এত দিনে মূল অসুখ চিহ্নিত হল। এ বার শুধু প্রয়োজনীয় দাওয়াই প্রয়োগ করাটাই কাজ।
আর টুকটাক জোড়াতাপ্পি বা গর্ত বুজিয়ে পিচের আস্তরণ ফেলা নয়। গোটা সল্টলেকে গাড়ি চলাচলের সব রাস্তা ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টে মুড়ে ফেলার পরিকল্পনা করেছে প্রশাসন। আগামী বছরের বর্ষার আগেই প্রায় ২১ কোটি টাকা খরচ করে সল্টলেকের ব্লকগুলির ভিতরে ও গাড়ি চলাচলের মূল রাস্তা ঢেলে সাজা হবে।
সল্টলেকে রাস্তার দুরবস্থা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। অভিযোগ, রাস্তা খারাপ হবে এবং তার মেরামত চলবে বছরভর এই চক্রাকার পরিকল্পনা চলছে। এতে আখেরে কোনও কাজই হয় না।
সল্টলেকে বসতি ও লোকের আনাগোনা দুই-ই বেড়েছে। পাঁচ নম্বর সেক্টরে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পতালুক, ব্লকে ব্লকে বেসরকারি অফিস, শপিং মল, প্রেক্ষাগৃহ হওয়ায় পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গাড়ির চাপ। সে অনুযায়ী রাস্তার মান ভাল হয়নি। জোড়াতাপ্পি বা বছরে দু’এক বার পিচের আস্তরণ পড়া।
এমন অভিযোগ এ বছর আরও জোরালো হয়েছে সল্টলেকে। কারণ, চলতি বর্ষা থেকে রাস্তা ক্রমাগত খারাপ হয়েছে। কিন্তু বেশ কয়েক মাস রাস্তা ঢেলে সাজা দূর অস্ত্, জোড়াতাপ্পিও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। অবশেষে রাজ্য সরকার সাড়ে চার কোটি টাকা সল্টলেকের রাস্তার মান উন্নয়নে বরাদ্দ করে। কিন্তু সে টাকায় কিছু রাস্তা মেরামত হলেও অধিকাংশ রাস্তা সারানো যায়নি। |
সিটি সেন্টারের কাছে রাস্তার এখন এমনই হাল। ছবি: শৌভিক দে। |
সূত্রের খবর, অভিযোগের কথা পৌঁছয় রাজ্য সরকারের শীর্ষ স্তরে। এর পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। বিধাননগর পুরসভা, নগরোন্নয়ন দফতর ও কেএমডিএ-র প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়। আলোচনায় উঠে আসে রাস্তার মানোন্নয়নের প্রসঙ্গও। সে অনুযায়ী, গাড়ি চলাচলের রাস্তাগুলির জন্য ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এ ছাড়া বিধাননগরে ব্লকগুলির ভিতরের রাস্তা মেরামতির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি টাকা। আগামী বর্ষার আগেই কাজ শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (পূর্ত) অনুপম দত্ত বলেন, “সব দিক খতিয়ে দেখে রাস্তা ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, এর ফলে রাস্তা মেরামতির জন্য বার বার খরচের বহর কমবে। পুরো কাজটি ওই কমিটি দেখভাল করবে।”
এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বাসিন্দাদের সংগঠন ‘সল্টলেক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “পরিকল্পনা নিশ্চিত ভাবেই ভাল। অবিলম্বে রাস্তার মান ভাল করা প্রয়োজন। কিন্তু কাজের উপরেও নজরদারি রাখা দরকার। প্রয়োজনে বাসিন্দাদের সাহায্য নেওয়া হোক।”
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, স্রেফ ম্যাস্টিফ অ্যাসফল্ট করেই কী সমস্যার সমাধান হবে? বিশেষত, যে হারে গাড়ি বেড়েছে তাতে কোথাও কোথাও রাস্তা সম্প্রসারণেরও প্রয়োজন। যেমন পিএনবি মোড় থেকে ময়ূখ ভবন, পিএনবি থেকে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন প্রমুখ রাস্তা।
আবার, গাড়ির চাপ কমাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পার্কোম্যাট কিংবা গাড়ি রাখার জায়গাও নির্দিষ্ট করা দরকার। তা নিয়ে পরিকল্পনার অভাবের কথা কার্যত মেনে নিয়েছে প্রশাসন। যদিও বিধাননগর পুরসভা সূত্রে খবর, সার্বিক ভাবেই পরিকল্পনা চলছে। সে ক্ষেত্রে রাস্তা সম্প্রসারণ, পার্কিং সমস্যা নিয়েও কথা চলছে।
এর পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, কত বার রাজ্য সরকার অর্থ সাহায্য দেবে? সেখানেই পুরসভার আয় সংগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জবাবে অনুপমবাবু বলেন, “রাজ্য সরকার সহযোগিতা করছে বলেই উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। সম্পত্তিকর-সহ পুরসভার যা রাজস্ব সংগ্রহের অবস্থা, তা দিয়ে এত বড় প্রকল্প সম্ভব নয়।”
এ প্রসঙ্গে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “সল্টলেকের ক্ষেত্রে নগরোন্নয়ন দফতরের দায় বর্তায়। যে কারণে সল্টলেকের উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা থাকে। সেখান থেকে টাকা দেওয়া হয়েছে। রাস্তার উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল। তা হয়েছে। তবে আশা করি আয় বাড়াতে বিধাননগর পুরসভা আরও সচেষ্ট হবে।” |