|
|
|
|
বিরোধিতায় সরব তৃণমূলনেত্রী |
বিতর্ক সঙ্গী করেই আজ সংসদে জমি বিল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
আগামিকাল সংসদে নতুন চেহারায় পেশ হচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত জমি বিল। কিন্তু সেই চেহারা দেখে শিল্পমহল যেমন খুশি নয়, তেমনই ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জমি অধিগ্রহণ নিয়ে গত কয়েক বছরে সব চেয়ে সরব যিনি, সেই মমতা আজ সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের জমি নীতির তীব্র বিরোধিতা করেন। তাঁর অভিযোগ, বর্তমান জমি বিলে কৃষি মজুরদের কথা ভাবা হয়নি। পাশাপাশি, নিজের পুরনো অবস্থানে অনড় থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আজ আরও এক বার জানিয়ে দেন, বেসরকারি শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে সরকারের ভূমিকা থাকার তিনি ঘোর বিরোধী।
শিল্পমহল কিন্তু বলছে, অধিকাংশ রাজ্যে জমির খণ্ডিত মালিকানার কারণে সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া জমি পাওয়া সম্ভব নয়। জমি বিলে বলা হয়েছে, বেসরকারি শিল্পপতি ৮০ শতাংশ জমি মালিকের সম্মতি পাওয়ার পরে বাকি ২০ শতাংশ জমি সরকার অধিগ্রহণ করতে পারবে। দু’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছে বণিকমহলের কর্তারা অসন্তোষ জানিয়ে বলেছিলেন, শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে সরকারের এক্তিয়ার আরও বাড়াতে হবে।
আজ বিকেলে মমতা সংসদের সেন্ট্রাল হলে এলে তাঁকে জমি বিল নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। মমতা বলেন, “কেন্দ্রের বর্তমান জমি বিল ভ্রান্ত নীতির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। জমি বিলে জমির মালিকদের স্বার্থ দেখা হয়েছে। কিন্তু সেই জমিতে কাজ করে যাঁরা জীবিকা নির্বাহ করেন, তাঁদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের কথা ভাবা হয়নি। এই বিল পাশ হলে কৃষি মজুরদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত পড়বে।”
মমতার এই সংশয় অবশ্য আজই খারিজ করেছে কেন্দ্র। গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মত জানাতেই পারেন। কিন্তু আমাদের সঙ্গেও তৃণমূল স্তরের যোগাযোগ রয়েছে। আমরাও খোঁজখবর নিয়েছি। তার পর জমি বিলে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়েছে।” গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, জমিকে কেন্দ্র করে যাঁরা জীবিকা নির্বাহ করেন, তাঁদের সকলের স্বার্থ দেখা হয়েছে বর্তমান বিলে। “বেসরকারি শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে রাষ্ট্রের কোনও ভূমিকা থাকতে পারে না,” মমতার এই দাবিও খারিজ করে রমেশ ইতিমধ্যেই বলেছেন, শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে সরকারের ভূমিকা থাকা উচিত। সরকারের সেই এক্তিয়ার না-থাকলে শিল্পায়নের পথে বাধা তৈরি হবে। তবে কোনও রাজ্য যদি শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে না-চায়, তা হলে না করতেই পারে। বর্তমান জমি বিলে রাজ্যকে সেই স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রের এই বক্তব্যের সঙ্গে শিল্পমহল এক মত হলেও, যে পরিমাণ জমির জন্য সরকারের ভূমিকা রাখার কথা জমি বিলে বলা হয়েছে, তাতে তারা খুশি নয়। শিল্পমহলের বক্তব্য, অধিকাংশ রাজ্যে জমির মালিকানা যে ভাবে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত, তাতে সরকার মধ্যস্থতা না-করলে বড় শিল্প স্থাপনের জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলির এক লপ্তে বিপুল আয়তনের জমি পেতে অসুবিধা হবে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পুঁজিবাদের বিরোধী হলেও এই একই মত পোষণ করে বাম দলগুলি। সিঙ্গুরে জমি বিতর্কের সময় থেকে সিপিএম বারবার এই যুক্তিই দিয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গে ল্যান্ড হোল্ডিং ছোট ছোট অংশে বিভক্ত। ফলে সরকার জমি অধিগ্রহণ করে না-দিলে বড় শিল্পের জন্য জমি পাওয়া যাবে না।
ফলে বিতর্ক সঙ্গী করেই কাল সংসদে আসছে জমি বিল। গত বছর মমতার সঙ্গে আলোচনাক্রমে একটি জমি বিল সংসদে পেশ হয়েছিল। সেই বিল নিয়ে স্থায়ী কমিটি গত বাজেট অধিবেশনে রিপোর্ট দেয়। পুরনো সেই বিলে প্রায় দেড়শোটি সংশোধনী আনা হয়েছে। সেই সংশোধনী-সহ বিলটি লোকসভায় পেশ হবে। যদিও চলতি অধিবেশনে তা পাশ হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, বৃহস্পতিবারেই শেষ হচ্ছে সংসদের অধিবেশন।
জমি বিলের পাশাপাশি কেন্দ্রের প্রস্তাবিত নগদ হস্তান্তর প্রকল্প নিয়েও আজ আপত্তি জানান মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, কী ভাবে, মানুষের হাতে টাকা তুলে দেওয়া হবে, তা পরিষ্কার নয়। গ্রামেগঞ্জে বহু জায়গায় দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনও ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিস নেই। সেখানে ভর্তুকির টাকা হস্তান্তর হবে কী ভাবে?
তবে কেন্দ্রের এক মন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য সরকার প্রচুর ব্যাঙ্কিং করেসপন্ডেন্ট নিয়োগ করবে। তাঁরাই মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দেবেন। তাই ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস না থাকলেও টাকা সময়েই পৌঁছবে। তা ছাড়া, পশ্চিমবঙ্গে নগদ হস্তান্তর প্রকল্প এখনই শুরু হবে না। তা হবে সম্ভবত আগামী বছরের মাঝামাঝি। ফলে পরিকাঠামো তৈরির জন্য হাতে এখনও সময় আছে।
|
এই সংক্রান্ত খবর... |
|
|
|
|
|
|