|
|
|
|
রাজধানীর রাত |
চলন্ত বাসে গণধর্ষণ, বন্ধু-সহ
তরুণীকে ছুড়ে ফেলা হল পথে |
সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি |
বাস ছুটছে। চলছে গণধর্ষণ। তবু থামছে না চালক। অসহায় বন্ধু প্রতিবাদ করতে গিয়ে জখম। টানা ৪৫ মিনিট ধরে এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার পরে তরুণী ও তাঁর বন্ধুকে অর্ধনগ্ন, প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে ওই বাসেই চম্পট দিল দুষ্কৃতীরা। কাল এমনই এক আতঙ্কের রাতের সাক্ষী রইল রাজধানী।
বছর ২৩-এর ওই তরুণী ডাক্তারির ছাত্রী। তিনি এখন সফদরজঙ্গ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষছেন। কাল রাতে ধর্ষণের পাশাপাশি তাঁকে এবং তাঁর বন্ধুকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে ধর্ষণকারীরা। ওই ছাত্রীর মুখে এবং পেটে নৃশংস ভাবে মারা হয়। অন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে তাঁর। ভেন্টিলেটরে রয়েছেন তিনি। এর মধ্যেই বেশ কয়েকটি অস্ত্রোপচারও করেছেন চিকিৎকরা। মেয়েটির বন্ধুর মাথায় আঘাত করা হয় লোহার রড দিয়ে। তাঁকে অবশ্য হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। চাকরি করেন একটি সফ্টওয়্যার সংস্থায়। ওই তরুণী পড়েন দেরাদুনের একটি কলেজে। ইন্টার্নশিপের জন্য দিল্লিতে এসেছিলেন।
কী হয়েছিল রবিবার রাতে?
পুলিশ জানিয়েছে, দিল্লির মুনিরকা থেকে পালাম যাওয়ার জন্য রাত পৌনে দশটা নাগাদ বন্ধুর সঙ্গে একটি রঙিন কাচ দেওয়া চার্টার্ড বাসে ওঠে মেয়েটি। সিনেমা দেখে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা। বাসে ছিল চার-পাঁচ জন লোক। কিছু ক্ষণের মধ্যে ওঁদের দু’জনকে ঘিরে ধরে তারা। মেয়েটির বন্ধুর এক আত্মীয় বলেছেন, “বাসে ওঠার দশ মিনিটের মধ্যেই ওরা মেয়েটিকে হেনস্থা করতে শুরু করে। তার পরেই রড বার করে ওঁর বন্ধুকে পেটায়। মেয়েটিকে ওরা টেনে নিয়ে যায় বাসের কেবিনের দিকে। সেখানেই তাঁকে ধর্ষণ করা হয়।”
এখানেই শেষ নয়। মেয়েটির উপর অকথ্য নির্যাতনের পরে তাঁকে পিটিয়ে তাঁর এবং তাঁর বন্ধুর পোশাক খুলে দিয়ে চলন্ত বাস থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয় মহিপালপুর সেতুর ধারে। পুলিশ মূল অভিযুক্ত, বাসচালক রাম সিংহকে গ্রেফতার করেছে।
নয়ডার একটি স্কুল ক্যাম্পাসে আজ বাসটিকে খুঁজে পাওয়া যায়। পুলিশ সূত্রে খবর, বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল বাসটি ভাড়া নেয়। রবিবার কিছু বাড়তি রোজগারের আশায় বাস নিয়ে বেরিয়েছিল রাম সিংহ ও তার সহযোগীরা। আরও অন্তত পাঁচ জন ওই ঘটনায় জড়িত। তাদের এখনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তদন্তের সুবিধার জন্য দুই অভিযুক্তের স্কেচ আঁকিয়েছে পুলিশ। বাসের সিসিটিভি ফুটেজও নানা জায়গায় দেখিয়েছে।
দক্ষিণ দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার জানিয়েছেন, ওই চার-পাঁচ জন মদ্যপ অবস্থায় ছিল বলে অভিযোগ। মহিপালপুর সেতুর ধারে অর্ধনগ্ন অবস্থায় দু’জন পড়ে রয়েছেন পুলিশকে প্রথম এই খবর দেয় একটি টোল প্লাজা পেট্রোল। পুলিশের গাড়িতে প্রথমে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় এইমসে। তার পরে মেয়েটির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে সফদরজঙ্গ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। রাতের ওই ভয়ানক অভিজ্ঞতার পরে মেয়েটির বন্ধু রাত সওয়া একটা নাগাদ বসন্ত বিহার থানায় অভিযোগ জানান। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত জানিয়েছেন, পরিবহণ দফতর ওই বাসের পারমিট বাতিল করেছে। ঘটনার নিন্দা করে জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মমতা শর্মা বলেছেন, “দিল্লিতে এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে। পুলিশ এবং সরকারকে আরও সতর্ক হতে হবে।”
তা ছাড়া, মমতার অভিযোগ, “যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি যথেষ্ট জনবহুল। ওরা ছেলেমেয়ে দু’টিকে নিষ্ঠুর ভাবে মারল। মেয়েটিকে ধর্ষণ করল। দিল্লি পুলিশের সচেতনতা নিয়েই তো প্রশ্ন ওঠে।” |
|
|
|
|
|