ইয়াসিন বিস্ফোরক নিয়েছে কলকাতায়: বিলাল
দিয়ার ‘ক্যুরিয়র’ আনোয়ার হোসেন মল্লিক আগেই জানিয়েছিল। ইয়াসিন ভটকল যে কলকাতায় এসে বিস্ফোরক নিয়ে গিয়েছিল, তার ঘনিষ্ঠ শাগরেদ কামাল হাসান ওরফে বিলালের কাছ থেকেও তা জানা গেল।
ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বিলাল ২০১০-এর এপ্রিলে বেঙ্গালুরুতে বিস্ফোরণ এবং সে বছরেরই সেপ্টেম্বরে দিল্লির জামা মসজিদে হামলার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত। সম্প্রতি তিহাড় জেলে গিয়ে বিলালকে জেরা করেছেন কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর গোয়েন্দারা। তখনই বিলাল জানিয়েছে, তিন বছর আগে ইয়াসিন তার সঙ্গে কলকাতায় যায় এবং বিস্ফোরক নিয়ে আসে।
এসটিএফ সূত্রের খবর, জাহিদ ওরফে মনসুর নামে আইএমের এক চাঁই আনোয়ারকে আট কেজি বিস্ফোরকের প্যাকেট দিয়েছিল এক জনের হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। সে যাত্রা ইয়াসিন ও বিলাল কলকাতায় এসে বউবাজারে হুমায়ুন নামে এক জনের বাড়িতে এক রাত কাটায়। তার পর সায়েন্স সিটি-র উল্টো দিকে একটি চায়ের দোকানে আনোয়ারের সঙ্গে তারা দেখা করে। আনোয়ার তাদের দু’জনকে নিয়ে যায় তিলজলায় ভিআইপি নগরের এক বাড়িতে। সেটি আনোয়ারেরই গ্রামের মেয়ে, পেশায় নার্স এক জনের বাড়ি। সেখানেই জাহিদের দেওয়া প্যাকেট রেখেছিল আনোয়ার। বিলালের সঙ্গে ওই বাড়িতে গিয়ে ইয়াসিন বিস্ফোরক ভর্তি প্যাকেট নেয় আনোয়ারের কাছ থেকে ও খুশি হয়ে তাকে তিন হাজার টাকা দেয়।
কিন্তু এ কথা জেনে গোয়েন্দারা তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন যে, বিলালের মতো তার খাস লোককেও ইয়াসিন জানায়নি যে ওই প্যাকেটে বিস্ফোরক রয়েছে। এসটিএফের তদন্তকারীদের কাছে বিলাল বলেছে, ইয়াসিন সে সময়ে জানিয়েছিল, ওই প্যাকেটে টাকা আছে। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, “আইএমের মতো জঙ্গি সংগঠনের ডান হাতও যে বাঁ হাতকে অন্ধকারে রাখে, এই ঘটনা তার প্রমাণ। যাতে কেউ ধরা পড়লেও তথ্য না ফাঁস হয়। গুলিয়ে দেওয়া যায় তদন্ত। যেমন, আনোয়ার আমাদের হাতে ধরা পড়ার আগে জানত, সে ইউসুফ নামে এক জনের হাতে টাকার প্যাকেট তুলে দিয়েছে। তাকে বিভিন্ন জঙ্গির ছবি দেখিয়ে আমরা বুঝে যাই, ইউসুফ আসলে ইয়াসিন ভটকল।”
ইয়াসিনের শাগরেদ বিলালকে গত বছর ১০ এপ্রিল হাওড়া স্টেশন থেকে বেঙ্গালুরুর সেন্ট্রাল ক্রাইম ব্রাঞ্চের একটি বিশেষ দল গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পরে জামা মসজিদ হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত বিলালকে হেফাজতে নেয় দিল্লি পুলিশ এবং এখন সে তিহাড় জেলে। সেখানে গিয়ে বিলালকে জেরা করার পর এ বার তাকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে এসটিএফ। আনোয়ারের বিরুদ্ধে এসটিএফ যে মামলা রুজু করেছে, তার তদন্তেই বিলালকে হেফাজতে নেওয়া হবে।
বিস্ফোরক পাচারের মামলায়
আনোয়ার হোসেনকে হেফাজতে
চেয়ে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে ৭
জুলাই পেশ করা কলকাতা
পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক
ফোর্সের আর্জি।
এই মামলায় তিন নম্বর
অভিযুক্ত ইয়াসিন ভটকল।
তবে ওই মামলায় (এসটিএফ থানা কেস নম্বর ১০, তারিখ: ৬/৭/২০১৩) অভিযুক্ত হিসেবে বিলালের নাম এফআইআরে নেই। ইয়াসিনের নাম কিন্তু এফআইআরে অভিযুক্তদের তালিকায় তিন নম্বরে। এই মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে ইয়াসিনকে জেরা করতে আগামী সপ্তাহেই এসটিএফের একটি দল দিল্লি যাবে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা শনিবার বলেন, “আমরা এই ব্যাপারে আইবি এবং এনআইএ-র সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। দেশের যে সব জায়গায় বিস্ফোরণের সঙ্গে ইয়াসিন ভটকলের নাম সরাসরি জড়িয়েছে, স্বাভাবিক ভাবেই সেখানকার পুলিশ আগে তাকে জেরার সুযোগ পাচ্ছে।”
কলকাতা পুলিশের বক্তব্য, দেশের বহু শহরে বিস্ফোরণের মামলায় তদন্তের পরে ইয়াসিন ভটকলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে চার্জশিটে। কিন্তু জঙ্গি কার্যকলাপ সংক্রান্ত কোনও মামলার এফআইআরে তার নাম সম্ভবত এই প্রথম। ওই মামলায় এক নম্বর অভিযুক্ত নদিয়ার আনোয়ার। দু’নম্বরে নাম রয়েছে খালিক নামে এক জনের। এসটিএফের দাবি, গত ৬ জুলাই রাতে বিবাদী বাগ এলাকায় আনোয়ার বিস্ফোরক নিয়ে ধরা পড়ে এবং ওই বিস্ফোরক খালিক নামে ওই ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল তার। আর চতুর্থ অভিযুক্ত হল জাহিদ। বাংলাদেশে গিয়ে যার কাছ থেকে বিস্ফোরক নিয়ে আসত আনোয়ার।
লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, “আমদাবাদ, সুরাত, জয়পুর, দিল্লি, বারাণসী, বেঙ্গালুরু, পুণে, মুম্বই, হায়দরাবাদের মতো শহরে বিস্ফোরণের ঘটনায় ইয়াসিন ভটকল সরাসরি অভিযুক্ত। কিন্তু কলকাতায় সে রকম ঘটনা না হলেও এখানকার একটি মামলায় এফআইআরে তার নাম রয়েছে। তাই ইয়াসিনকে নিজেদের হেফাজতে পাব বলে আশা করছি।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.