পগুলি গড়ে তোলা হচ্ছে। রামসাই এলাকায় আরও কয়েকটি প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য জেলাশাসকের কাছে জলঢাকা নদী সংলগ্ন এলাকায় জমি চাওয়া হয়েছে।” |
রামসাই প্রজাপতি উদ্যান উদ্বোধন করেন বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন।—নিজস্ব চিত্র। |
বন দফতর সূত্রে জানা যায়, যে সমস্ত গাছ উদ্যানে লাগানো, সেগুলি বড় হতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে। এর পরেই পর্যটকরা খুব সহজে প্রজাপতির জীবন চক্র দেখার সুযোগ পাবেন। এখনও যথেষ্ট প্রজাপতি উদ্যানে রয়েছে। বনকর্তারা জানান, তবে ওদের বাসা, ডিম খুঁজে দেখতে হবে। এক বছর পরে পর্যটকদের টিকিট কাটতে হবে। প্রজাপতির ছবি তোলার জন্য আলাদা করে খরচ গুনতে হবে। জলপাইগুড়ির ডিএফও (বন্যপ্রাণ) সুমিতা ঘটক বলেছেন, “জঙ্গলের পাশে থাকায় শুরুতেই ওই পার্কে প্রজাপতির ডিম মিলেছে। এটা খুবই ভাল লক্ষণ। আশা করছি আগামী বছর পর্যটকরা এখানে এসে প্রজাপতি সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবেন।”
প্রজাপতির এই সংসার সাজাতে মুক্ত-উদ্যানে লাগানো হয়েছে অতসী, আকন্দ, লেবু, অড়হর, ভাট, রঙ্গনের মতো বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ। অতসীর হলুদ ফুল ফুটেছে। কিছু গাছের ফুল ফুটতেই এখনই ছোট-বড় নানা প্রজাতির প্রজাপতির আনাগোনা শুরু হয়েছে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রজাপ্রতি বিশেষ কিছু গাছের পাতায় ডিম দেয়। একই ভাবে ডিম ফুটে বার হওয়া লার্ভা বিশেষ কিছু গাছের পাতা খায়। ওই কারণে উদ্যানের গাছ নির্বাচনের সময় বিষয়টি নজরে রাখা হয়েছে। বন কর্মীরা জানান, কয়েক দিনের মধ্যে বেশি ডিম মিলেছে লেবু আর আকন্দ পাতায়। কিছু প্রজাপ্রতির পছন্দ অতসী ফুলের পাতা। সুমিতা জানান, প্রকল্পটি গড়ে তুলতে খরচ নেই বললেই চলে। জমি ঘিরতে যে সামান্য খরচ হয়েছে। বন কর্মীরাই কাজা করছেন। গাছগুলি সাধারণ। বেশির ভাগই জঙ্গল থেকে আনা। এখন নজরদারিটাই গুরুত্বপূর্ণ।
বনকর্মীরা জানান, যেখানে উদ্যান গড়ে তোলা হচ্ছে, সেখানকার ঝোপ জঙ্গলে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি ঘুরে বেড়াত। মাস তিনেক আগে এলাকাটি সাজিয়ে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরার কাজ শুরু করা হয়। উদ্যান ফুল ও ফলে ভরে গেলে প্রজাপতির প্রজাতি চিহ্নিত করা হবে। পর্যটকদের কৌতূহল মেটাতে ছবি-সহ বিবরণ বোর্ডে লিখে দেওয়া হবে। এক কর্তা জানান, গরুমারা জঙ্গলে বেড়াতে এসে পর্যটকরা এত দিন গন্ডার, হাতি, বাইসন, হরিণের মতো বন্যপ্রাণ দেখার সুযোগ পেয়েছেন। প্রজাপতি উদ্যানের কাজ শেষ হয়ে গেলে আকর্ষণ আরও বাড়বে। পর্যটকেরা একটু অন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরবেন।
এ দিন বিচাভাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে প্রজাপতি উদ্যানের ফলক উন্মোচন করেন হিতেনবাবু। প্রকাশ করেন প্রজাপতির তথ্য সম্বলিত বই এবং বন বিভাগের পত্রিকা বনবিথি। জঙ্গল ও বন্য প্রাণ সংরক্ষণে অবদানের জন্য এ দিন ৬৭ জনকে সম্মানিত করা হয়। গরুমারা জঙ্গল লাগোয়া ময়নাগুড়ির রামসাই এলাকায় প্রায় এক একর জমিতে প্রজাপতি উদ্যান গড়ে তুলেছে বন দফতরের জলপাইগুড়ি বন্যপ্রাণ বিভাগ। এ দিন বিচাভাঙা এলাকায় গিয়ে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে ১১৩ জন উপভোক্তার মধ্যে দশ জনের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেন বনমন্ত্রী। |