কর্মসংস্থান
আপনি কে যে দেরির কৈফিয়ত দেব
সাড়ে ১১টার আগে বাবুরা অফিসে আসেন না গোড়াতেই বলে দিয়েছিলেন জনা দুই কর্মী।
দরজার তালা অবশ্য সকাল ১০টার আগেই খোলা হয়ে গিয়েছিল। বর্ধমানে কাটোয়ার কর্মসংস্থান কেন্দ্রের বাইরে জড়ো হয়ে গিয়েছিলেন বেশ কিছু কর্মপ্রার্থী তরুণ-তরুণী।
নৈশপ্রহরী বান্দোয়া দাস তখন অফিসের বারান্দায় চেয়ার পেতে বসে। তিনি একা কুম্ভ। তাই তালা খুললেও শিকল তোলা।
১০টা ১০ পেরিয়ে গিয়েছে। আর কারও দেখা নেই। বাইরের ভিড় উসখুস শুরু করেছে।
১০টা ১৩। সাইকেলে চেপে প্রহরীর প্রথম সঙ্গী এসে পৌঁছলেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী শমীক পাপড়ি। তিনি যে কত কাজের, তা অবশ্য তখনও বোঝা যায়নি। সাইকেলটা দফতরের ভিতর রেখে তিনি চলে এলেন বাইরে। শীত-সকালের হাল্কা রোদ পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে বিড়ি ধরালেন। ফুকফুক করে টানা হল কিছু ক্ষণ। জনতা চাতক আগ্রহে তাকিয়ে। শেষ সুখটান দিয়ে বিড়ির টুকরো ছুড়ে ফেলে নথিপত্র জমা নেওয়ার কাজ শুরু করলেন পাপড়িবাবু। বেসরকারি অফিস হলে হয়তো করণিকের চাকরি খেয়ে তিনিই জাঁকিয়ে বসতেন।
১০টা ২৫। কাঁধে কালো ব্যাগ নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে দফতরে ঢুকলেন করণিক অশোক মণ্ডল। কাটোয়া শহরের ভূতনাথতলার এই অফিস থেকে মিনিট পাঁচেক পথ গেলেই, মাধাইতলা আশ্রমের কাছে তাঁর বাড়ি। এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নাম নথিভুক্ত করার কাজ শুরু হতেই সাড়ে ১০টা বেজে গেল। মন্দের ভাল একটাই, অশোক-পাপড়ির করকমলে কেন্দ্রের ভার সঁপে এ বার সাইকেল বের করে বাড়ির পথ ধরলেন প্রহরী বান্দোয়া।
অফিসের বাইরে অধীর অপেক্ষা। ফাঁকা কর্মীদের ঘর।
প্রহরীর সাইকেলের মতোই নড়বড়ে দশা কর্মসংস্থান কেন্দ্রের বাড়িটির। ভূতনাথতলার গলিতে ১৯৭২ সাল থেকে কেন্দ্রটি চলছে। বাড়ির গা থেকে কবে পলেস্তারা খুলে পড়েছে, তা দফতরের কর্মী থেকে স্থানীয় বাসিন্দা কেউই মনে করতে পারছেন না। বাইরের দিকে নোনা ধরা ইট বেরিয়ে আছে। দেওয়ালের গায়ে অসংখ্য গাছ। বৃষ্টি হলেই ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। নথিপত্রও নষ্ট হচ্ছে বলে কর্মীদের আক্ষেপ।
যেন বাড়ি ঠিক হলেই বাকি সব ঠিকঠাক চলত!
বেলা ১১টা। একতলায় দুই কর্মী এবং দোতলায় এক জন ছাড়া আর কেউ তখনও এসে পৌঁছননি। ‘বড়বাবু’ অর্থাত্‌ আধিকারিক কুমারেশ নন্দী, ভেকেন্সি অফিসার মলয় নন্দী এবং আর এক অফিসার শুভশান্তি দত্তেরও দেখা নেই।
বেলা ১১টা ২০। অফিসে পৌঁছলেন ভেকেন্সি অফিসার। --কী স্যার, এত দেরি?
মলয় নন্দী: আমি তো এখানেই থাকি! বিশেষ কাজে বাড়ি গিয়েছিলাম। ট্রেনে গণ্ডগোল, তাই দেরি হয়ে গেল। (কর্মীরা অবশ্য আগেই জানিয়ে রেখেছেন, মেমারির কাছে বৈঁচি গ্রামে তাঁর বাড়ি। সেখান থেকেই রোজ তিনি ব্যান্ডেল হয়ে যাতায়াত করেন।)
বেলা ১১টা ৩০। শুভশান্তি দত্ত অফিসে ঢুকলেন একেবারে কর্মীদের ভবিষ্যদ্বাণী কাঁটায়-কাঁটায় মিলিয়ে। চেয়ারে বসলেন, তখন তাঁর মাথার উপরে কাঁটা ছুঁয়েছে ১১ টা ৪০। এত দেরিতে এলেন কেন?
শুভশান্তি দত্ত (হাজিরা খাতায় সই করতে করতে): আপনি কে যে আপনাকে কৈফিয়ত দেব? (পরিচয় দিতেই বাবুর চোখে-মুখে অশান্তি স্পষ্ট হয়ে উঠল।)
ফাঁকা আধিকারিকের ঘর। পৌঁছলেন কর্মী শুভ্রশান্তি দত্ত।
আর যাঁরা নানা কাজে সকাল থেকে এসে হত্যে দিয়েছিলেন?
কাটোয়ার সিঙ্গি থেকে মেয়ের নাম নথিভুক্ত করতে আসা শেখ আসফর এসেছিলেন। নথিপত্র জমা দিয়েছেন। সেই থেকে মোবাইলে এসএমএস আসছে। তাঁর আক্ষেপ, “এর পরে আমাদের কী করতে হবে, তা জানতে এসেছিলাম। কিন্তু কোনও অফিসার না থাকায় কিছুই জানতে পারলাম না। যাই, মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়ে দেখি।” এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নাম তুলবেন বলে কেতুগ্রামের সেরান্দি থেকে এসেছিলেন চিন্ময় ঘোষ। বহু ক্ষণ অপেক্ষার পরে নথি জমা দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের বাড়ি বীরভূম লাগোয়া গ্রামে। সেই কখন এসেছি। এতক্ষণে কাগজপত্র জমা দিলাম। কখন যে ছাড়া পাব!”
বেলা বাড়তে ভিড়ও বাড়তে শুরু করল। কাটোয়া শহরের যুবক-যুবতীরা আসতে শুরু করলেন। তাঁদেরও প্রশ্ন করা গেল: এত পরে আসছেন? জবাব এল, “তাড়াতাড়ি এসে আগে অনেক পস্তেছি। আপনি নতুন না কি?”
দুপুর ১২টা বাজতে ১০। তখনও আসেননি আধিকারিক কুমারেশবাবু। তিনি আসবেন না? “উনি বোধহয় ছুটি নিয়েছেন। গত কালই বলছিলেন” মুখ নিচু করে মলয় বাতাসের মতো গুনগুন করলেন ভেকেন্সি অফিসার।

ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.