এক সোনার দোকানের মালিক ও তাঁর বন্ধুকে খুনের তদন্তে গিয়ে জনতার রোষের মুখে পড়ল পুলিশ। কোচবিহারের মাথাভাঙার ঘোকসাডাঙা পুঁটিমারি এলাকার বাসিন্দাদের দাবি ছিল, তদন্তের জন্য পুলিশ যে প্রশিক্ষিত কুকুরটি নিয়ে গিয়েছিল, তা ভাল নয়। আরও ‘ভাল কুকুর’ এনে খুনিদের অবিলম্বে চিহ্নিত করার দাবিতে প্রায় দুপুর পর্যন্ত পুলিশকে ঘিরে রাখে জনতা। পুলিশ লাঠি চালিয়ে জনতাকে সরাতে গেলে সংঘর্ষ শুরু হয়। বৃষ্টির মতো ইট-পাথর পড়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর হয়। যে গাড়িতে দেহ দু’টি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তা উল্টে দেয় জনতা। পুলিশ সুপারের গাড়িতেও ঢিল পড়ে।
পুলিশ যাতে দেহ দু’টি নিয়ে যেতে না পারে, সে জন্য গ্রাম থেকে বাইরে যাওয়ার রাস্তাও কেটে দেয় জনতা। একটি সেতুতে টায়ার ফেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। রাজ্য পুলিশের সদর দফতরেও খবর পৌঁছয়, পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল সহকর্মীদের সঙ্গে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। রাজ্য পুলিশের আইজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা বিশাল পুলিশ বাহিনী পাঠান। বেলা ৩টে নাগাদ পুলিশ লাঠি চালিয়ে জনতাকে হটিয়ে দেয়। পুলিশের উপরে হামলা, ভাঙচুর, অবরোধের অভিযোগে ৪ মহিলা সহ ৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের অধিকাংশই এলাকায় সিপিএমের কর্মী-সমর্থক বলে পরিচিত। ঘটনাচক্রে, এই এলাকাটি যে লতাপাতা গ্রাম পঞ্চায়েতের আওতায় রয়েছে, তা-ও সিপিএমের দখলে। |
স্রেফ ‘কুকুর খারাপ’ এই অভিযোগে পুলিশকে যে ভাবে ঘেরাও করা হয়েছে, তাতে প্ররোচনা দিয়ে বড় মাপের গোলমালের ছক কষা হয়েছিল বলে সন্দেহ পুলিশের একাংশের। পুলিশ সুপার অনুপবাবু বলেন, “তখন সবে তদন্ত শুরু হয়েছে। কুকুরও আনা হয়েছে। তখনই ‘কুকুর খারাপ’ বলে যে ভাবে হইচই, হামলা হয় তা দেখে অনেক সন্দেহও হচ্ছে। রাস্তা কাটার পরে সেই সন্দেহ দৃঢ় হয়েছে। ধৃতদের জেরা করলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।” পুলিশ সুপারের দাবি, “শীঘ্রই খুনের ঘটনার কিনারাও করা যাবে।”
নিহত দুই যুবকের নাম বাবলু রায় (৩৫) ও অমৃত মণ্ডল (৩৭)। বাবলুর এলাকায় সোনার দোকান রয়েছে। অমৃত চাষাবাদ করতেন। লাফাবাড়ি এলাকায় পাশাপাশি বাড়ি দু’জনের। বুধবার তাঁরা ফালাকাটা গিয়েছিলেন। রাতে বাড়ি ফেরেননি। এদিন সকালে পুঁটিমারিতে তোর্সা সেতু লাগোয়া এলাকায় তাঁদের দেহ উদ্ধার হয়। এরপরেই এলাকায় উত্তেজনা বাড়ে। পুলিশ দেহ আনতে গেলে বিক্ষোভ শুরু হয়। তখনই ‘কে খুন করেছে, সেই সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে হবে’ বলে দাবি করে জনতা। পুলিশ কর্তারা জেলা সদরে খবর দেন। পুলিশ সুপার যান। সে সময়েই ‘ভাল কুকুর’ আনার দাবি জোরালো হয়। শুরু হয়ে যায় সংঘর্ষও। হামলার সময়ে মহিলাদেরই সামনের সারিতে দেখা গিয়েছে। একজন মহিলাকে পুলিশ সুপারের গাড়ি ভাঙার চেষ্টা করতে দেখা যায়।
শাসক দলের অভিযোগের তির সিপিএমের দিকে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের অভিযোগ, “সিপিএমের লোকেরাই পরিকল্পিত ভাবে স্থানীয় বাসিন্দাদের উস্কে গোলমাল করেছেন। যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁরা প্রায় সকলেই সিপিএম সমর্থক।” সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অনন্ত রায় অবশ্য পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। প্রাক্তন বনমন্ত্রীর দাবি, “নিহত ব্যবসায়ী আমাদের সমর্থক ছিলেন। আগেও এলাকায় একটি খুনের ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে পারেনি। তাই এদিন দলমত নির্বিশেষে জনরোষ তৈরি হয়। আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে।”
একে এলাকার দু’জন খুন হয়েছেন। তার উপরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে ৩৩ জন গ্রেফতার হওয়ায় গ্রাম এখন থমথমে। নিহত বাবলুবাবুর কাকা রবিবাবু বলেন, “আমার ভাইপোর তেমন কেউ শত্রু ছিল না। কেন খুন হল বুঝতে পারছি না। পুলিশ তদন্ত করে কড়া ব্যবস্থা নিক।” |