অনুতাপ নেই নাবালকের

১৫ ডিসেম্বর
নুশোচনার কোনও লক্ষণ তো নেই-ই। বরং যত দিন যাচ্ছে, ছেলেটির আচার-আচরণ ততই আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তাকে সামলাতে কালঘাম ছুটছে কাউন্সেলর আর ওয়েলফেয়ার অফিসারদের।
নির্ভয়ার ধর্ষক-খুনিদের মধ্যে এই ছেলেটিই ছিল ছ’জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হিংস্র, নৃশংস। নাবালক বলে মাত্র তিন বছরের জেল হয়েছে তার। কিশোর অপরাধীদের জন্য বিশেষ হোমে রয়েছে সে। মজনু কা টিলায় ম্যাগাজিন রোডের ওই হোমের কর্তারা বলছেন, এই এক বছরে তার আচার-আচারণে কোনও উন্নতি চোখে পড়েনি। প্রথমে সে নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিত। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এখন সেটাও অস্বীকার করছে সে। যত দিন যাচ্ছে, তাকে সামলানো আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে শাস্তি ঘোষণার পরে যখন সে বুঝতে পেরেছে, দু’বছর পরেই সে ছাড়া পেয়ে যাবে, ততই সে আরও উদ্ধত হয়ে উঠছে।
নির্ভয়ার ঘটনার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে কাল, সোমবার। খুন-ধর্ষণের মতো জঘন্যতম অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে সাবালকত্বের বয়স কত হওয়া উচিত, এই নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্ক এখনও মেটেনি। কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যেও এ নিয়ে মতভেদ ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চাইছিল, ১৮ থেকে কমিয়ে বসয়সীমা ১৬ বছরে নিয়ে আসা হোক। কিন্তু বাদ সেধেছিল শিশু কল্যাণ মন্ত্রক। কিন্তু এ বার সেই মতভেদ কেটে গিয়েছে। মন্ত্রিসভায় আলোচনার জন্য একটি নোট তৈরি করেছে শিশুকল্যাণ মন্ত্রক। সেখানে বলা হয়েছে, জঘন্যতম অপরাধের ক্ষেত্রে সাবালকত্বের বয়সসীমা ১৮ বছর থেকে কমিয়ে ১৬ বছরে নিয়ে আসা হবে। ১৬ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে থাকা অপরাধীদের ক্ষেত্রে কোন কোন অপরাধ জঘন্যতম বলে গণ্য হবে, তা ঠিক করার ভার জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হবে। অপরাধের মাত্রা, অতীত ইতিহাস, সাক্ষ্যপ্রমাণ, আর্থসামাজিক প্রেক্ষিত এবং অপরাধীর মানসিক অবস্থা খতিয়ে দেখে বিচারকরাই সিদ্ধান্ত নেবেন, তাকে সাবালক নাকি নাবালক হিসেবে বিচার হবে তার।
শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, নির্ভয়ার পরে মুম্বইয়ে চিত্রসাংবাদিক ধর্ষণ এবং গুয়াহাটির শ্লীলতাহানির ঘটনাতেও দেখা গিয়েছে, কিশোররা এই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু বর্তমান আইনে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না। অন্য দিকে বয়সসীমা কমানোর ক্ষেত্রে একটাই সমস্যা রয়েছে। তা হল, রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ অনুযায়ী অপরাধের ক্ষেত্রে ১৮ বছরের কমবয়সী সকলকেই শিশু বলে ধরতে হবে। ভারতও সেই সনদে সই করেছে। সেই কারণেই মন্ত্রিসভার আলোচনার জন্য নোটে ‘শিশু’র বদলে ‘নাবালক’ শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
নির্ভয়ার পরিবারের বক্তব্য, নাবালক বলে ছাড়া পাওয়া উচিত নয় অপরাধীর। আজও নির্ভয়ার বাবা বলেন, “আমরা এখনও বিচার পাইনি। বাকিদের সঙ্গে ওই কিশোর অপরাধীর ফাঁসি হলে তবেই আমরা শান্তিতে ঘুমোতে পারব।” এ জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন তিনি। অপরাধ ঘটানোর সময় ছেলেটির বয়স ১৮ বছর হতে ছয় মাস বাকি ছিল। বিচার চলাকালীন তার বয়স ১৮ বছর পেরিয়ে যায়। তা সত্ত্বেও আইন অনুযায়ী জুভেনাইল বোর্ডেই বিচার হয়েছে তার। নাবালকদের ক্ষেত্রে খুন-ধর্ষণে যা সর্বোচ্চ শাস্তি, সেটাই হয়েছে তার। সেপ্টেম্বর মাসে রায় ঘোষণার সময় এত কম সাজা মানতে না পেরে ছেলেটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন নির্ভয়ার ভাই। নাবালক অপরাধীর কিন্তু কোনও হেলদোল নেই, জানাচ্ছেন হোমের কর্তারা।
উত্তরপ্রদেশের বাদায়ুন থেকে মাত্র আট বছর বয়সেই দিল্লি চলে এসেছিল ছেলেটি। খুচরো কাজের সঙ্গে ধীরে ধীরে নেশাভাঙ, ছোটখাটো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এভাবেই তার সঙ্গে নির্ভয়া-ধর্ষণের মূল পাণ্ডা রাম সিংহের সঙ্গে পরিচয়। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বরের ধর্ষণ-কাণ্ডের পর পুলিশ যখন দোষীদের হন্যে হয়ে খুঁজছে, তখন দিল্লি ছেড়ে পালাবার চেষ্টা করেছিল সে। কিন্তু আনন্দ বিহারের আন্তঃরাজ্য বাস টার্মিনাসে ধরা পড়ে যায়। তারপর থেকেই ম্যাগাজিন রোডের হোমে বন্দি সে। জঘন্যতম অপরাধের সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের জন্য হোমে আলাদা বিভাগ রয়েছে। সেখানেই একটা আট ফুট বাই আট ফুট ঘরে তার থাকার বন্দোবস্ত। হোমের অন্যদের সঙ্গে সে যাতে মারামারিতে জড়িয়ে না পড়ে বা কোনওভাবে আত্মহত্যার চেষ্টা না করে, সে জন্য তার উপর লাগাতার নজরদারি করা হয়। তাকে লেখাপড়া শেখানোরও চেষ্টা হচ্ছে।
হোমের কর্তারা বলছেন, “অধিকাংশ সময় শান্ত থাকলেও কোনও চাহিদা পূরণ না হলেই সে অশান্ত হয়ে পড়ে। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নালিশের হুমকি দেয়। গালিগালাজও করে।” হোমের কর্তারা এবং মনস্তত্ত্ববিদরা কথা বলে তার অপরাধের গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। ওই অপরাধের জন্য যাতে তার মনে অনুশোচনা আসে, সেই চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও লাভ হয়নি।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.