|
|
|
|
কাঁচা নন, এমন নবীন মুখ চায় সিপিএম
সন্দীপন চক্রবর্তী • আগরতলা |
দীর্ঘদিন মাঠে নেমে রাজনীতি করছেন অথচ ভোট ময়দানে আনকোরা। লোকসভার লড়াইয়ে এমন মুখের উপরেই ভরসা করছে সিপিএম। পালাবদলের পরে রাজ্যে গত আড়াই বছরে যে ক’টি বিধানসভা ও লোকসভা উপনির্বাচন হয়েছে, তাতে পারত পক্ষে নতুন প্রার্থীই দিয়েছে সিপিএম। তাঁদের সিংহভাগই ভোট ময়দানে নতুন হলেও রাজনীতিতে নন। কয়েক মাস আগে হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে শ্রীদীপ ভট্টাচার্য ছাড়া এই নতুন প্রার্থীরা কেউই তেমন আঁচড়ও কাটতে পারেননি। তবু সিপিএমের বড় অংশের যুক্তি, রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বেশি পুরনো মুখকে ফের এগিয়ে দিয়ে পুরনো স্মৃতি বেশি টেনে না আনাই ভাল।
লোকসভা ভোটের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের যে রূপরেখা বেঁধে দিতে চাইছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, সেখানে যথাসম্ভব গুরুত্ব থাকছে নতুন মুখেই। আগরতলায় শুক্রবার পলিটব্যুরোর বৈঠকে ওই রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে, শনিবার ওই প্রস্তাব কেন্দ্রীয় কমিটিতে পেশ হবে। কিছু ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ মুখ রেখে ভারসাম্য রক্ষার সূত্র থাকছে। এ বারের কঠিন লোকসভা ভোট মূলত নয়া মুখের ভরসাতেই পেরোতে চাইছে সিপিএম।
নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদন করতে গিয়ে প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের কৌঁসুলি বলেন, তাঁর মক্কেল পূর্ব মেদিনীপুর থেকে ফের লোকসভায় প্রার্থী হবেন। পলিটব্যুরোর ইচ্ছা মর্যাদা পেলে কিন্তু লক্ষ্মণবাবুর মতো অনেকের আর প্রার্থী হয়ে ভোট ময়দানে নামা হচ্ছে না।
তবে দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, “সব ঢালাও নতুন মুখ হবে, এমনটা হয়তো সম্ভব নয়। কিন্তু নতুন মুখই সংখ্যায় যথাসম্ভব বেশি হবে।” প্রাথমিক রূপরেখায় মহিলা ও সংখ্যালঘু প্রার্থীদের জায়গা দেওয়ার কথাও থাকছে। সিপিএমের একটি সূত্রের ইঙ্গিত, লোকসভার আগেই আগামী মার্চ-এপ্রিলে রাজ্যসভার ভোটে সূত্র মেনে চলার প্রস্তুতি নিচ্ছে আলিমুদ্দিন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিপিএমের শ্যামল চক্রবর্তী, প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়, তারিণী রায় ও ফরওয়ার্ড ব্লকের বরুণ মুখোপাধ্যায়ের সাংসদ-পদের মেয়াদ ফুরোবে আগামী বছর। রাজ্য বিধানসভার এখনকার বিন্যাস অনুযায়ী, এর মধ্যে একটি আসন জিততে পারবে বামেরা। সিপিএমের বঙ্গ ব্রিগেড চাইছে, আগামী ৬ বছরের কথা মাথায় রেখে ওই একটি মাত্র নিশ্চিত আসনে তরুণ কাউকে আনা হোক। সেই মতো মানসিক প্রস্তুতিও নিতে বলা হচ্ছে পুরনো সাংসদদের।
হাওড়ায় হারলেও শ্রীদীপবাবুর দৃষ্টান্ত মাথায় রেখে নতুন মুখের সূত্রের মধ্যেই একটি কৌশল পুরে দেওয়ার ভাবনা রয়েছে সিপিএমের। দলের এক সদস্যের কথায়, “লোকসভা ভোটে নতুন মুখ মানেই সবাই যে রাজনীতিতে একেবারে আনকোরা হবেন, তার কোনও বাঁধা ছক নেই।” অর্থাৎ লোকসভা ভোটের ময়দানে নতুন হলে রাজনীতিতে অভিজ্ঞদের ব্যবহার করার কথাও ভাবা হচ্ছে। এই কৌশল শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হলে ভাবমূর্তি নিয়ে সমস্যা নেই, রাজ্যের এমন কয়েক জন প্রাক্তন মন্ত্রীকে লোকসভায় নতুন প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে। সিপিএম নেতৃত্বের কাছে এখন চ্যালেঞ্জ, ফের প্রার্থী-পদ প্রত্যাশী কিছু পুরনো মুখকে নিরস্ত করা!
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পলিটব্যুরোর রিপোর্টে উঠেছে, কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে। চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলেই তা স্পষ্ট। এই অবস্থায় কেরল সিপিএমের বিশ্বাস, সেখানে কংগ্রেসকে হারিয়ে তারা কিছু আসন জিতবে। আর এখানেই বিড়ম্বনা বাড়ছে বঙ্গ ব্রিগেডের। কারণ, এ রাজ্যে এখন কংগ্রেস-বিরোধিতার দাবিদার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস-বিরোধিতার মাত্রা বজায় রেখেই তৃণমূলকে বিজেপি-র দিকে ঠেলে দিয়ে প্রচার চালানোর কৌশল তাই কতটা কার্যকরী হবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এ দিন কিছু হাল্কা মুহূর্ত এসেছিল ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর আবাসনে। তাঁর রাজ্যে এই প্রথম পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হচ্ছে। এই অবসরে পলিটব্যুরোর সতীর্থদের বাড়িতে মধ্যাহ্ন ভোজে নিয়ে যান মানিকবাবু। পলিটব্যুরোর বৈঠক শেষ ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শুরুর আসরে ছিলেন না আগরতলায় অনুপস্থিত তিন পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, নিরুপম সেন এবং বি রাঘভুলু (পরে পৌঁছেছেন শহরে)।
|
পুরনো খবর: আপ থেকে শিক্ষা নিতে চাইছে সিপিএম |
|
|
|
|
|