আন্দোলনের বহু মুখ নেই তাপসী মালিক দিবসে
তাশা ক্রমেই ঘিরে ধরছে সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের অনেককে। জমি ফেরত পেতে মরিয়া তাঁরা। নেতা-নেত্রীদের আনাগোনা আর প্রতিশ্রুতির চেনা বুলিতে আর ভরসা রাখতে পারছেন না। বুধবার তাপসী মালিক দিবসে তাই সিঙ্গুরের এই অংশটা নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখল অনুষ্ঠান পর্ব থেকে।
২০০৬-এর ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গুরের বাজেমিলিয়ার কিশোরী তাপসী মালিকের অর্ধদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। তাপসীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ তুলে জমি আন্দোলনকে সে সময়ে জোরদার করেছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকে বছরের এই দিনটি তাপসী মালিক দিবস হিসাবে পালন করে আসছে তৃণমূল।
তাপসী মালিকের মূর্তিতে মালা দিচ্ছেন মুকুল রায়। ছবি: দীপঙ্কর দে।
রাজ্যে এখন ক্ষমতায় তারাই। গাড়ি কারখানার জন্য টাটাদের অধিগৃহীত জমি ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের ফেরতের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় শুরু থেকেই তৎপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কিন্তু আপাতত সেই প্রক্রিয়া বিশ বাঁও জলে। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে সব পক্ষ। কিন্তু ক্রমে ধৈর্য কমছে অনেকের। পরিস্থিতি আঁচ করে ইতিমধ্যেই ‘অনিচ্ছুক’ পরিবারগুলির জন্য সরকারি নানা সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছেন মমতা। কিন্তু তাতেও মন উঠছে কই জমিহারা মানুষজনের?
অধিগ্রহণ পর্বে জমির দাম নেননি যে চাষিরা, তাঁরাই গড়েছিলেন ‘সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটি।’ আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা বেচারাম মান্না, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যরা রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছেন। এ দিন অনুষ্ঠানে এই দুই মন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সোনালি গুহ-সহ জেলার সাংসদ বিধায়কেরা। হরিপাল, ধনেখালির মতো বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাকে করে আনা হয়েছিল দলের কর্মী-সমর্থকদের। ত্রিপল খাটিয়ে খিচুড়ি রান্না হচ্ছিল। সব মিলিয়ে সকাল থেকেই সরগরম সিঙ্গুর। তাপসীর বাবা মনোরঞ্জনবাবুকেও দেখা গেল শশব্যস্ত হয়ে নেতাদের দেখভালের জন্য দৌড়োদৌড়ি করছেন। মেয়ের মূর্তিতে মালাও দিয়েছেন। কিন্তু জমি আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন যাঁরা, তেমন বহু চেনা মুখের দেখা মিলল না।
সন্ধের দিকে বেড়াবেড়ির বাড়িতে গিয়ে দেখা হল শ্যামলী দাসের সঙ্গে। জমি আন্দোলন পর্বের পরিচিত মুখ। কেন গেলেন না অনুষ্ঠানে? উত্তর যেন তৈরিই ছিল। ঝাঁঝিয়ে উঠে বললেন, “কেন যাব বলতে পারেন? জমি কবে ফেরত পাব বলুন। চাল চাই না, টাকা চাই না। জমি ফেরত চাই। জমি নিয়ে বেশ ছিলাম। এত অভাব ছিল না।” নিজের বাড়ির দাওয়ায় বসে লেপের ওয়াড় তৈরি করছিলেন রেবতী মান্না। পারিবারিক জমির সিংহভাগই চলে গিয়েছে প্রকল্প এলাকায়। এখন সেলাই মেশিনই ভরসা। নির্লিপ্ত ভাবে বললেন, ‘‘কী হবে ওখানে গিয়ে। জমি কি ফিরে আসবে? আমাদের তো সব গিয়েছে। কী না করেছি জমি ফিরে পেতে? এখন ২ টাকা কেজি দরে সরকারি চাল কিংবা মাসে ২ হাজার টাকা লাইনে দাঁড়িয়ে তুলতে ভাল লাগে না।” রেবতীরও দাবি, “আর কিছু চাই না। জমি যে করেই হোক ফেরত দেওয়া হোক।”
বেচারামবাবু এ সব মানতে নারাজ। নাম ধরে ধরে জানালেন, কোন কোন ‘অনিচ্ছুক’ চাষি শুরু থেকেই ছিলেন অনুষ্ঠানে। বললেন, “জমি ফেরাতে বদ্ধপরিকর মুখ্যমন্ত্রী।” মুকুল রায় আবার বলেন, “সিঙ্গুরের মানুষের পাশেই আছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশেই এসেছি। অনিচ্ছুকেরা জমি ফেরত পাবেনই।” নেতা-নেত্রীদের বক্তৃতায় এ দিন জমি প্রসঙ্গ ছাড়াও লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে আরও নানা বিষয় উঠে এসেছে। কৃষিজমি রক্ষা কমিটির মঞ্চে এ দিন ম্যাজিক দেখাচ্ছিলেন শুভম ঘোষ। মঞ্চের নীচে এক যুবককে চাপা গলায় বলতে শোনা গেল, “দিদি এখন কোন ম্যাজিকে আমাদের জমি ফেরান, সেটাই দেখার।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.