গভীর রাতে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের নির্জন এলাকায় দাঁড়িয়ে একটি গাড়ি। ভিতরে বসে চার যুবক। তা দেখে সন্দেহ হয়েছিল সোনারপুর থানার টহলদার জিপের। তল্লাশি করতেই তাদের কাছে মিলল আগ্নেয়াস্ত্র ও ভোজালি। চার যুবককে পাকড়াও করে নিয়ে যাওয়া হল থানায়। মঙ্গলবার রাতের ঘটনা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষ্ণুপদ মণ্ডল, সুরজ বসাক, বিশ্বজিৎ মিস্ত্রি এবং গৌতম সর্দার নামে ওই চার যুবক ডাকাতির উদ্দেশ্যে জড়ো হয়েছিল। এদের মধ্যে বাকি তিন জন দাগি দুষ্কৃতী হলেও সুরজ দক্ষিণ শহরতলির একটি কলেজে ইংরেজি অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্র। ধৃতদের জেরা করে বুধবার উজ্জ্বল মালিক নামে আরও এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, পাটুলির বাসিন্দা সুরজের বাবা একটি বেসরকারি সংস্থার চাকুরে। চিত্রশিল্পী হিসেবেও তিনি পরিচিত। সুরজেরও আঁকার হাত ভাল। সম্প্রতি বৃজির বাসিন্দা গৌতমের সঙ্গে সুরজের পরিচয় হয়। সে-ই সহজে টাকা রোজগারের টোপ দিয়ে সুরজকে এই কাজে এনেছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। তাঁরা জেনেছেন, সুরজকে বলা হয়েছিল লুঠে সফল হলে লাখ দুয়েক টাকা মিলবে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, সেই টাকার মোহেই সুরজ এ পথে পা বাড়ায়।
পুলিশ জানায়, গৌতমের সঙ্গে সোনারপুরের বিষ্ণুপদ এবং পাঁচপোতার বিশ্বজিতের দীর্ঘদিনের পরিচয়। তারা আগেও এমন ঘটিয়েছে। আর উজ্জ্বল এই দলে ছিল নজরদারের ভূমিকায়।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে ধৃতদের কাছে দু’টি ওয়ান শটার রিভলভার, একটি পাইপগান, চারটি তাজা কার্তুজ, দু’টি ভোজালি ও এক শিশি ক্লোরোফর্ম মেলে। জেরায় ধৃতেরা জানায়, বাইপাস সংলগ্ন কে বি রায় রোডের একটি বাড়িতে এক বৃদ্ধা একা থাকেন। তাঁর ছেলে জাহাজে চাকরি করেন। বৃদ্ধার এক পরিচিতের সূত্রে এই খবর পেয়েছিল তারা। ঠিক ছিল, ইংরেজিতে কথা বলতে অভ্যস্ত সুরজকে কায়দা করে ভিতরে ঢোকান হবে। সে-ই বৃদ্ধাকে অজ্ঞান করবে। তার পরে শুরু হবে লুঠপাট। সেই মতোই ওই রাতে গাড়ি নিয়ে বাইপাসে পৌঁছয় সুরজ-সহ চার জন। বাড়িটির কাছে দাঁড়িয়ে চার পাশে নজর রাখার ভার ছিল উজ্জ্বলের উপরে। ঘটনাচক্রে, কিছু দিন আগে তিলজলাতেও এ ভাবে ডাকাতি হয়েছিল বলে পুলিশ
সূত্রের খবর।
তদন্তে বেশ কিছু সূত্র মিলেছে। বাড়িটির পরিচারিকার সঙ্গেও কথা বলছে পুলিশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও কিছু সূত্র মিলেছে। আর কেউ জড়িত কি না, তা দেখা হচ্ছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতদের কাছে আরও এক শিশি রাসায়নিক মিলেছে। জেরায় ধৃতেরা পুলিশকে জানিয়েছে, ওই শিশিতে ‘রিমুভার’ রয়েছে। লুঠ-ডাকাতি সেরে পালানোর পরে গাড়ির নম্বর প্লেটে ওই রাসায়নিক লাগালে সংখ্যাগুলি উঠে যায়। সেই জায়গায় অন্য সংখ্যা বসিয়ে দেওয়া হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “অপরাধ করে পালানোর সময়ে অনেকে গাড়ির নম্বর দেখে ফেলে। সেই সূত্র ধরে পুলিশও অপরাধীদের হদিস পায়। সেই আশঙ্কা এড়াতেই সুরজ, গৌতমেরা এই কায়দা বেছেছিল।” |