নিজস্ব সংবাদদাতা • পূর্বস্থলী |
তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে তেতে উঠল মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রাম পঞ্চায়েতের ডাকবাংলো এলাকা। মঙ্গলবার বিকেল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত চলে সংঘর্ষ। ভাঙচুর করা হয়েছে তৃণমূলের একটি কার্যালয়-সহ ৮টি বাড়ি। সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতেরা সবাই এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। বুধবার রাত পর্যন্ত এলাকায় চাপা উত্তেজনা রয়েছে।
তৃণমূল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় তৃণমূলের মূলত দুটি গোষ্ঠী। একটি কুসুমগ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান কিতাবুল শেখের ও অন্যটি হল মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য রসিদ শেখের। এলাকা দখল নিয়ে ওই দুই গোষ্ঠীর বিবাদ দীর্ঘদিনের। এ বছর পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হওয়ার পর সেই বিবাদ চরমে ওঠে। মঙ্গলবার দুপুরে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে পঞ্চায়েত দফতরে স্টিয়ারিং কমিটির একটি বৈঠক ছিল। ওই বৈঠকে পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কিতাবুল শেখকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবুও তিনি ওই বৈঠকে আসেন। বৈঠকে ঢুকে তিনি দাবি করেন, তাঁর উপর নানা ভাবে মিথ্যা অভিযোগ চাপানো হচ্ছে। ফলে তিনি নিয়মিত পঞ্চায়েতে আসতে পারছেন না। কিতাবুল শেখের অভিযোগ, এরপর রসিদ শেখের অনুগামী দুই পঞ্চায়েত সদস্য তাঁকে ঘর থেকে জোর করে বের করে দেয়। এরপরেই শুরু হয় গণ্ডগোল। |
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় ডাকবাংলো এলাকায় তৃণমূলের একটি দলীয় কার্যালয়-সহ ৮টি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। রাতে কালনার এসডিপিও ইন্দ্রজিত্ সরকারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে ৯ জনকে গ্রেফতার করে। রাতে আর অশান্তি না হলেও বুধবার সকাল থেকেই ফের গোলমাল শুরু হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। বুধবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ধৃতদের বিরুদ্ধে মারধর, ভাঙচুর, এলাকায় উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশের টহল চলছে।”
উপপ্রধান কিতাবুল শেখের অভিযোগ, “দলেরই কিছু লোক সিপিএমের কিছু লোকজনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। আমার স্ত্রীও এই হামলায় আহত হয়েছেন। কিন্তু পুলিশ বেছে বেছে আমার সমর্থকদেরই গ্রেফতার করেছে।” অন্য গোষ্ঠীর নেতা রসিদ শেখের পাল্টা দাবি, “উপপ্রধানের বিরুদ্ধে এলাকায় দল বিরোধী কাজের অভিযোগ রয়েছে। তার কাজে বিরক্ত এলাকার মানুষই মঙ্গলবার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছে।” এই ঘটনাকে দলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ বলে তিনি মানতে চাননি। তবে তৃণমূলের মন্তেশ্বর ব্লক কমিটির সভাপতি সজল পাঁজা বলেন, “নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরণের ঘটনা আর না ঘটে সেই বিষয়ে দলীয় স্তরে বৈঠক করা হবে।” মন্তেশ্বর ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ অবশ্য নতুন ঘটনা নয়। কয়েক মাস আগে মন্তেশ্বর পঞ্চায়েতে নলকূপের পাইপের টেন্ডারকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর বিবাদ সামনে চলে আসে। থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। সম্প্রতি এই ব্লকেরই মাঝেরহার পঞ্চায়েতে গাছ বিক্রিকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর লড়াই বেঁধেছিল। এই ঘটনার পরেও মহকুমাশাসক, বিডিও, বন দফতর-সহ বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছিল। |