নিজস্ব সংবাদদাতা • বর্ধমান |
৩৫টি ওয়ার্ডের জল কর মকুব করতে চলেছে বর্ধমান পুরসভা। মঙ্গলবার পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে জানুয়ারি থেকে বর্ধমানের নাগরিকদের পানীয় জল বাবদ গ্রাহক পিছু মাসিক ১৫ টাকার কর আর দিতে হবে না বলে জানিয়েছেন পুরপিতা পারিষদ সদস্য (পূর্ত বিভাগ) খোকন দাস।
তবে এই কর উঠে যাওয়ায় বছরে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকার আয় হারাবে পুরসভা। সেই ক্ষতি কীভাবে পূরণ করা হবে তা জানতে চাওয়া হলে পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, অন্য খাতের আয় থেকে ওই ক্ষতি মেটানো হবে।
পুরসভার পানীয় জল সরবরাহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর মহম্মদ সেলিম জানান, বর্ধমান পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডে ২৫ হাজারের কিছু বেশি গ্রাহককে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। সেখান থেকে মাসে ১৫ টাকা হিসেবে প্রতি মাসে ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা আয় হয় পুরসভার। বছরে তা গিয়ে দাঁড়ায় ৪৫ লক্ষ টাকায়। এছাড়া কোনও গ্রাহকের ত্রৈমাসির কর ন্যূনতম ৫৭ টাকা ৭৫ পয়সা হলেই তিনি বাড়িতে পুরসভার সরবরাহ করা পানীয় জল নিতে পারেন। বাড়িতে জল নিতে গেলে পুরসভার মূল জল সরবরাহের পাইপ থেকে গ্রাহকের বাড়ির দূরত্ব, সেখানে পাইপ নিয়ে যেতে কতটা রাস্তা খুঁড়তে হবে, কতটা দীর্ঘ পাইপ লাগবে সেই সমস্ত হিসেব করে প্রাথমিক খরচ পড়ে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা। |
জলবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান শহরে প্রতিদিন ৬৬ লক্ষ ৬০ হাজার গ্যালন জল সরবরাহ করা হয়। সকাল, দুপুর, বিকেল মিলিয়ে প্রতি দিনই ছ’ঘন্টা ধরে জল সরবরাহ করা হয়। গত ১৯৯২-৯৩ সাল থেকে বামফ্রন্ট পরিচালিত বর্ধমান পুরসভা বাড়িতে জল নেওয়া বাবদ জলকর নেওয়া শুরু করে। তবে ‘হোল্ডিং ট্যাক্সে’র মধ্যেও এই জলকর ধরা থাকত। উপ-পুরপ্রধান খোন্দেকার মহম্মদ সাহিদুল্লাহ বলেন, “ক্ষমতায় আসার পরেই আমরা ঠিক করি বামফ্রন্টের আমলে চালু করা জলকর থেকে বর্ধমানের মানুষকে রেহাই দেব। মঙ্গলবারের বোর্ড মিটিংয়ে তাই সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ওই কর মকুব করা হবে।”
কিন্তু জলকর মকুব করলেও, শহরের প্রায় ৭০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে শতকরা ৬৫ ভাগের কাছেই এখনও বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতে উঠতে পারেনি পুরসভা। প্রায় ৮০০ জন দীর্ঘ দিন ধরে বাড়িতে জল নিতে চেয়ে দরখাস্ত করে বসে রয়েছেন পুরসভার কাছে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জলবিভাগ সূত্রে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই তাঁদের বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়া হবে। খোকন দাস বলেন, “শহরের বুকে আরও বেশ কয়েকটি পাম্প হাউস নির্মাণের কথা রয়েছে। দামোদর থেকে জল তুলে তা শোধন করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ারও কথা রয়েছে। এগুলি হয়ে গেলে শহরে আর পানীয় জলের অভাব থাকবে না। সব গ্রাহকের কাছেই জল পৌঁছে যাবে।” বিষয়টি নিয়ে পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা সিপিএম নেতা আইনূল হক বলেন, “জলকর নেওয়াটা বেআইনি নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের জওহরলাল নেহরু আর্বান রিনিউয়্যাল মিশন বা জেএনএনআরইউএন-র নির্দেশিকা মেনেই জলকর নেওয়া হয়েছিল। ওরা যদি ঠিক করেন, তা নেওয়া হবে না, তাহলে সেটা ওদের সিদ্ধান্ত।” তবে এই সিদ্ধান্তের ফলে বর্ধমানের মানুষ ভবিষ্যতে যথাযথ পুর পরিষেবা পাবেন কী না তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আইনূল হক। |