মহাজোটের ময়দানে অধরা সচিন-ম্যাজিক

১৪ ডিসেম্বর
বরটা দিলেন ডেরেক ও’ ব্রায়েন “আজ দিল্লিতে একটা মহাজোট হয়েছে, জানেন তো?”
তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্যুইজমাস্টার। কথার খেলায় তিনি পটু, জানা কথা। আবার লোকসভা ভোটের আগে সংসদ ভবনের অলিগলিতে জোটের বহু চোরাস্রোত বইছে, এ-ও জানা কথা। তা বলে একেবারে মহাজোট! খোলসা করলেন সহাস্য ডেরেকই। এই জোটে হাত, পদ্মফুল, ঘাসফুল, সাইকেল, হাতি সব একাকার (তবে বামেদের কেউ ছিলেন না)। সব রং মুছে গিয়ে আজ সবার জার্সির রং সাদা।
রাজনীতি মুলতুবি থাক, আজ ক্রিকেটের দিন! সাংসদ একাদশ বনাম সাংবাদিক একাদশ।
সাংবাদিক টিমের ওপেনার রাজদীপ সারদেশাই গত রাত থেকেই ‘ম্যাচ প্রিভিউ’ চালু করে দিয়েছিলেন টুইটারে। লিখেছিলেন, ‘ম্যাচের জন্য তৈরি হচ্ছি। সাংসদ টিমের ক্যাপ্টেন অনুরাগ ঠাকুর। বড় প্রশ্ন, সচিন তেন্ডুলকর খেলবেন কি? তা হলে আর আমাদের আর কোনও চান্স নেই!’
একে রাজদীপের টুইট, তার ওপর ডেরেকের ‘মহাজোট ঘোষণা’ প্রথম বল পড়ার আগেই ১৫ ওভারের ম্যাচ জমে আইসক্রিম। কিন্তু মথুরা রোডের বাইশ গজে যে আরও নাটক, আরও গভীর ভাবনার খোরাক অপেক্ষা করছিল, কে জানত!
ম্যাচের ফাঁকে সচিন পায়লট, ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং
অনুরাগ ঠাকুর। শনিবার নয়াদিল্লিতে। —নিজস্ব চিত্র।
সাংবাদিকরা প্রথমে ব্যাট করতে নামলেন। জাবদা গ্লাভস পরে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন কে? ডেরেক স্বয়ং। কিছুক্ষণের মধ্যেই দলের অধিনায়ক তথা বিসিসিআইয়ের যুগ্মসচিব অনুরাগের বলে এক সাংবাদিককে দুরন্ত স্টাম্পড করলেন ডেরেক। দেখামাত্র হাতে-গরম টুইট রাজদীপের, “এমপি-দের টিমের উইকেটকিপার দিব্যি স্টাম্পড করল তো! দিদি নির্ঘাত গর্বিত হবেন!” বিজেপি সাংসদ কমলেশ পাসওয়ানের বোলিং দেখেও দর্শকেরা দেদার হাততালি দিলেন। দিলীপ সারদেশাই-তনয়ের উইকেটটা তাঁরই ঝুলিতে গেল।
‘সাংবাদিকেরা ৬ উইকেটে ১৫১। সাংসদরা পারবেন টপকাতে?’ রাজদীপের টুইটের জবাব দিতেই যেন শুরু হল নাটকের দ্বিতীয় অঙ্ক। চড়া আস্কিং রেট তাড়া করতে জুটি বাঁধল কংগ্রেস ও বিজেপি। হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দুই দলের ক্রিকেটার সাংসদ মহম্মদ আজহারউদ্দিন ও কীর্তি আজাদ যে ভাবে দলকে লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যাওয়া শুরু করলেন, দেখে কে বলবে শীতকালীন অধিবেশনে বিরোধীদের হট্টগোলে সংসদ চলতেই পারছে না? মোদী, রাহুল, কেজরিওয়াল, লোকপাল, তেলঙ্গানা সব গুলিয়ে দিয়ে হায়দরাবাদির ব্যাটে তখন বিদ্যুৎচমক। ’৮৩-র বিশ্বজয়ী দলের সদস্য কীর্তির বয়স এখন ৫৪। মাঠে তাঁকে দেখে সে কথা বলে কার সাধ্য? বরং ব্যাট হাতে শাসক-বিরোধী দুই দলের দুই সাংসদের দাপট দেখে ফিল্ডাররা ফোড়ন কাটতে ছাড়লেন না রাজনীতির বিভেদ ভুলে প্রতিদ্বন্দ্বীরা একজোট হলে কিন্তু আখেরে দেশেরই লাভ! কেউ কেউ আক্ষেপ করলেন, “নভজ্যোৎ সিধু যদি খেলতেন, একেবারে জমে যেত! মাঠে তো বটেই, মাঠের বাইরেও মাতিয়ে রাখত তাঁর ‘সিধুইজম’।”
আজহার-কীর্তি জুটিটা অবশ্য রূপকথা হতে হতেও হল না। কীর্তির কীর্তি ২৪ বলে ৪২। আজহারের ৩১ বলে ৩৮। তাঁরা প্যাভিলিয়নে ফিরলে শেষমেশ সাংবাদিকদের কাছে ১৮ রানে হেরে গেলেন সাংসদেরা। রাজদীপ তখন লিখলেন, ‘এটাই যুগের ধর্ম।’ অবশ্য মনে লেগে রইল সাংসদ ক্যাপ্টেন অনুরাগের ২০ বলে ৩০ ।
দিল্লির কনকনে শীতে বার্ষিক ক্রিকেটের এই উত্তাপের নেপথ্যে অবশ্য শুধুই মজা বা অবসরযাপনের আনন্দ ছিল না। ‘কনস্টিটিউশন ক্লাব অব ইন্ডিয়া’ ও ‘গ্লোবাল হেল্থ স্ট্র্যাটেজিস’-এর উদ্যোগে এই ক্রিকেটযুদ্ধকে তুলে ধরা হল শিশুদের মারণরোগের বিরুদ্ধে সচেতনতার বার্তা দিতে। আজ সচেতনতার পোস্টারে ছয়লাপ ছিল সারা মাঠ। তাতে লেখা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ার মতো রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সঙ্কল্প। মাঠে এসেছিলেন মন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ, কপিল সিব্বল, রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি, প্রাক্তন ক্রিকেটার বিষেণ সিংহ বেদী, মদনলাল। আর ম্যাচ রেফারি? জাভাগল শ্রীনাথ!
খেলা দেখতে আসা দিল্লির স্কুলপড়ুয়ারা অবশ্য উসখুস করছিল রাজ্যসভার ‘বিশেষ’ সাংসদটির জন্য! “এসআরটি কখন আসবেন?” গোড়া থেকেই অধৈর্য হয়ে উঠেছিল অনেকে। তা সচিনের জন্য দিনটা ভাল গেল না। টুইটারে ডেরেকই তাঁর স্কোরটা জানিয়ে দিলেন একটু পরে।
‘সচিন ক্লিন বোল্ড, গোল্লা রানেই!’ এর পরে তাঁর সংযোজন, ‘হ্যাঁ, সচিন............. তবে তেন্ডুলকর নন, পায়লট!’


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.