একটি স্কুলের মাঠ সংস্কার করতে গিয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি জমির একাংশ দখলের অভিযোগ উঠল। খানাকুল-২ ব্লকের ময়াল গ্রামের কে সি রায় ইনস্টিটিউশন নামে ওই স্কুলের মাঠটি তৃণমূল পরিচালিত সংশ্লিষ্ট কিশোরপুর-১ পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে সংস্কার করা হয়েছে। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, তৃণমূলের সন্দীপ বর ওই স্কুলেরই পরিচালন সমিতির সদস্য। তাঁর নেতৃত্বেই তাঁদের পারিবারিক জমির একাংশ দখল করা হয়েছে বলে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই গ্রামের সুব্রত হাজরা। স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যাবতীয় দায় পঞ্চায়েতের উপরেই চাপিয়ে জানান, মাঠের অতিরিক্ত এলাকা ভরাট নিয়ে পঞ্চায়েতে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সন্দীপবাবুর দাবি, তিনি যা করেছেন, ‘উন্নয়নের স্বার্থে’। আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “অভিযোগ পাইনি। পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বন্যাপ্রবণ ময়ালের ওই স্কুলের মাঠটি দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি। গ্রামবাসীদের অনুমান, মাঠটির আয়তন বিঘা খানেক। দিন কয়েক আগে তাঁরা দেখেন, মাটি ফেলে সেই মাঠ ভরাট হয়েছে। মাঠের আয়তনও বেড়ে প্রায় দেড় বিঘা। অভিযোগ, শনিবার রাতে যন্ত্র দিয়ে জায়গাটি ভরাট করা হয়। যা ১০০ দিন কাজ প্রকল্পে বেআইনি। কেননা, ওই প্রকল্পে যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ অবশ্য রাতারাতি ভরাটের কথা মানেনি। তাঁদের দাবি, মাটি সমান করতে রাতে রোলার দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকরা মাটি ফেলেছেন দিনে।
কিন্তু ওই মাঠ সংলগ্ন এলাকার হাজরা পরিবারের সদস্য সুব্রত হাজরার দাবি, তাঁদের ৩৬ শতক জমি জবরদখল করা হয়েছে। জমিটি তাঁর ঠাকুমা দুর্গারানিদেবীর নামে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে রেকর্ড করা রয়েছে। তাঁর অভিযোগ, “সন্দীপ বরের নেতৃত্বে ওই বেআইনি দখল হয়েছে। সন্দীপবাবু জমিটা কিনতে চেয়েছিলেন। আমরা তা দিতে না চাওয়ায় স্কুলের মাঠ হিসেবে নিয়ে নিলেন।” গত মঙ্গলবার তিনি পঞ্চায়েত এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিডিও, মহকুমাশাসক এবং ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে অন্যায় ভাবে জমি দখলের অভিযোগ জানান বলে জানিয়েছেন সুব্রতবাবু।
অভিযোগ উড়িয়ে সন্দীপবাবু বলেন, “যা করেছি, তা উন্নয়নের স্বার্থে। আমাদের মনে হয়েছে জায়গাটি স্কুলেরই। প্রতি বছর প্লাবনে স্কুলের মাঠের জমিটি ভেঙে ছোট হয়ে গিয়েছিল। যদি জায়গাটি হাজরাদের হয়েই থাকে, তবে তা মাপজোক করে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।” পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের তাপসী বায়েন বলেন, “উন্নয়নের স্বার্থে উপপ্রধান ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ময়াল তাঁর নিজের গ্রাম। বেআইনি কাজ হয়েছে কিনা, তিনিই বলবেন।” প্রধান শিক্ষক শিশির মহান্তি বলেন, “স্কুলের মাঠ পঞ্চায়েত সংস্কার করে দিচ্ছে, এটা স্বাগত। কিন্তু মাঠটির আয়তন বাড়ানো নিয়ে স্কুল বিতর্কে জড়াতে চায় না। সেটা পঞ্চায়েতকে জানানো হয়। কোনও মাপজোক না করেই পঞ্চায়েত কাজটা করেছে।” তাঁর সংযোজন, মাঠটির সীমানা চিহ্নিত করা নেই। সেটির রেকর্ডভুক্ত আয়তন কত, সেই নথি খোঁজা হচ্ছে। স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, “কারও ব্যক্তিগত জায়গা স্কুল দখল করবে না বলে পঞ্চায়েতকে জানানো হয়েছে।” |