ভরদুপুরে রক্তমাখা বঁটি হাতে “মেরে ফেলেছি, মেরে ফেলেছি” চিৎকার করতে করতে রাস্তা দিয়ে ছুটছেন এক ব্যক্তি। পরক্ষণেই হাতের বঁটি পাড়ার পুকুরে ফেলে তিনি উধাও।
মঙ্গলবার ভরদুপুরে কাশীপুরের রাস্তায় এই দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এক মহিলার চিৎকারে সম্বিৎ ফিরতেই তাঁরা দেখলেন, ওই মহিলার গলা থেকে রক্ত ধরছে। পাড়ার লোকজন তড়িঘড়ি তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে গলায় ব্যান্ডেজ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন ওই মহিলা।
পুলিশ জানায়, আক্রান্ত ওই মহিলার নাম শিখা দে। তাঁর বাড়ি কাশীপুরের ডিগ্রিবাগানে। তাঁর দেওর প্রবীরকুমার দে তাঁর গলায় বঁটির কোপ বসিয়েছেন বলে তাঁর অভিযোগ। শিখাদেবীর গলায় পাঁচটি সেলাই হয়েছে। প্রবীর পলাতক। বুধবার রাত পর্যন্ত তাঁকে ধরতে পারেনি পুলিশ।
শিখাদেবীর পরিবারের তরফে অভিযোগ, প্রবীর মাস কয়েক আগে একটি শ্লীলতাহানির ঘটনায় গ্রেফতার হন। দিন কুড়ি আগে জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফেরেন। গ্রেফতারের আগে থেকে শিখাদেবী ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে প্রবীরের বিবাদ ছিল। মঙ্গলবার সকালে শিখাদেবীর স্বামী ও মেয়ে কাজে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। বাড়িতে শুধু শিখাদেবী ও তাঁর বৃদ্ধা শাশুড়ি ছিলেন। দুপুর একটা নাগাদ প্রবীর এসে শিখাদেবীর কাছে টাকা চান। শিখাদেবী টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাঁর চুলের মুঠি ধরে
দেওয়ালে ঠুকে দেন প্রবীর এবং একটি বঁটি এনে শিখাদেবীর গলায় কোপ বসিয়ে দেন।
শিখাদেবীর পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, দ্বিতীয় বার কোপ মারার আগে শিখাদেবীর শাশুড়ি তাঁর ছোট ছেলে প্রবীরকে ধরে ফেলেন। মায়ের হাত ছাড়িয়ে তখনই দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। তার পরে রাস্তা দিয়ে বঁটি হাতে দৌড়তে শুরু করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রক্তমাখা বঁটি হাতে দৌড়তে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রবীরকে আটকানোর সাহস দেখাননি। তবে তাঁরাই কাশীপুর থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পুকুর থেকে বঁটিটি উদ্ধার করে। শিখাদেবীর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রবীরের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও প্রবীর গ্রেফতার না হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন শিখাদেবীর পরিবারের সদস্যরা। তাঁর স্বামী সমীরকুমার দে বলেন, “ভাই ফের হামলা না চালায়! খুবই আতঙ্কে রয়েছি তা নিয়ে।” কেন গ্রেফতার করা যাচ্ছে না প্রবীরকে? কলকাতা পুলিশের ডিসি (উত্তর) গৌরব শর্মা বলেন, “ঘটনার পর থেকেই প্রবীর ফেরার। তাঁর খোঁজে তল্লাশি চলছে।” |