জুয়ায় হেরে নাবালিকা মেয়েকে বাজি ধরলেন বাবা
জুয়ার আসরে হেরে টাকা দিতে না পেরে এক ব্যক্তি তাঁর নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছেন প্রতিপক্ষের সঙ্গে। যদিও পাত্রের বয়স মেয়েটির দ্বিগুণ। এই অভিযোগ উঠেছে হবিবপুর থানার ঋষিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণপুর- বুড়িতলা গ্রামে। বিয়ের আগে ‘আশীর্বাদ’ অনুষ্ঠানে গ্রামের মানুষ নিমন্ত্রণও খেয়েছেন। পাকা হয়ে গিয়েছে বিয়ের দিন। ঘটনার পর থেকে অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রী স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসীরা প্রকাশ্যেই আলোচনা করছেন। ঋষিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রধান পরিতোষ মণ্ডল বলেন, “জুয়ায় হেরে গিয়ে মেয়ের বিয়ে দিতে চাওয়ার বিষয়টি গ্রামবাসীদের কাছ থেকে শুনেছি।” প্রতিবাদ করেননি কেন? তাঁর উত্তর, “স্থানীয় বাসিন্দারা যদি কেউ এ ব্যাপারে প্রতিবাদ না করেন তবে আমি কী করব?”
ওই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য সমাজবাদী পার্টির নেত্রী পুতুল মণ্ডল। তিনি আশীর্বাদের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত হয়ে খেয়েও এসেছেন। তিনি জানালেন, “জুয়ায় ৮৫-৯০ হাজার টাকা হেরেছিলেন আমার গ্রামের এক বাসিন্দা। টাকা দিতে না পেরে তিনি নিজের মেয়েকে প্রতিবেশী জুয়াড়ি সুকুমার মণ্ডলের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হয়েছেন।” তিনি জানান, গত শুক্রবার মেয়ের বাড়ির লোকেরা আংটি দিয়ে আশীর্বাদ করেছে ছেলেকে, ছেলের বাড়ির লোকেরা সোনার নথ দিয়ে সোমবার মেয়েকে আশীর্বাদ করে গিয়েছে। বিয়ের দিন স্থির হয়েছে ৬ মাঘ। আশীর্বাদের দিন গ্রামের ৭০-৮০ জন হাজির ছিলেন, জানান পুতুলদেবী। তিনি কেন পুলিশে অভিযোগ জানাননি? পুতুলদেবী বলেন, “গ্রামের কেউ আপত্তি না করলে আমি কেন প্রতিবাদ করে লোকের কাছে খারাপ হতে যাব?”
আপত্তি অবশ্য করছেন একজন। তিনি ঋষিপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ নন্দী। তিনি এ দিন বলেন, “মেয়েটি আমার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। এখনও ১৩ বছর বয়স হয়নি। আজকে স্কুলে এসে জানতে পারলাম, জুয়ার আসরে হেরে ওর বাবা ওকে এক জুয়াড়ির সঙ্গে বিয়ে দিচ্ছেন। যে দিন থেকে বিয়ে ঠিক হয়েছে, সেই দিন থেকে ওই মেয়েটি স্কুলে আসছে না।”
রাজ্যের নারী ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র মালদহেরই বিধায়ক। তিনি বলেন, “এ তো মধ্যযুগীয় ঘটনা।” ঘটনা সত্য হলে মেয়েটির বাবা এবং যে ব্যক্তি বিয়ে করতে চেয়েছে, দু’জনের বিরুদ্ধেই পুলিশি ব্যবস্থার চাইবেন তিনি। জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় জানান, অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হবিবপুর ব্লকের বিডিও অর্ণব রায় জানান, অভিযোগ কানে আসায় গ্রামবাসীদের থেকে খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি জেনেছেন। “নাবালিকা মেয়ের বাবাকে শুক্রবার ব্লকে ডেকে পাঠানো হয়েছে,” বলেন তিনি।
গ্রামবাসীরা জানান, জুয়ার ঘটনাটি ঘটে ১ ডিসেম্বর। সে দিন প্রথম কয়েক বার প্রতিবেশী যুবক সুকুমার মণ্ডলের বিরুদ্ধে মেয়েটির বাবা জিতলেও, পরে হারতে শুরু করেন। এক সময়ে নিজের মেয়ের সঙ্গে সুকুমারের বিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি। তারপরেও হেরে যান। এর পরে দুই তরফ থেকেই বিয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এ দিন সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে দেখে মেয়ের বাবা এবং সুকুমার মণ্ডল, দু’জনেই বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান। মেয়েটির কাকা অবশ্য স্পষ্টই বলেন, “জুয়ার আসরে হেরে গিয়ে আমার ভাইঝির যে বিয়ে হচ্ছে, এটা গ্রামের সবাই জানে। লুকিয়ে কী হবে?” মেয়ের বাড়ি থেকে ২০০ মিটার দূরেই সুকুমার মণ্ডলের বাড়ি। সুকুমারের মা মল্লিকা মণ্ডল বলেন, “ছেলে জুয়ার আসরে মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হল। আমরাও বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেলাম। কোনও উপায় ছিল না।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.