পোলো পনি বাঁচাতে অভয়ারণ্য মণিপুরে
ণিপুরি ঘোড়া সংরক্ষণে তৈরি হচ্ছে নতুন অভয়ারণ্য। পোলো খেলার ‘বাহন’ ওই ঘোড়া পরিচিত পোলো পনি নামেই। সরকারি হিসেবে, মণিপুরে এখন ওই প্রজাতির সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে সাকুল্যে ৭০০টি। ছোট আকারের ওই ঘোড়াদের জন্য তা-ই হেইংগাং এলাকায় অভয়ারণ্যে গড়ছে মণিপুর সরকার। সাহায্য করছে কেন্দ্রও। আপাতত চলছে জমি অধিগ্রহণ।
মণিপুরে এখন পোলো প্রতিযোগিতার আসর বসেছে। সম্প্রতি, ওই খেলার প্রতিযোগীদের সঙ্গে নিয়ে অভয়ারণ্যের কাজ ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহ। তিনি জানান, মণিপুরের ঐতিহ্য ওই ঘোড়ার প্রজাতির সংরক্ষণে সব রকমের পদক্ষেপ করা হবে।
মণিপুরি পনি। —নিজস্ব চিত্র।
সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, মণিপুরের হেইংগাং পাহাড়ে গড়ে উঠছে ‘ইবুধৌ মারজিং খুবাম’। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অভয়ারণ্যের জন্য হেইংগাং এবং পাংগেই অঞ্চলে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এতে পাট্টা থাকা জমি-মালিকদের সমস্যা হতে পারে। তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হবে। অর্থ সাহায্য করছে কেন্দ্রীয় সরকারও।” ওই অভয়ারণ্যকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ার পরিকল্পনাও রয়েছে রাজ্যের। মুখ্যমন্ত্রী জানান, সংরক্ষণ কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছনোর জন্য সড়ক, অন্য পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। থাকবে রেসকোর্স, বাগান। ইবোবির নির্দেশ, যে সব মণিপুরি ঘোড়া রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, সে গুলিকেও অভয়ারণ্যে নিয়ে যেতে হবে। এ নিয়ে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে ইম্ফল পুরসভাকে।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাইল্যান্ড, আমেরিকা, জার্মানির পোলো খেলোয়াড়েরা নির্মীয়মাণ অভয়ারণ্য ও সংরক্ষণ কেন্দ্র ঘুরে দেখেন। ৩০০ একরের ওই সংরক্ষণ কেন্দ্রে মণিপুরি ঘোড়ার সদ্যোদাত শাবকদের বড় করে তুলতে বিষেশজ্ঞদের নিযোগ করা হবে। ইবোবি বলেন, “মাপান কাংজেইবুং বিশ্বের প্রাচীনতম পোলো খেলার স্টেডিয়াম। স্থানীয় ভাষায় ‘সাগোল কাংজেই’ বা পোলোর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে ওই মাঠে আন্তর্জাতিক পোলো প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।”
ইতিহাসের তথ্য থেকে জানা যায়, মোঙ্গল জনজাতির হাত ধরে পারস্য থেকে প্রাচ্যে এসেছিল পোলো। ১৬ শতকে সম্রাট বাবর ভারতে পোলো খেলা শুরু করেছিলেন। অবশ্য চিন এবং জাপানে আরও আগে থেকেই খেলার প্রচলন ছিল। ১৮৫০ সালে ইংরেজ চা উৎপাদকেরা মণিপুরে বর্মা সীমান্তের কাছে পোলো খেলতে দেখে আগ্রহী হন। এরপরই পোলো ক্লাব গড়ে ওঠে শিলচরে। ১৮৬২ সালে তৈরি হয় ‘ক্যালকাটা ক্লাব’। ইংল্যান্ডের মনমাউথসায়ারে ১৮৭২ সালে পোলো ক্লাবের পত্তন করা হয়।
মণিপুরে পোলো খেলার ‘বাহন’ টাট্টু ঘোড়াদের উৎপত্তি সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য মেলেনি। কারও মতে, হাজার বছর আগে ভারতে নিয়ে আসা তিব্বতি ঘোড়াদের থেকে মণিপুরি ঘোড়ার জন্ম। কেউ বলেন, মঙ্গোলিয় বুনো ঘোড়ার সঙ্গে তাতারদের আরবি ঘোড়ার মিশ্রণে মণিপুরি ঘোড়ার উদ্ভব। মণিপুর রাজ পরিবারের ইতিহাসে ১৫৮৪ সালে মণিপুরি ঘোড়ার প্রশিক্ষণ, পালনের বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। ১৬০০ সাল থেকে মণিপুরি সাহিত্যেও ঠাঁই করে নেয় পোলো পনিরা। মেইতেই অশ্বারোহী বাহিনীর বাহন ওই প্রজাতির ঘোড়া গরীব নওয়াজ বাহিনীরও অংশ ছিল। উজানি বর্মা ও সাগাইং অভিযানে মণিপুরি ঘোড়া বাহিনীর দাপট ছিল।
১৮৫৯ থেকে ১৯১৬ সাল পর্যন্ত ইংরেজরা পোলো খেলায় ওই প্রজাতির ঘোড়াই চড়তেন। মণিপুরি ঘোড়ার উচ্চতাকে প্রামাণ্য ধরে, পোলো পনির উচ্চতা ১৩ ‘হাতে’ বেঁধে দিয়েছিলেন ইংরেজ খেলোয়াররা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বর্মার পাহাড়ি এলাকায় ব্রিটিশ সেনা এবং রসদ পরিবহণে একমাত্র ভরসা ছিল মণিপুরি ঘোড়া। ১৯৭৭ সালে তৈরি হয় ‘মণিপুর হর্স রাইডিং অ্যান্ড পোলো অ্যাসোসিয়েশন’।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.