বিষক্রিয়ায় মৃত্যু শ্মশানযাত্রীদের
কেন বন্ধ হয়নি বেআইনি মদ বিক্রি, প্রশ্ন তারাপীঠে
দের কারণে মৃত্যুর ঘটনা জেলায় নতুন নয়। গত বছরই রামপুরহাট মহকুমা এলাকাতেই মদ খাওয়ার পরে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছিল কয়েক জনের। নড়েচড়ে বসেছিল জেলা পুলিশ-প্রশাসন থেকে আবগারি দফতর। বেআইনি মদের ঠেক ভাঙতে বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালাতে দেখা যায় প্রশাসনকে। মাঝে মধ্যে অভিযান চালাতে দেখা যায় মহিলাদেরও। কিন্তু অবস্থার যে কোনও পরিবর্তন হয়নি, সোমবারের ঘটনা তা একবার প্রমাণ করল।

এই মদ খাওয়ার
পরে বিষক্রিয়া হয়।
সোমবার দুপুরে তারাপীঠ শ্মশানে দু’টি শবদাহ করতে গিয়েছিলেন ময়ূরেশ্বর থানার মহুলা (১২ জন) এবং রামপুরহাট থানার কুতুবপুর গ্রামের (৪০ জন) মোট ৫২ জন শ্মশানযাত্রী। অধিকাংশই শ্মশান লাগোয়া দোকান থেকে দেশি মদ কিনে খান। ওই দোকানের মদ বিক্রির লাইসেন্স ছিল না। বাড়ি ফিরে অনেকে অসুস্থ হতে শুরু করেন। রামপুরহাট হাসপাতালে চিকিসাধীন মহুলা গ্রামের বাসিন্দা মদন লেট বলেন, “আমরা ৪ বোতল মদ শ্মশান লাগোয়া একটি দোকান থেকে কিনি। শবদাহ করে তারাপীঠে হোটেলে ভাত খেয়ে বাড়ি ফিরে যাই। রাতে কোনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু সকাল থেকে পেট ব্যথা, বমি, পায়খানা হতে থাকে। চোখে ঝাপসা দেখতে থাকি। ইতি মধ্যে খবর পাই আমাদের সঙ্গে যাওয়া শবযাত্রী অরুণ লেটের মৃত্যু হয়েছে। গ্রামের আরও অনেক শবযাত্রী, যাঁরা আমাদের সঙ্গে তারাপীঠে মদ খেয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।” একই হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন কুতুবপুর গ্রামের যুবক অমূল্য মাল বলেন, “আমরা নিজেদের মতো তারাপীঠের দেশি মদ বিক্রির কাউন্টার থেকে মদ কিনেছিলাম। কেউ কেউ শ্মশান যাওয়ার পথে একটি দোকান থেকে মদ কিনে খায়। যে যার মতো বাড়ি ফিরে যাই। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর থেকে অনেকে অসুস্থ হতে থাকে।”
সিল করে দেওয়া হয়েছে অবৈধ মদের দোকান।
মঙ্গল ও বুধবার যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁরা হলেন কুতুবপুরের তমাল মাল ওরফে আপেল (২২), গৌতম মাল (২২), আলিম শেখ (৪৬), আপেল মাল (২৫) এবং মহুলা গ্রামের কাঙ্গাল লেট (৩৮), বিমল লেট (৫০), মাড়গ্রাম থানার মাঝিড়া গ্রামের বাবলু মাল (৪৬)। তবে মঙ্গলবার দুপুরে অরুণ লেট (৫৫) নামে এক মহুলা গ্রামের বাসিন্দা এক শ্মশানযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কোটেশ্বর রাও-এর দাবি, “ওই ব্যক্তির মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়নি। সুতরাং আমরা ওই ব্যক্তির মৃত্যুর সঙ্গে বাকিদের সঙ্গে যোগ করা যাবে না।” এ দিকে, ঘটনার কথা জেনে বুধবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে জেলাশাসক রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি থাকা অসুস্থদের সঙ্গে দেখা করেন। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “রামপুরহাটে যাঁরা ভর্তি আছেন, তাঁরা সুস্থ। যতক্ষণ পর্যন্ত ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া যাচ্ছে, মৃত্যুর কারণ সঠিক ভাবে বলা যাবে না। পুলিশ ও আবগারি দফতর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে।”
রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে অসুস্থদের
সঙ্গে কথা বলছেন জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার।
বর্ধমান মেডিক্যালে
শোকার্ত পরিবার।
জেলা পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “তারাপীঠ এলাকার শ্মশান লাগোয়া যে দোকান থেকে মদ বিক্রি হচ্ছিল, ওই দোকানের লাইসেন্স নেই। তাই ওই দোকানের মালিক জীবন দাস-সহ দোকানের দুই কর্মচারী বিশ্বজিত্‌ মণ্ডল ও উত্তম বাউরিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বেআইনি ভাবে মজুত রাখা ৬০টি বোতল দেশি মদ উদ্ধার করেছে এবং ওই দোকানটিকে সিল করে দিয়েছে। পাশাপাশি তারাপীঠ লাগোয়া চণ্ডীপুর গ্রামেও দু’টি মদের দোকান যেখানে, দেশি বিক্রি করা হয় সেই দু’টি দোকানও বন্ধ করে দিয়েছে। দোকানগুলি থেকে দেশি মদ ছাড়া অন্য কিছু পাওয়া যায়নি।” জেলা পুলিশ সুপার জানান, উদ্ধার হওয়া মদ পরীক্ষা করতে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার দুপুরে বর্ধমান মেডিক্যালে গিয়ে দেখা গেল, অন্তত পাঁচ জন বিষক্রিয়ার শিকার। তাঁরা যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। সেখানে অসুস্থ সঞ্জয় মাল বলেন, “দাহ কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে আসি। রাতে প্রত্যেকের বমি, গা-গোলানো, দৃষ্টিশক্তি চলে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। গ্রাম থেকে আমাদের নিয়ে গিয়ে লোকেরা রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি করতে শুরু করেন মঙ্গলবার ভোর থেকে।” রামপুরহাট হাসপাতালের চিত্রটাও একই রকম। এ দিন সকাল থেকে হাসপাতালে রোগীর আত্মীয় পরিজনদের ভিড়। দু’টি গ্রামের আরও ১০ জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে এক জনকে বর্ধমানে পাঠানো হয়। মৃত তমাল মালের আত্মীয় নিতাই মাল বলেন, “আমরা খুব আশঙ্কায় ছিলাম। উত্‌কণ্ঠার মধ্যে রাত কাটাতে হয়েছে। কী ভাবে কী সব হয়ে গেল বুঝতে পারছি না।”
বর্ধমান মেডিক্যালের ডেপুটি সুপার তাপস ঘোষ বলেন, “এখানে যে সাত জন ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে দুজন মারা গিয়েছেন। বাকিদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের শরীরে মদের সঙ্গে মিশে বিষাক্ত মিথানল প্রবেশ করায় এই বিপত্তি। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।” রামপুরহাট ও বর্ধমান মেডিক্যাল অসুস্থ হয়ে এখনও দু’টি গ্রামের ২২ জন চিকিসাধীন রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
মদ খাওয়ার পরে বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মাল। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিও করেছেন। বীরভূম জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা আইএনটিএউসি’র সভাপতি মিল্টন রসিদ বলেন, “রামপুরহাট মহকুমা এলাকায় বিষ মদ খেয়ে মৃত্যুর ঘটনা আজকে নতুন নয়। বছর খানেক আগেও মাড়গ্রাম থানা ও নলহাটি থানা এলাকায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময়ও পুলিশ আবগারি দফতর ও প্রশাসন সাময়িক ভাবে নড়েচড়ে বসেছিল। কিন্তু উপযুক্ত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।” জেলা আবগারি সুপার তপনকুমার রায় বলেন, “সরকারি মদের বোতল জাল হওয়ার সম্ভবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। একথা একজন সরকারি আধিকারিক হিসাবে আমি বলতে পারি না। তবে তারাপীঠের ক্ষেত্রে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত, কী হয়েছে বলা যাবে না।”

ছবি: অনির্বাণ সেন ও উদিত সিংহ।
তথ্য সহায়তা: রানা সেনগুপ্ত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.