|
|
|
|
ভবিষ্যতে লাভের লোভে দিল্লি অচ্ছুত সবার
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা
১৫ ডিসেম্বর |
হাতে মাত্র তিন দিন। এখনও জট খোলার আশা দেখছে না কোনও পক্ষই। বুধবারের মধ্যে সরকার না গড়া হলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হবে দিল্লিতে। সে ক্ষেত্রে লোকসভা ভোটের সঙ্গেই ফের বিধানসভা ভোট হওয়ার সম্ভাবনা দিল্লিতে। পরিস্থিতির কথা জানিয়ে গত কালই রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে রিপোর্ট দিয়েছিলেন লেফটেন্যান্ট গর্ভনর নাজিব জং। ২৪ ঘণ্টা পরেও দিল্লির ত্রশঙ্কু দশা কাটার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
কংগ্রেস-বিজেপি দু’পক্ষই নিঃশর্ত সমর্থন দিতে প্রস্তুত বলে জানালেও আম আদমি পার্টি (আপ) উভয়ের কাছেই ১৮ দফা মুচলেকা চেয়ে বসে রয়েছে। কিন্তু তা মানা সম্ভব নয় বলে ইতিমধ্যেই ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়ে দিয়েছে দু’দল। বরং সরকার গঠনে নিঃশর্ত সমর্থন দেওয়ার কথা বলে, তড়িঘড়ি লোকপাল বিল পাশ করাতে উদ্যোগী হয়ে এবং অণ্ণা হাজারের সঙ্গে আপ-এর বিরোধকে কাজ লাগিয়ে কংগ্রেস-বিজেপি কার্যত একযোগে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে বেকায়দায় ফেলতে তৎপর। তবু দিল্লিতে বিরোধী আসনে বসার ব্যাপারে অনড়ই রয়েছে আপ। এর পিছনে অন্তত চারটি জোরালো যুক্তি রয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালদের।
এক, এতে দুর্নীতি দমন কিংবা জল ও বিদ্যুতের দাম কমানোর মতো আম আদমির স্বার্থের বিষয়গুলি নিয়ে বড় দুই দল কী ভাবছে, তা জনগণের সামনে নিয়ে আসা যাবে। দুই, ভবিষ্যতে আপ এটাই প্রচারে তুলে ধরতে পারবে যে, মানুষের স্বার্থে কাজ করার সদিচ্ছাই নেই বড় দু’টি দলের। দিল্লিতে ফের ভোট হচ্ছে তাদেরই কারণে। তিন, বাইরে থেকে সমর্থন নিয়ে সরকার গড়লে যে অন্য দলের ইশারায় চলতে হবে, কেজরিওয়ালরা তা বিলক্ষণ জানেন। তাই পরিকল্পিত ভাবেই এমন সব শর্ত সামনে রেখেছেন, যা কংগ্রেস-বিজেপি কারও পক্ষেই মানা সম্ভব হবে না। চার, লোকসভা নির্বাচন মাস ছ’য়েকের মধ্যেই। সমর্থকদের বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে ২৮টি আসন জিতেছেন অরবিন্দ। এখন দিল্লির ক্ষমতা হাতে নিলে সেই প্রত্যাশার সামান্য অংশও পূরণ করা সম্ভব হবে না লোকসভা ভোটের আগে। তাতে দিল্লি বিধানসভা ও লোকসভা, দুই নির্বাচনেই ফল খারাপ হতে পারে আপ-এর।
আপ তাই বিরোধী আসনে বসাকেই সঙ্গত মনে করছে। তাদের কৌশল ভেস্তে দিতে বিজেপি ও কংগ্রেস এখন কার্যত একযোগে লোকপালকে হাতিয়ার করছে। সেই সঙ্গে সরকারের স্থায়িত্বও তাদের আর এক অস্ত্র। কংগ্রেসের বক্তব্য, গত ১৫ বছর দিল্লির মানুষকে স্থায়ী সরকার দিয়েছে কংগ্রেস। শীলা দীক্ষিতের শাসনে দিল্লির সার্বিক উন্নয়নও হয়েছে। দুর্নীতি প্রশ্নে মানুষ যে ক্ষুব্ধ তা সরকার বুঝতে পেরেছে। তাই নিজেদের ভুল শোধরাতে দ্রুত লোকপাল বিল নিয়ে আসারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “লোকপাল বিল এনে দুর্নীতি দমনে আন্তরিকতা দেখানো। অন্য দিকে, আমাদের দলই যে একমাত্র স্থায়িত্ব দিতে পারে, দিল্লিবাসীকে সেই বার্তা দেওয়াই এখন দলের লক্ষ্য।”
স্থায়িত্বের প্রশ্নে কংগ্রেসের ধাঁচেই ভোটারদের বার্তা দিতে চাইছে বিজেপি-ও। দিল্লির পরিস্থিতির কথা তুলে মানুষকে তারা বোঝাতে চায়, আঞ্চলিক দল নয়, জাতীয় স্তরের কোনও দলই একমাত্র স্থায়ী সরকার দিতে পারে। আর সে ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি-মুদ্রাস্ফীতি ও দুর্নীতিতে ডুবে থাকা কংগ্রেসের একমাত্র বিকল্প বিজেপি-ই। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীকে উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরার পাশাপাশি এটাও তারা প্রচার করছে যে, মানুষের আশা জাগিয়েও দায়িত্ব নিতে ভয় পাচ্ছেন কেজরিওয়াল।
আপ অবশ্য বলছে তার উল্টোটাই। দিল্লিতে বড়সড় সাফল্যের পরে তারা এখন দেশের অন্যান্য প্রান্তে ছড়িয়ে পড়তে চায়। কলকাতায় নিজেদের অস্তিত্ব জানাতে রবিবার কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করে আপ। পশ্চিমবঙ্গে তাদের সংগঠন নেই। আছে ৭ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি। এ দিন জাতীয় পতাকা এবং ঝাড়ু নিয়ে কলকাতা, হাওড়া, রিষড়া, ব্যারাকপুর, বর্ধমান, আসানসোল, খড়্গপুর থেকে আসা শ’খানেক মানুষ মিছিলে যোগ দেন। এসএমএস-এ এই কর্মসূচির খবর পেয়েছিলেন তাঁরা। |
পুরনো খবর: কংগ্রেস-বিজেপির মুচলেকা চায় আপ, দিল্লি সেই দূর অস্ত্ |
|
|
|
|
|