|
|
|
|
দিল্লি গণধর্ষণ মামলা |
নাবালক ধর্ষকের সাজা ৩ বছর, বিতর্ক |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
দিল্লির রাস্তায় চলন্ত বাসে প্যারামেডিক্যাল ছাত্রীকে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত নাবালককে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। নাবালক বিচার আইনে এই অপরাধে সর্বোচ্চ ৩ বছরের জন্য বিশেষ সংশোধনাগারে থাকতে হবে তাকে এবং এ দিন সেই শাস্তিই তাকে দিয়েছে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড। রায়ে হতাশ ওই ছাত্রীর (যাকে নির্ভয়া বলেই জানে সারা দেশ) পরিবার জানিয়েছে, তারা ওই নাবালকের আরও কড়া শাস্তি চেয়ে উচ্চতর আদালতে যাবে। রায় ঘোষণার পরে অভিযুক্ত নাবালককে মারতে যান নির্ভয়ার ভাই। তবে সেখানে উপস্থিত লোকেরা তাঁকে ধরে ফেলেন। সাধারণ মানুষ এবং বিশিষ্টজনেদেরও একটা বড় অংশ এই রায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দুপুরে রায় ঘোষণার পরেই তা পুনর্বিবেচনার দাবিতে বেশ কয়েক জন জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড চত্বরের সামনে বিক্ষোভ দেখান।
শনিবার সকাল থেকেই জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সামনে সাংবাদিকদের ভিড় ছিল দেখার মতো। সকালে অভিযুক্ত ওই নাবালককে নিয়ে আসা হয় বোর্ডের বিশেষ দফতরে। তার মুখ ঢাকা ছিল। রায় শোনার পরে ক্ষুব্ধ নির্ভয়ার মা বলেন, “আমরা এই রায় মেনে নিতে পারছি না।” প্রথম দিন থেকেই বোর্ডের কাছে তাঁর আবেদন ছিল, বয়স নয়, অপরাধের মাত্রা দেখে শাস্তি দেওয়া উচিত। আজ রায় শোনার পরে তিনি বলেন, “আমি আইন বুঝি না। কিন্তু একই অপরাধ করার পরে কারও বিরুদ্ধে খুনের মামলা আনা হবে আর কেউ মাত্র তিন বছর সংশোধনাগারে থেকে ছাড়া পেয়ে যাবে, এটা ভাবা যায় না।” |
|
শনিবার রায় ঘোষণার পরে নয়াদিল্লিতে জুভেনাইল জাস্টিস
বোর্ডের বাইরে জনতার প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই। |
নির্ভয়ার বাবা বলেন, “আমি চেয়েছিলাম, ওর ফাঁসি হোক। এ ভাবে ছাড়া পেয়ে গেলে সমাজের কাছে ভুল বার্তা যাবে।” যে কেউ অপরাধ করার সাহস পেয়ে যাবে বলেও মনে করেন নির্ভয়ার বাবা। তাঁর মতে, এ দেশে মেয়ে হয়ে জন্মানোই বড় অপরাধ। “এর পর কন্যা ভ্রূণহত্যার ঘটনা ঘটলে আমি তো বলব, ভালই হল! অন্তত মেয়ে হয়ে জন্মানোর অপরাধে যন্ত্রণা পেয়ে মরতে হল না!” সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পেয়ে ওই অভিযুক্ত নাবালক ভবিষ্যতে দাগী অপরাধী হবে বলেই মনে করেন তিনি।
রায় শুনে আদালত চত্বরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন নির্ভয়ার ভাই। অভিযুক্তকে মারতে গিয়েও বাকিদের বাধায় সফল হননি। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে তিনি বলেন, “আমি ওর মুখ দেখেছি। অনুশোচনার চিহ্নমাত্র ছিল না।” দিদির উপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে যারা, তাদের এক জনের কড়া শাস্তি হবে, এই আশায় আজ সকাল থেকেই বাবা-মার সঙ্গে হাজির ছিলেন জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের বিশেষ কক্ষে। রায় ঘোষণার পরে বলেন, “১৬ ডিসেম্বর রাতের ওই ভয়াবহ ঘটনার পর ভাল করে ঘুম আসে না। মা সব সময় কাঁদে।” সেই সঙ্গেই অভিযুক্ত নাবালকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, “আমি শুনেছি, যেখানে এখন ওই অভিযুক্তকে রাখা হয়েছে, সেখানেও ও ছুরি নিয়ে মারপিট করেছে।”
দিল্লি গণধর্ষণের পরে এই নাবালকের বিচার এবং শাস্তি নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্ক চরমে ওঠে। তখনই পুলিশ জানিয়েছিল, নির্ভয়ার উপর নির্যাতনের ব্যাপারে ওই নাবালকের ভূমিকাই ছিল সব চেয়ে বেশি। আর তার পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, তা হলে কেন শুধু মাত্র বয়সের কারণে অন্য অভিযুক্তদের চেয়ে কম শাস্তি পাবে ওই নাবালক। ১৮ বছরের বদলে ১৬ বছরেই সাবালক গণ্য করার দাবিও উঠেছিল। গণধর্ষণের পরে বিক্ষোভের চাপে পড়ে ধর্ষণ আইন খতিয়ে দেখার জন্য বিচারপতি জে এস বর্মার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে ইউপিএ সরকার। যদিও সেই কমিটি ১৬ বছরে সাবালকত্বের দাবি মেনে নেওয়ার সুপারিশ করেনি। কমিটির সদস্য বিচারপতি লায়লা শেঠ পরে বলেন, “১৬ বছরে সাবালক গণ্য করার বিষয়টি অপরাধতত্ত্ব ও চিকিৎসাশাস্ত্রের দিক থেকে খতিয়ে দেখেছি। মনে হয় না সাবালক হিসেবে গণ্য হওয়ার বয়সসীমা কমানোর প্রয়োজন আছে।” নাবালকদের সংশোধনাগারে বদলানোর সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সাবালক হওয়ার বয়স কমাতে রাজি হয়নি সুপ্রিম কোর্টও। লায়লার মতকে সমর্থন করেছে অনেক শিশু অধিকার সংগঠনও।
কিন্তু আজকের রায় ফের পুরনো সেই বিতর্ককে উস্কে দিয়েছে। রায় শুনে টুইটারে অভিনেতা অনুপম খের বলেন, “অকল্পনীয় অপরাধ করে তিন বছর পরে বাড়ি ফিরে যাবে ও! ....আমাদের আইনব্যবস্থা নিয়ে আমি লজ্জিত!” কিরণ বেদি বলেছেন, “আদালতের রোবটের মতো কাজ করা উচিত নয়...আমরা আইন তৈরি করি সুবিচার দিতে, তার দাস হয়ে থাকতে নয়।” আইনের ফাঁক গলে ওই অপরাধী বাইরে বেরিয়ে গেল বলে মনে করেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান সুনন্দা মুখোপাধ্যায়, সাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্যের মতো ব্যক্তিত্বরাও। বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছেন, বয়স নির্বিশেষে অপরাধের গুরুত্ব দেখে শাস্তি দেওয়া নিয়ে শীঘ্রই তিনি সংসদে একটি বিল আনবেন।
ভারতে যখন এই বিতর্ক চলছে তখন অন্য দেশে চিত্রটা কী? আমেরিকায় রাজ্য ভেদে সাবালক হওয়ার বয়স বদলায়। তবে ২০০৫ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় মেনে কোনও রাজ্যেই ১৮ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় না। তবে ভয়ঙ্কর অপরাধের ক্ষেত্রে নাবালকদের যাবজ্জীবনের ব্যবস্থা আছে। ব্রিটেনে ১৬ বছরের বেশি বয়সীরা গুরুতর অপরাধ করলে অনেক বেশি সময় আটক রাখা যায়।
|
পুরনো খবর: ধর্ষণে চিন্তিত শীর্ষ আদালত |
|
|
|
|
|