|
|
|
|
সি পি এম-কে ধাঁধায় ফেলছে বেহাল কংগ্রেস
সন্দীপন চক্রবর্তী • আগরতলা
|
কংগ্রেস নিয়ে ভাবনা আর পিছু ছাড়ছে না সিপিএমের!
কংগ্রেসের প্রতি দলের মনোভাব নরম হবে, না কঠোর এই চেনা বিতর্ক আপাতত ধামাচাপা পড়ল সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। অ-কংগ্রেস এবং অ-বিজেপি, ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে একজোট করে তৃতীয় বিকল্প গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই বলল সিপিএমের শীর্ষ কমিটিও। কিন্তু একই সঙ্গে দেখা দিল নতুন ধাঁধা! দুর্বল কংগ্রেস কি সিপিএমের জন্য বর না শাপ? নাকি একই সঙ্গে দু’টোই?
দলের অন্দরে এই প্রশ্ন মাথাচাড়া দেওয়ার কারণ চার রাজ্যের সাম্প্রতিক বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের ফল। জনমত যে এখন কংগ্রেসের বিপক্ষে, চার রাজ্যের ভোট থেকে সেই বার্তা পড়ে নিতে পেরেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। এই প্রশ্নে আলিমুদ্দিনের সঙ্গে দিল্লির এ কে জি ভবনের বিরোধ নেই। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। লোকসভা ভোটেও কংগ্রেস-বিরোধী হাওয়া বজায় থাকলে কেরল থেকে সিপিএমের পক্ষে বেশি আসন বার করার সম্ভাবনা বাড়বে। যা আখেরে লোকসভা ভোটের পরে জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে খুব জরুরি। আবার কংগ্রেস তার নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক হারিয়ে ফেললে পশ্চিমবঙ্গে সেই সিপিএমেরই শিরঃপীড়া বাড়বে! কারণ, বাংলায় কংগ্রেসের সংগঠন ইতিমধ্যেই অনেকটা ভেঙেছে তৃণমূল। এর পর কংগ্রেস রাজ্যে তার ১০-১২% গড় ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে না-পারলে ফায়দা পাবে তৃণমূলই।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট শনিবার বলেন, “চার রাজ্যের ভোটে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জনমত স্পষ্ট। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি-সহ বেশ কিছু বিষয়ে ইউপিএ সরকারের ব্যর্থতার জন্য মানুষের মধ্যে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রোষ বাড়ছে। অনেক জায়গায় এই মনোভাবের ফায়দা তুলছে বিজেপি। তবে কংগ্রেস-বিরোধী হাওয়ার মধ্যেও গ্রহণযোগ্য বিকল্প থাকলে মানুষ যে তা সমর্থন করতে পারেন, দিল্লিতেই তার প্রমাণ মিলেছে।” কারাট একই সঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০০৪ ও ২০০৯-এর লোকসভায় রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় ও দিল্লির ৭২টি আসনের সিংহভাগ পেলেও কেন্দ্রে সরকার হয়নি বিজেপির। সুতরাং, চার রাজ্যের ভোটে বিজেপি-র সাফল্য মানেই সারা দেশে একই জিনিস ঘটবে, এমন ধরে নেওয়া যায় না।
কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত, কংগ্রেসের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে প্রচার চলবে। পাশাপাশি, মোদীকে সামনে এনে বিজেপি যে সাম্প্রদায়িকতার ‘বাড়তি বিপদ’ হাজির করেছে, তার বিরুদ্ধে কর্মসূচির তীব্রতা বাড়াতে হবে। সাম্প্রদায়িকতার ‘বাড়তি বিপদ’ মনে রেখেই কি তেমন পরিস্থিতি হলে বিজেপিকে ঠেকাতে সিপিএম কংগ্রেসকে সমর্থন করার কথা ফের বিবেচনা করতে পারে? কারাটের জবাব, “মনে হয় না, কংগ্রেস আমাদের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়ার জায়গায় থাকবে!”
তবে মজার হল, কংগ্রেস-প্রশ্নে সিপিএমের অন্দরের বিতর্ক আপাতত কার্পেটের তলায় চালান করে দেওয়ার চেষ্টার মধ্যেই অন্য বিড়ম্বনা কারাটদের ভাবিয়ে তুলছে! বাংলা সিপিএমের নেতারা দলের অন্দরে কবুল করছেন, কংগ্রেস পুরোপুরি শক্তিহীন হয়ে পড়লে বাংলায় রাজনৈতিক ভারসাম্য একপেশে হয়ে পড়তে পারে।
ঘটনাচক্রে, কংগ্রেসের বিপদে সিপিএমেরও বিপদ হওয়ার দৃষ্টান্ত এ বারই কেন্দ্রীয় কমিটিতে উঠে এসেছে রাজস্থানের রিপোর্টে। দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে ওই রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হান্নান মোল্লার কথায়, “কয়েকটা আসনে আমরা অন্য বারের চেয়ে বিশেষ কম ভোট পাইনি। কিন্তু কংগ্রেসের প্রায় পুরো ভোটটা বিজেপি-র দিকে চলে যাওয়ায় ওদেরই পাল্লা ভারী হয়ে গিয়েছে।”
বেহাল কংগ্রেস বাংলাতেও বামেদের হাল কি আরও খারাপ করবে, সিপিএমে এখন প্রশ্ন এটাই! |
পুরনো খবর: কাঁচা নন, এমন নবীন মুখ চায় সিপিএম |
|
|
|
|
|