নিজস্ব মাঠ নেই বহু স্কুলে, সমস্যায় হাওড়ার পড়ুয়ারা
মাঠের অভাবে ভুগছে গ্রামীণ হাওড়ার বিভিন্ন মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসা। নিজের মাঠ না থাকায় স্কুলের ছেলেমেয়েদের অনেকটা পথ উজিয়ে যেতে হচ্ছে এলাকার কোনও ক্লাব অথবা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে। দীর্ঘ দিন ধরে এই রোজনামচার পরিবর্তন চাইছেন জেলার ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
হাওড়া জেলা, বিশেষ করে গ্রামীণ হাওড়া থেকে বাংলার বিভিন্ন খেলায় উঠে এসেছে অনেক প্রতিভা। নব্বই দশকের গোড়ায় বাংলার স্কুল ফুটবল দলে ছিল হাওড়ার ছেলেদেরই আধিক্য। কিন্তু বর্তমানে ভারতীয় স্কুল ফুটবলের ‘বিশ্বকাপ’ সুব্রত কাপে হাওড়ার স্কুলগুলির ফল মোটেই উল্লেখযোগ্য নয়। যোগাসন, কবাডি, খোখোর মতো খেলাতেও একই অবস্থা। শুধু খেলাধূলাই নয়, সমস্যা হচ্ছে শারীরশিক্ষার ক্লাসে। ব্যায়াম করার জন্য ছাত্রছাত্রীদের যেতে হচ্ছে দূরের মাঠে। ফলে অনেকে ক্লাস থেকে পালাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে।
হাওড়ার মাকড়দহ বামাসুন্দরী ইনস্টিটিউশনের ক্রীড়া শিক্ষক সুদীপ মালিক জানান, তাঁদের স্কুলের পিছনের দিকে মাঠ তৈরির জন্য জমি কেনা হলেও বছরের বেশির ভাগ সময় সেই জায়গা জলে ভরে থাকে। ফলে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের খেলাধূলার ভরসা এলাকার মাকড়দহ ইউনিয়ন ক্লাবের মাঠ। তাঁর কথায়, “ইউনিয়ন ক্লাবের মাঠ এখন আইএফএ লিজে নিয়েছে। ফলে ওই মাঠে নানা সময় বিভিন্ন ডিভিশনের ফুটবল খেলা থাকে। ফলে ওই মাঠও অনেক সময় পাওয়া যায় না।” তিনি জানান, স্কুল থেকে ইউনিয়ন মাঠে যেতে প্রায় দশ মিনিট সময় লাগে। অনেক সময় স্থানীয় ছাত্রেরা শারীরশিক্ষার ক্লাসের জন্য বেরোলেও মাঠে না গিয়ে বাড়ি চলে যায়। ফুটবল দলের একসঙ্গে প্র্যাকটিস হয় না বললেই চলে।”
সম্প্রতি জেলা ও জোনাল স্তরে স্কুল ক্রীড়ার জন্য তৈরি হয়েছে নতুন কমিটি। এক একটি জোনের আওতায় থাকছে সেই এলাকার মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসাগুলি। ডোমজুড় জোনাল স্কুল স্পোর্টস কাউন্সিল সূত্রে জানা গিয়েছে এই জোনের আওতায় থাকা ৪২টি মাধ্যমিক স্কুলের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ স্কুলেরই নিজস্ব মাঠ নেই। এই জোনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, “নিজের মাঠ না থাকায় স্কুলগুলির বার্ষিক ক্রীড়া করতে সমস্যায় পড়তে হয়। আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতাগুলি প্রায় বন্ধ।”
সাঁকরাইল জোনাল স্কুল স্পোর্টস কাউন্সিলের সম্পাদক তিমির সরকার জানান, সাঁকরাইল জোনের মোট ২৬টি মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার মধ্যে একমাত্র ফকিরচাঁদ হাইস্কুলের নিজস্ব মাঠ রয়েছে। তিমিরবাবুর অভিযোগ, “বাধ্য হয়ে স্কুলগুলিকে দূরের মাঠে গিয়ে শারীরশিক্ষার ক্লাস করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সেই মাঠের তদারকি সংস্থার অনেক রকম দাবিদাওয়াও মেটাতে হয়। বছর কয়েক আগে জেলা প্রশাসন থেকে জেলার স্কুলগুলির জন্য মাঠের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলা হলেও কাজ কিছু হয়নি বলে জানান তিনি।
আমতা জোনাল স্কুল স্পোর্টস কাউন্সিলের প্রবীর কোলে জানান, তার এলাকায় মোট ৪৫টি স্কুলের মধ্যে মাত্র ৪-৫টি স্কুলের নিজের মাঠ রয়েছে। বাকিরা নিজেদের হলঘরে কিংবা স্কুল চত্বরের ছোট জায়গায় শারীরশিক্ষার ক্লাস করে। খেলার জন্য যেতে হয় পাশের মাঠে।
যে স্কুলগুলির নিজেদের মাঠ নেই তারা যেমন সমস্যায় তেমনি স্কুলের নিজস্ব মাঠ থেকেও সমস্যায় রয়েছে বহু স্কুল। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হল রক্ষণাবেক্ষণ ও নজরদারি। অনেক স্কুলের মাঠে অনেক সময়েই বহিরাগত যুবকেরা খেলাধূলা করে। রাত বাড়লে স্কুলের মাঠে আড্ডার দৃশ্যও চোখে পড়বে। জগৎবল্লভপুরের ব্রাহ্মণপাড়া চিন্তামণি ইনস্টিটিউশনের নিজেদের মাঠ থাকলেও সেই মাঠের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন বলে স্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক চিন্ময় কুমার।
হাওড়া জেলা স্কুল স্পোর্টস কাউন্সিলের সম্পাদক প্রদীপ কোলে বলেন, “হাওড়ার অধিকাংশ স্কুলের নিজস্ব মাঠ নেই। এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের খেলাধূলায় অনীহা দেখা যাচ্ছে। গ্রামীণ হাওড়ায় অনেক স্কুলের মাঠ না থাকলেও এলাকার স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন কিংবা স্থানীয় ক্লাবের মাঠে খেলাধূলা হত। তবে এখন তো এলাকার মাঠের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।” তিনি জানান, স্কুলে নতুন মাঠ তৈরির ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা জমি। এক সঙ্গে কয়েকটি বিদ্যালয়ের জন্য একটি করে খেলার মাঠ তৈরি করে স্কুলের মাঠ সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হতে পারে।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.