এক বছরে বদল কতটা, জিজ্ঞাসা দিল্লিবাসীর

১৫ ডিসেম্বর
পার হয়ে গেল একটা বছর। এই এক বছরে অনেক কিছু দেখেছে দিল্লি। গত বছর ১৬ ডিসেম্বরের রাতে চলন্ত বাসে নির্ভয়ার গণধর্ষণের প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন দিল্লির মানুষ। চাপে পড়ে ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন পর্যন্ত বদলাতে বাধ্য হয় কেন্দ্র। কিন্তু এই এক বছরে পরিস্থিতি কতটা বদলেছে তা জানতে গিয়ে উঠে এল দু’রকমের চিত্র।
দিল্লি পুলিশের একটা রিপোর্ট বলছে, শুধু এই শহরেই ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের ১ হাজার ৪৯৩ টি মামলা দায়ের হয়েছে। গত বছরের তুলনায় যা দ্বিগুণেরও বেশি। বেড়েছে ইভটিজিং বা মেয়েদের পিছু নেওয়ার মতো ঘটনায় মামলার সংখ্যাও। যদিও এই ঘটনাকে কিছুটা হলেও সদর্থক হিসেবেই দেখছে পুলিশ। দিল্লি পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্তার কথায়, “আগে মেয়েরা কলঙ্কের ভয়ে ধর্ষণের মামলা দায়ের করতেন না। কিন্তু এখন মেয়েরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অনেকটা সচেতন হয়েছেন। এগিয়ে আসছেন।” এত সংখ্যক মামলা তারই ফল বলে মনে করেন তিনি।
নির্ভয়া-স্মরণ। দিল্লিতে রবিবার। ছবি: এপি।
দিল্লি পুলিশ আরও জানিয়েছে, এখন মৌখিক বক্তব্যের ভিত্তিতেও এফআইআর করা হয়। রাতে শহর জুড়ে নজরদারি চালানোর জন্য মহিলা পুলিশদের নিয়ে একটা দল গঠন করা হয়েছে। চালু হয়েছে বিশেষ হেল্পলাইন (১৮১)। গঠিত হয়েছে নারীদের উপর অত্যাচার সংক্রান্ত ঘটনার পর্যালোচনার সেল। প্রায় সাড়ে আটশো পিসিআর ভ্যান রাতে নজরদারি চালাচ্ছে বলেও দাবি পুলিশের। যদিও এই দাবি মানতে পারছেন না অনেকেই। ভাবনা তুতেজা দিল্লির একটি বেসরকারি সংস্থায় উচ্চপদে কর্মরত। জানালেন, রাতে বাড়ি ফেরার সময়ে পুলিশের টহলদারি ভ্যান দেখতে পান না। “বেশির ভাগ দিনই অটো চালক নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে অস্বীকার করে। এখনও বেশি রাত হয়ে গেলে ফিরতে খুব ভয় করে,” বললেন আতঙ্কিত ভাবনা।
এই এক বছরে জীবনটা পুরো ওলট পালট হয়ে গিয়েছে একটি বাড়ির বাসিন্দাদের। নির্ভয়ার বাবা-মা। নিজের মনেই বিড়বিড় করে উঠলেন, তাঁ বাবা। “যাওয়ার আগে মেয়ে বলে গেল কয়েক ঘণ্টা পরেই চলে আসছি। সেই যে গেল...। যত দিন যাচ্ছে মেয়ের স্মৃতিগুলো যেন ততটাই চেপে বসছে মাথার মধ্যে।” ২৯ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে মারা গিয়েছিলেন নির্ভয়া। বাৎসরিক কাজ করতে উত্তরপ্রদেশের বালিয়ায় দেশের বাড়িতে যাচ্ছেন তাঁরা। রান্নাঘরে থাকা স্ত্রীর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বললেন, “মেয়ে বড় খেতে ভালবাসত। যখনই কিছু ভাল রান্না হয় ওর কথা মনে পড়ে। খাবার আর গলা দিয়ে নামে না।” কান্নায় গলার স্বরও বুজে আসে। কিছু ক্ষণ চুপ থেকে বললেন, “আমাদের চোখের জল এখনও শুকিয়ে যায়নি। এত সহজে হার মানব না। আমরা বিচার চাই।”
কিন্তু দিল্লি পুলিশের দাবির কথা উঠতেই জ্বলে উঠলেন তিনি। “কোথায় বদল? কীসের বদল?” জোর গলায় বললেন, “সমাজের মানসিকতা না বদলালে এখানকার রাস্তায় মেয়েরা কখনওই নিরাপদ নয়। মেয়েরা বাড়ির বাইরে গেলে বাবা-মায়ের একটু সতর্ক থাকা উচিত।” হঠাৎই থেমে গেলেন তিনি। তাঁর না বলা কথাটাই যেন শোনালেন আইনের ছাত্রী জ্যোতি ভরদ্বাজ, “নির্ভয়া-রায় দিতে আট মাস লাগল। এ রকম লক্ষ লক্ষ মামলা ঝুলে রয়েছে। সরকার দেখুক।” আরও অনেক নির্ভয়া যে অপেক্ষা করছেন বিচারের আশায়।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.