|
|
|
|
বিকল্পের বিজ্ঞাপনে মডেল মানিকই
সন্দীপন চক্রবর্তী • আগরতলা |
নরেন্দ্র মোদীর গুজরাতের জবাবে মানিক সরকারের ত্রিপুরা। একেবারে ‘এম’ বনাম ‘এম’!
লোকসভা ভোটের পরে কেন্দ্রে কংগ্রেস এবং বিজেপির বাইরে তৃতীয় শক্তির সরকার তৈরি হবে কি না, এখনও ঠিক নেই। তেমন সরকার হলেও বামেরা তাতে যোগ দেবে কি না, তারও ঠিক নেই। কিন্তু শুধুই তাত্ত্বিক বক্তব্যে সীমাবদ্ধ না থেকে তৃতীয় শক্তির পালে হাওয়া জোটাতে এ বার উন্নয়ন এবং সুশাসনের ‘মডেল’ সামনে আনার সিদ্ধান্ত নিল সিপিএম। বিকল্প নীতি নিয়ে জনকল্যাণমুখী সরকারের নমুনা কেমন হতে পারে, তার জন্যই এক মাত্র বাম-শাসিত রাজ্য ত্রিপুরার দৃষ্টান্তকে গোটা দেশে প্রচারে ব্যবহার করতে চাইছে তারা। |
|
মঞ্চে সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট, মানিক সরকার।
রয়েছেন সিপিএমের অন্য নেতারাও। রবিবার আগরতলায়। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী। |
বিজেপি যে ভাবে তাদের সুশাসনের প্রতিশ্রুতিকে জনতার কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে গুজরাত মডেল ব্যবহার করা শুরু করেছিল, অনেকটা সেই কায়দাতেই ত্রিপুরা মডেলকে সামনে রাখতে চাইছে সিপিএম। বিজেপির মোদী অবশ্য দলের ঘোষিত প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। মানিকবাবু একেবারেই তা নন। তবে রবিবার আগরতলার বিবেকানন্দ ময়দানে গোটা পলিটব্যুরোকে সঙ্গে নিয়ে এবং দলের আরও দুই ঘাঁটি কেরল ও বাংলার রাজ্য নেতৃত্বকে ত্রিপুরার পাশে দাঁড় করিয়ে প্রকাশ কারাট-সীতারাম ইয়েচুরিরা যে বার্তা দিয়েছেন, তাতে স্পষ্ট, আসন্ন লোকসভা ভোটে প্রচারের দায়িত্ব বাড়বে মানিকবাবুর। এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এই বার্তা থেকেই সিপিএমের একাংশ ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, লোকসভা ভোটে ভাল ফল করে সত্যি সত্যিই তৃতীয় শক্তির সরকার গড়ার মতো পরিস্থিতি হলে, তাতে যোগ দেওয়ার পক্ষেই পাল্লা ভারী থাকবে দলে। ১৯৯৬ সালের পুনরাবৃত্তি না-হওয়ার কথাই বলবে দলের বড় অংশ।
কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শেষে দলের পলিটব্যুরোর সদস্যেরা এ দিন পালা করে ত্রিপুরায় মানিক-রাজের ধরন-ধারন গোটা দেশে প্রচার করার দাবি তুলেছেন। কেরলের রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়ন যা বলেন, সেই সুরেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর মন্তব্য, “কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, কচ্ছ থেকে কোহিমা গোটা দেশের মানুষকে জানতে হবে ত্রিপুরার কথা।” বৃন্দা কারাট (দলের অন্দরে চর্চা চলছে, ত্রিপুরা থেকেই লোকসভায় যাওয়ার বাসনা রয়েছে তাঁর) বলেন, “ভারতে সুসম বিকাশের কোনও মডেল থাকলে সেটা ত্রিপুরাই!” সীতারাম ইয়েচুরি স্পষ্ট বুঝিয়েছেন, ত্রিপুরা মডেলকে গুরুত্ব দিতে চাওয়াই আগরতলায় এই প্রথম দলের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হওয়ার নেপথ্য বার্তা। ইয়েচুরির কথায়, “নমো-রাগা (নরেন্দ্র মোদী ও রাহুল গাঁধী) এই বেসুরো রাগে দেশের রাজনীতির সুর বেঁধে রাখার চেষ্টা চলছে! কিন্তু ত্রিপুরার বিকল্পই আসল বিকল্প। গোটা দেশে আমরা এই বিকল্পই চাই। তার জন্যই আগরতলায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক।”
বৃন্দা-ইয়েচুরিরা ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সাক্ষরতা প্রসার, জঙ্গলের আদি বাসিন্দা উপজাতিদের হাতে অরণ্যের অধিকার, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, উৎপাদনশীলতায় জোর এ সব মাপকাঠিতেই এগিয়েছে ত্রিপুরা। বিমানবাবু বলেন উপজাতিদের সঙ্গে বাকি জনগোষ্ঠীর সংহতির কথা। ইয়েচুরির কথায়, “এই ছোট্ট রাজ্য সাক্ষরতায় পয়লা। বিকল্প অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়েই ২০১৪-য় বিকল্পের লড়াইয়ে ত্রিপুরাকে নেতৃত্ব দিতে হবে!” সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক কারাটের আহ্বান, “পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলের সঙ্গে ত্রিপুরার শক্তি মিলিয়েই বিকল্পের চেহারা বানাতে হবে। ত্রিপুরার কমিউনিস্ট পার্টি থেকে শিক্ষা নিয়েছি, ভবিষ্যতেও নেব।”
আর যাঁকে ঘিরে সিপিএমের এত আশা, তিনি কী বলছেন? মানিকবাবু জানেন, নিজের রাজ্যে মাত্র দু’টি লোকসভা আসন নিয়ে প্রকৃত অর্থে জাতীয় রাজনীতিতে ছড়ি ঘোরানো সম্ভব নয়। তাই তিনিও জোর দিচ্ছেন বিকল্প নীতির উপরেই। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “নিজেদের ঢাক নিজে পেটাতে চাই না! সবাই বলছেন ত্রিপুরার কথা। ত্রিপুরা ছোট্ট হলেও স্রোতের বিরুদ্ধে নৌকা চালিয়ে মানুষের জন্য কাজ করার বিনম্র চেষ্টাটুকু করেছি। তবে সব মানুষের সব সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি, এটা বললে দুর্বিনীতের মতো কথা হবে!”
একই সঙ্গে মানিকবাবুর সতর্ক-বাণী, “কেন্দ্রীয় কমিটিতে কথা হয়েছে, পরিস্থিতি সহায়ক হলেও এমনি এমনি বিকল্প নীতি হবে না। দিল্লিতে বসে কিছু দল বৈঠক করলেই বিকল্প সরকার ক্ষমতায় চলে আসবে না! কোনও বামফ্রন্ট সরকারই মাটি ফুঁড়ে ওঠেনি, আকাশ থেকেও পড়েনি!” পরিশ্রম করা, গণ-আন্দোলনের পথে থাকার দাওয়াই-ই দিয়েছেন মানিকবাবু। স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে ফের বলেছেন বাম বৃত্তের বাইরে থাকা সব মানুষের কাছে পৌঁছনোর কথাও। আর দলের অন্দরে কথা দিয়েছেন, কয়েক মাসের মধ্যে হিন্দিটা সড়গড় করে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। অনেক জায়গায় চষে বেড়ানোর সময় আসছে যে!
|
পুরনো খবর: সি পি এম-কে ধাঁধায় ফেলছে বেহাল কংগ্রেস |
|
|
|
|
|